হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৬

হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, হযরত মানসুর (রঃ)-এর কথার অন্য অর্থ করা যায় কিনা। তিনি বললেন, আর সে চেষ্টা করো না। কেননা, সময় পার হয়ে গেছে। এখন আলেম সমাজ ও খোদ খলীফা তাঁর প্রতি বিরূপ হয়েছেন। তিনিও একবছর ধরে বন্দী। তাঁর অনুসারীরা তাঁর কাছে যাতায়াত করতেন। তিনি তাঁদের কথায় সন্তোষজনক জবাবও দিতেন। কিন্তু এখন লোকজনের যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কয়েকজন বিদগ্ধ পণ্ডিত তাঁর কাছে দু’জন লোককে এ কথা বলে পাঠান যে’ আনাল হল উচ্চারণ করে তিনি যে অপরাধ করেছেন তাঁর জন্য তওবা করলে তাঁকে মুক্তি দেয়া হবে। তিনি জবাব দিয়েছিলেন, তিনি তা পারবেন না। হযরত আতা (রঃ)ও তাঁর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁর প্রস্তাবও ছিল ঐরকম। কিন্তু তাঁকেও তিনি একই জবাব দিয়েছেন।

কথিত আছে, প্রথম রাতে তাঁকে বন্দী করা হলে তিনি অদৃশ্য হয়ে যান। দ্বিতীয় রাতে দেখা যায় তিনিও নেই, জেলখানাও নেই। তৃতীয় রাত্রে অবশ্য তাঁকে এবং জেলখানাকেও দেখা যায়। এ ঘটনা মর্ম জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, প্রথম রাতে আমি আল্লাহ্‌র দরবারে চলে গিয়েছিলাম। দ্বিতীয় রাতে খোদ আল্লাহ্‌ এখানে উপস্থিত ছিলেন। তৃতীয় রাত্রে জেলখানা ও আমি আবার হাজির হলাম। কেননা, শরীয়তের বিধান রক্ষার জন্য আল্লাহ্‌ আবার আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন তোমরা তোমাদের কর্তব্য পালন কর।

কথিত আছে, তিনি কারাগারে দৈনিক এক হাজার রাকাআত নফল নামায পড়তেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি যখন নিজেকে আল্লাহ্‌ বলে ঘোষণা করেছেন, তখন এ নামায কার উদ্দেশ্যে? তিনি উত্তর দেন, আমার সম্বন্ধে আমিই ভালো জানি।

শোনা যায়, কারাগারে তখন তিনশ কয়েদী ছিল। তিনি তাঁদের মুক্তি দিতে পারেন বলে ঘোষণা করেন। কিভাবে তা সম্ভব বলে তাঁকে প্রশ্ন করা হল। কেননা তিনি নিজেও একজন বন্দী। পারলে আগে তিনি নিজেকেই মুক্ত করুন না? হযরত মানসুর (রঃ) বলেন, আমি যে আল্লাহ্‌র বন্দী। আর শরীয়তেরও অনুসরণ করি। না হলে ইচ্ছা করলে চোখের ইশারায় সব শৃঙ্খল ছিন্ন করতে পারি। এই বলে আঙুলের ইশরা সত্যিই সব কয়েদীর শেকল ছিঁড়ে ফেললেন। কয়েদীরা বলল, আমরা এখন বেরোব কেমন করে? জেলের দরজা যে বন্ধ। তিনি তখন ইশরা করতেই দেয়ালে কয়েকটি জানালা তৈরি হয়ে গেল। কয়েদীদের বললেন, যাও, চলে যাও।

আপনি আসবেন না? তারা বলল।

তিনি বললেন, প্রভুর সঙ্গে আমার একটা গোপন ব্যাপার আছে। তার মীমাংসা হবে শূলে চড়ে। পরদিন প্রহরীরা দেখল, জেল শূন্য। একটিও কয়েদী নেই। তারা জিজ্ঞেস করল, কয়েদীরা কোথায়? তিনি বললেন, আমি সবাইকে ছেড়ে দিয়েছি।

তবে আপনি থেকে গেলেন কেন? তারা বলল।

আমার ওপর মালিকের খেদ রয়েছে। সে জন্য অপেক্ষা করছি।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৭ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।