হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৯

হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৮ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

এটুকু বলার পরই তাঁর জিভ কেটে নেয়া হল। তখন দিনের ফিরিয়ে এল। এল সন্ধ্যা। এবার খলীফার নির্দেশঃ দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হোক। এ আদেশ পালনে ঘতকেরা প্রস্তুত। হঠাৎ মানসুর (রঃ) স-শব্দে হেসে উঠলেন। কিন্তু জনতার মধ্যে জেগে উঠল কান্নায় রোল। আর সেই হাঁসি কান্নায় মধ্যেই তাঁর শিরচ্ছেদ করা হল। আর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রতিটি অঙ্গ উচ্চারণ করতে শুরু করল আনাল হক। তখন সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে টুকরো টুকরো করা হল। বাকী রইল শুধু গলা আর পিঠ। কিন্তু তাঁর খণ্ডিত অঙ্গ থেকেও নিনাদিত হল আনাল হক আনাল হক। শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু মাটিতে পড়ে আনাল হক বলতে শুরু করল। আর এমনিভাবে রাত কেটে গেল। দ্বিতীয় দিন সবাই স-বিস্ময়ে দেখল, আগে শুধু এক মুখে আনাক হক উচ্চারিত হচ্ছিল। এখন তা শতমুখে উচ্চারিত হচ্ছে। খলীফার লোকজন এবার হতবুদ্ধি হয়ে গেল। তারা তাঁর খণ্ডিত দেহাংশগুলি আগুনে পুড়ে ছাই করে ফেলল। কিন্তু তাতে বিপদ বেড়ে গেল সহস্র গুণ। প্রতিটি ভস্মকণা থেকে শব্দ উঠতে থাকল আনাল হক, আনাল হক।

বেগতিক বুঝে খলীফা নির্দেশ দিলেন, তাঁর দেহ-ভস্ম দজলা নদীতে ফেলে দেয়া হোক। কিংকর্তব্যবিমূঢ় প্রশাসন কর্মীরা তাই করল। কিন্তু তার ফল হল আরও মারাত্মক। হঠাৎ দজলা নদী ফুঁসে উঠল বিপুল জলোচ্ছ্বাসে। আর উৎক্ষিপ্ত তরঙ্গ আনাল হক বলতে বলতে প্রচণ্ড বেগে আছড়ে পড়ল নদী-তটে। জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হল। হয়ত ক্রুদ্ধ নদী বাগদাদ মহানগরী গ্রাস করে ফেলবে। সবাই তখন দিশেহারা।

হযরত মানসুর হাল্লাজ (রঃ) ঐ ক্ষমতাবলে ভবিষ্যতের কথা জেনে নিয়েছিলেন। তাই তিনি তার এক শিষ্যকে বলে যান, তার দেহ ভস্ম দজলা বক্ষে নিপতিত হলে তা ভীষণ আকার ধারণ করবে। তখন তিনি যেন তাঁর খিরকাটি নদীকে দেখিয়ে দেন। তাহলে সে শান্ত হয়ে যাবে। হঠাৎ কথাটি মনে পড়ল ঐ শিষ্যের। তিনি তাড়াতাড়ি তাঁর খিরকাটি নিয়ে নদীর সামনে ধরলেন। আর সঙ্গে সঙ্গে নদী শান্ত হয়ে গেল। নিক্ষিপ্ত ভস্ম এসে জমা হল নদী-তীরে। আর তা তুলে নিয়ে লোকেরা কবর খুঁড়ে তাতে দাফন করল। ভয়ংকর এক বিপর্যয় থেকে দেশ ও জাতি রক্ষা পেল। অন্য কোন তাপসের মৃত্যুর পর মানুষ এমন বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করেনি।

একজন বিখ্যাত জ্ঞানী বলেন, যখনই হযরত মানসুর হাল্লাজ (রঃ)-এর প্রতি অমানবিক আচরণের মর্মান্তিক দৃশ্যটি মানস পটে ভেসে ওঠে, তখন আপনা থেকে আমার মনে একটি প্রশ্নের উদয় হয় যে, তাঁর সাথে এরূপ ব্যবহার করা হল কেন? আর এ প্রশ্নও মনের মধ্যে নিয়ত ঘুরপাক খায়, যারা তাঁর প্রতি এ ধরনের নিষ্ঠুর আচরণ করল, রোজ কিয়ামতে তাঁদের অবস্থা কী দাঁড়াবে? হযরত আব্বাস তুসী (রঃ) বলেন, রোজ কিয়ামতে হাশরের মাঠে তাঁকে বেঁধে রাখা হবে, না হলে তাঁর দ্বারা এক তুমুল কাণ্ড সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ১০ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।