হযরত শাহ গুজা কেরমানী (রঃ) – পর্ব ১
হযরত শাহ গুজা (রঃ) কেরমানের শাহী বংশের লোক ছিলেন। কিন্তু তিনি আধ্যাত্নিক মার্গের এক আলোকিত পুরুষ। হযরত আবু তুরাব (রঃ), হযরত ইহাহইয়া (রঃ) প্রমুখ বিখ্যাত তাপসের সান্নিধ্যলাভে তিনি ধন্য। তিনি ধর্মমূলক গ্রন্থের গ্রন্থকার। তাঁর প্রণীত মেরয়াতুল হুকামা গ্রন্থে তাঁর অসাধারণ প্রতিভার সুস্পষ্ট ছাপ আছে।
কেরমান থেকে তিনি যখন নিশাপুরে যান, তখন তাঁকে বিপুল সংবর্ধনা জানান হযরত আবু হাসফ (রঃ)। উন্নত মর্যাদার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি বলেন, যে বস্তু আমার জুব্বার মধ্যে খোঁজে করছিলাম, তা পেয়ে গেলাম কাবার (আমীরী জামার) মধ্যে।
হযরত শাহ গুজা (রঃ) একটানা চল্লিশ বছর বিনিদ্র ছিলেন। উপাসনায় কেটে যেত রাতের পর রাত। কোন দিন চোখের মধ্যে লবণ ছিটিয়ে দিতেন। কাজেই তাঁর দুচোখ লাল দেখাত। এভাবে চল্লিশ বছর পর একদিন কিছুক্ষণের জন্য তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। আর ঘুমের মধ্যেই আল্লাহকে স্বপ্নে দেখলেন।
স্বপ্নের মধ্যেই তিনি বলে ওঠলেন, প্রভু আমার, জাগ্রত অবস্থায় আপনাকে পাওয়ার জন্য কত চেষ্টা করলাম। আর আজ পেলাম ঘুমের ভেতর। তখন অদৃশ্য শব্দ শোনা গেল, এই দীদারই তোমার জাগ্রত অবস্থায় সাধনার বিনিময়। এরপর থেকে তিনি প্রতিদিনিই ঘুমাতে লাগলেন, যদি আল্লাহকে দ্বিতীয়বার স্বপ্নে দেখা যায়। ঐ স্বপ্ন তাঁর কাছে পরম গৌরবময়। তিনি বলতেন, এই স্বপ্নে বদলে তাঁকে যদি দুজাহানও দেওয়া হয়, তবুও তিনি তা গ্রহন করতে রাজি নন।
তাঁর এক পুত্র যখন জন্মগ্রহণ করেন, তখন সবুজ কালি দিয়ে তাঁর বুকে লেখা ছিল, আল্লাহ জাল্লা শানুহু। কিন্তু সে পুত্র যখন যুবক হলেন, তখন নানা ধরনের গান-বাজনা ও খেলাধুলায় নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়লেন। এক রাতে সেতার বাজিয়ে গান গাইতে গাইতে তিনি চলছেন ঘুমন্ত মহল্লার পথ ধরে। আর সে গানের সুরে সম্মোহিত হয়ে এক নববধু ওঠে আসে বিছানা ছেড়ে বারান্দায়। পরে তার স্বামীর ঘুম ভেঙে গেলে সেও বেরিয়ে এসে দেখতে পায়, সুরের মায়াজালে বন্দিনী বধূ অপলকে তরূণ শিল্পীকে দেহছে। সে তখন যুবককে বলল, তোমার কী তওবা করার এখনও সময় আসেনি? এই প্রশ্নটিও যেন সেতারের ঝংকারের মতো যুবকের মর্ম স্পর্শ করের। মনে সৃষ্টি হয় বিপুল ভাবান্তর। তাঁর বুক থেকে বেরিয়ে আসে পরিবর্তিত স্বর।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া