হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ)- পর্ব ৪
হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ)- পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মক্কা মোয়াজ্জামায় গিয়ে এক ব্যক্তি হজ্জ না পেয়ে দারুণ মর্মাহত। হযরত সুফিয়ান (রঃ) বললেন, আমি চারবার হজ্জ করেছি। একটি শর্তের বিনিময়ে আমি ঐ চারটি হজ্জের পুণ্য তোমাকে দিতে পারি। শর্তটি হল, তুমি তোমার অনুশোচনামূলক আহা’ শব্দের পুণ্য আমাকে দিয়ে দেবে।
লোকটি তো পরম খুশী। সে রাজি হয়ে গেল। আর হযরত সুফিয়ান (রঃ)- ও খুশী মনে তাঁর চা হজ্জের পুণ্য তাঁকে দান করে আর আহা শব্দের পুন্য গ্রহণ করলেন। ঐ রাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন, এক শান্ত-সৌম্য জ্ঞানী ব্যক্তি তাঁকে বলেছেন, তুমি ঐ লোকটির কাছ থেকে যে পুন্য অর্জন করেছ, তা যদি আরাফাতে সমবেত সমস্ত হজ্জযাত্রীর মধ্যেও বণ্টন করে দাও, তবুও প্রত্যেকেই পূন্যের দিক দিয়ে ধনী হয়ে যাবে।
একদিন এক হাম্মামখানা থেকে তিনি এক অল্প বয়স্ক দাঁড়িগোঁফশূন্য কিশোরকে বে’র করে দিতে বললেন। এর কারণ হিসেবে বললেন, প্রত্যেক নারীর সঙ্গে একটা শয়তান থাকে। আর দাড়িবিহীন গোঁফশূন্য সুশ্রী বালকের সঙ্গে থাকে আঠারোটি। শয়তান মানুষের চোখে এদের সৌন্দর্য্য আরও বাড়িয়ে দেয়।
আর একদিন খাবার সময় একটি কুকুর এলে তিনি তৎক্ষণাৎ এক টুকরো ছুড়ে দেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি পরিবার-পরিজনদের নিয়ে ক্ষেতে বসেন না কেন?
তিনি উত্তর দেন, আপনজন হলেও তাঁরা আমার এবাদতে বিঘ্ন ঘটায়। অথচ এ কুকুরটি রাত্রে পাহারায় নিযুক্ত থেকে লোকজনদের বাঁধা দেয়। ফলে আমি নিরিবিলি এবাদত করতে পারি।
একবার হজ্জযাত্রার পাক্কালে তিনি বড় কান্নাকাটি করেন। লোকজন জিজ্ঞেস করেন, পাপের ভয়ে আপনি এমন করে কাদছেন কেন? তিনি বলেন না, পাপের ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত খুবই ব্যাপক ও শক্তিশালী। তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেন, মানুষ উপাদেয় খাবারের জন্য বড় আগ্রহী। কিন্তু কোন উপাদেয় বস্তু বিস্বাদ হতে কতক্ষণ? খাদ্যবস্তু কন্ঠানালীর শেষ পর্যন্ত থাকে, ততক্ষণই স্বাদ কিংবা বিস্বাদ। এর নিচে গেলে তো আর কিছুই থাকে না।
তাহলে এই ক্ষণস্থায়ী বস্তুর প্রতি এত মোহগ্রস্ত হয়ে কি লাভ! তিনি বলেন একমাত্র আল্লাহ আরেফকে মারেফাত দান করেন, আবেদনকে নৈকট্য দেন, হাকিমকে হেকমত দিয়ে থাকেন অন্য কেউ নয়। তিনি আরও বলেন, ক্রুন্দন দশ রকমের। তাঁর মধ্যে নয় প্রকার হল রিয়া। শুধু একটিই আল্লাহর ভয় মিশ্রিত। আল্লাহর ভয়ে নির্গত এক ফোঁটা অশ্রু সারা জীবনের ক্রন্দনের চেয়ে শ্রেয়। তিনি আরও বলেন, পূন্যবানদের পুণ্য কর্মগুলো ফেরেশতাগণ পুন্যের দপ্তরে লেখে রাখেন। কিন্তু পুণ্যবানরা যদি পুণ্য করে অহংকার প্রকাশ করেন তবে সেগুলো রিয়ার দপ্তরে লিখিত হয়।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া