হযরত শায়েখ মুহাম্মদ আলী হাকীম তিরমিজি (রঃ) – পর্ব ১

হযরত শায়েখ মুহাম্মদ আলী হাকীম তিরমিজি (রঃ) একাধারে উচ্চস্তরের সাধক ও পণ্ডিত। তিনি সুচিকিৎসকও ছিলেন। ইতিহাস ও হাদিসশাস্ত্রে তাঁর ব্যুৎপত্তি ছিল অভিহিত হতেন। অত্যন্ত কোমল প্রকৃতির দয়ালু এই মানুষটির আচার-আচরণও ছিল বড় মধুর। হযরত আবু তুরাব (রঃ) হযরত খাইরুইয়া (রঃ), হযরত ইবনে জাল্লাহ (রঃ) প্রমুখ সাধকের সান্নিধ্যে থেকে তিনি তাঁর জ্ঞানের বিস্তার ঘটান। তাঁর জ্ঞানের পরিধি ও বিস্তৃতি ছিল অতি ব্যাপক। হযরত ইয়াহইয়া মায়ায (রঃ)-এর সঙ্গে বহুবার বহুবার বিভিন্ন বিষয়ে তিনি তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হন। আর তাঁকে পরাজিতও করেন। বস্তুত তিনি ছিলেন নির্জনতা প্রিয়।  

তিনি বাল্যকালে দুজন ছাত্রের সঙ্গে সফরে যাবার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু বৃদ্ধা জননীর করুণ কথায় তাঁর আর যাওয়া হল না। সঙ্গীরা চলে গেল। কয়েক মাস পরে মা মারা গেলেন। আর একদিন তিনি মায়ের কবরে গিয়ে কাঁদতে লাগলেন, আমার সঙ্গী দুটি আলেম হয়ে দেশে ফিরবে। আর আমি মুর্খ হয়ে পড়ে আছি। তাদের কাছে আমার কোন মূল্যই থাকবে না। তিনি এভাবে বিলাপ করছেন, তখন সেখানে হঠাৎ এক জ্যোতির্ময় পুরুষ আবির্ভূত হয়ে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। তিনি কারণটি জানালেন। তখন সেই জ্যোতির্ময় পুরুষ বললেন, তুমি যদি চাও তাহলে প্রতিদিন এখানে এসে তোমাকে বিদ্যা শিখিয়ে যাব। আর তুমি তোমার সঙ্গীদের চেয়েও ভাল বিদ্বান হবে। হযরত মুহাম্মদ আলী (রঃ) সানন্দে তাঁর ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করলেন।

শিক্ষা শুরু হল। আর তিন বছরের মধ্যেই তিনি বিদ্বান হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেন। পরে তিনি জানলেন, সেই জ্যোতির্ময় পুরুষ আর কেউ নন, স্বয়ং হযরত খাজা খিজির (আঃ) মায়ের খেদমত ও সন্তুষ্টি বিধানের কারণেই যে তিনি এ সৌভাগ্য লাভ করেছেন, তাও সুস্পষ্টরূপে বুঝতে পারলেন। হযরত আবু বকর ওয়াররাক (রঃ) বলেন, এরপরেও হযরত খাজা খিজির (রঃ) প্রতি শনিবার এসে তাঁর সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন। ফলে তাঁর জ্ঞানের পরিধি বহু বহু গুণ বৃদ্ধি পায়।

তিনি বলেন, রিপুকে আল্লাহর এবাদতে লাগাতে তিনি প্রচুর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তখন মনে নৈরাশ্য আসে। আর এ অবস্থায় তিনি জাইহুন নদীর তীরে উপস্থিত হন আত্মহত্যার জন্য। কেননা, হতাশাক্লিষ্ট অবস্থায় তাঁর মনে হয়, আল্লাহ তাঁকে জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। জাহান্নামীর বেঁচে থেকে কী লাভ! নদীর তীরে একটি লোককে দেখতে পেয়ে তিনি তাকে হাত-পা ভালো করে বেঁধে দেবার অনুরোধ করলেন। লোকটি তাঁর হাত-পা বেঁধে দিয়ে চলে গেল। আর ঐ অবস্থায় গড়াতে গড়াতে তিনি নদীতে গিয়ে পড়লেন। ডুবে মরার আর অসুবিধা নেই। কিন্তু নদীতে পড়ামাত্র তাঁর বাঁধন খুলে গেল। আর তরঙ্গের এক ধাক্কায় তিনি এসে পড়লেন তট-রেখায়।

আত্মহত্যা করা হল না। তখন তাঁর মধ্যে এমন এক গুপ্ত বিষয় প্রকাশিত হল বলার সাধ্য তাঁর নেই। তবে তিনি যা দেখলেন, তাতেই তিনি আত্মবিলুপ্তির স্তরে পৌঁছে গেলেন।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত শায়েখ মুহাম্মদ আলী হাকীম তিরমিজি (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।