হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ)- পর্ব ২

হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ)- পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

হযরত সুফিয়ান (রঃ) একবার তৎকালীন খলীফার পাশাপাশি নামাজ পড়ছিলেন। নামাযের মধ্যে দাঁড়িয়ে খলীফা হাত বুলালেন।  নামাজ শেষে হযরত সুফিয়ান (রঃ) তাঁকে বললেন, এটা ঠিক নয়। হাশরের মাঠে এ  ধরনের নামাযকে নাপাক গোলার আকারে নামাজীর মুখের উপর ছুড়ে মারা হবে।  

তাঁর কথা শুনে খলীফা দারুণ ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে শূলে চড়ানোর নির্দেশ দিলেন। এ নির্দেশ হযরত সুফিয়ান (রঃ) এর কানে গেলে তিনি বললেন, প্রাণের জন্য আমার কোন মায়া নেই।  তবে দ্বীনের রীতি-নীতির প্রতি আমার অন্তরে রয়েছে অফুরন্ত প্রেম। পরদিন তাঁকে শূলে চড়ানো হবে। তিনি সুফিয়ান ইবনে ওআইনায়ার (রঃ) দু’জানুর ওপর মাথা রেখে তাঁর প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে বলছিলেন, হে প্রভু! আমি আপনার ন্যায্য কথা বলেছি- যার জন্য খলীফা আমাকে প্রাণদণ্ড দিয়েছেন। আজ তা কার্যকর হবে। 

আপনার নিকট এ বিষয়ে বলার কিছু নেই। যেহেতু আপনি সব কিছুই প্রত্যক্ষ করছেন। ওদিকে খলীফা হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাঁকে দরবারে হাজির করার হুকুম দিলেন। খলীফার আদেশ পালন করা জন্য তাঁর অনুচরবর্গ যেই দরবার থেকে বের হয়েছেন, অমনি আল্লাহ পাকের গজবস্বরূপ দরবার কক্ষের ছাদ ধ্বসে পড়ল। আর পরিষদসহ খলীফা নিহত হলেন। এ ঘটনার পর কেউ বলেন, হুজুর! দোয়ার ফলাফল এত দ্রুত ও ভয়ঙ্কর ভাবে ফলতে কোথাও দেখিনি।  হযরত বললেন, হক কথা বলার জন্যই দোয়ার ফল এতটা তীব্র হয়েছে। 

খলীফা অপমৃত্যুর পর নতুন খলীফা নির্বাচিত হলেন। তিনি তাঁর পূর্বসূরির পরিণতি সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিফহাল ছিলেন। তাই সাধক সুফিয়ান (রঃ)- এর সঙ্গে কোনরূপ অশিষ্টাচরণ না করে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চললেন।  কিছু দিন পর দেখা  গেল, হযরত সুফিয়ান (রঃ) ব্যাধি গ্রস্ত হয়ে ক্রমশঃ ক্ষীণ হয়ে যেতে লাগল। তখন চিকিৎসার উদ্দেশ্যে খলীফা সরকারি চিকিৎসক নিযুক্ত করলেন। ঘটনা-ক্রমে ঐ চিকিৎসা ছিলেন উগ্নি উপসাক। তিনি নানাভাবে চিকিৎসা করে বুঝলেন যে, বাহ্যত তাঁর কোন রোগ ব্যাধি নেই। তাঁর মুত্র পরীক্ষা করে দেখলেন, অত্যাধিক আল্লাহ-ভীতির কারণেই কলজে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। আর তাই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা প্রসাবের সাথে নির্গত হচ্ছে। 

এ অবস্থা দেখে চিকিৎসকের মনে ভাবান্তর দেখা দেয়। ভাবতে থাকেন, যে ধর্মে এমন আল্লাহ-ভীরু লোক থাকেন, তা কখনই সত্য খাঁটি না হয়ে যায় না। তিনি তখন হযরত সুফিয়ান (রঃ) এর কাছে ইসলামের দীক্ষা গ্রহণ করেন। একথা শুনে খলীফা মন্তব্য করলেন, আমি চিকিৎসক পাঠালাম রোগীকে মুক্ত করার জন্য। এখন দেখছি তিনি গিয়েছিলেন তাঁর নিজের চিকিৎসার গরজে। আর তাঁর উদ্দেশ্যও সফল হয়েছেন। যৌবনেই তিনি কুঁজো হয়ে যান।  এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তাঁর এক জ্ঞানী শিক্ষাগুরু ছিলেন। তিনি একদিন দুঃখ করে তাঁকে বলেন, দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে মানুষকে তিনি সৎ পথ দেখিয়ে আসছেন। অথচ এখন তাঁরা পথ প্রদর্শনের যোগ্য নয় বলে তাঁকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। গুরুর মুখে এ কথা শুনে তাঁর দুঃখেই তাঁর পিট বেঁকে যায়।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ)- পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।