হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ৫
হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মামার পরীক্ষায় উত্তীর্ণঃ
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় হযরত শাহজালাল – এর বাল্যকাল থেকেই তাঁর চরিত্রের মাধুর্যতা ভিন্ন আভার ন্যায় প্রকাশ পেয়েছিল। অতি অল্প বয়সেই পূর্ণ আত্মা মানুষের যে সকল গুণ থাকা দরকার সে সব গুনের বিকাশ ঘটেছিল তাঁর মধ্যে। আর সে সকল গুনগরিমার দ্বারাই তিনি অলিত্বের শীর্ষ স্থান দখল করেছিলেন। বাল্যকাল থেকেই তাঁর চালচলন, আচার-ব্যবহার ছিল সাধারণ মানুষের থেকে ব্যতিক্রম। মাঝে মাঝে বালক শাহ জালালের বিচক্ষণতা দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারতেন না। তখন থেকেই তাঁর মামার বুঝতে বাকী রইল না। সে যাই হোক শাহজালাল (রঃ) – এর বয়স যখন বাড়তে লাগল তাঁর মামাও তাঁকে নানা পরীক্ষা করতে থাকে। এক সময় ভাগীনাকে একটি কঠোর পরীক্ষা করার মনস্থঃ করলেন কিন্তু পরিক্ষা করার কোন পন্থা পাচ্ছেন না। এমনই এক সময় একটা তাড়া খাওয়া পাগলা হরিনী এসে সৈয়দ আহম্মদ কবীরের সম্মুখে হাজির হল। বলল, হুজুর আমার একটা দুঃখের নালিশ করার কাওকে পেলাম না তাই আপনার দরবারে হাজির হলাম। দয়া করে আমার এই বিচারটি আপনি করবেন।
এবারে সকল প্রাণীর ভাষাবিদ সৈয়দ আহম্মদ হরিণীর কথা বুঝতে পেরে বললেন, রে – হরিণী এবারে তোমার ঘটনা খুলে বল। দুঃখিণী হরিনীটি চোখের পানি ফেলে বলতে লাগল, হুজুর আমার একটি মাত্র দুগ্ধ সন্তান সেটিকে একটি ক্ষুধার্ত বাঘে নিয়ে হত্যা করে খেয়ে ফেলেছে। এখন আপনি ইহার বিচার করেন।
সৈয়দ আহম্মদ কবির এবারে ভাগীনাকে পরিক্ষা করবার একটি পথ পেলেন। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে ভাগীনাকে ডাক দিয়ে বললেন, যাও তুমি গিয়ে এই বাঘটিকে খুজে বিচার করে এস। শাহ জালাল বললেন, বাঘটি ক্ষুধার্ত হয়েই’তো হরিণ ছানাটি খেয়েছে, এর আবার কি বিচার করা যায়। সে যাই হোক গুরুর আদেশ শিরোধার্য করে গভীর বনের দিকে ছুটে চললেন। গিয়ে অনেক সন্ধানের পর বাঘটির সন্ধান পেলেন। বাঘটি দেখে তাঁর কাছে আসার জন্য ইশারা করলেন। বাঘটি তার হিংস্রত্ব পরিহার করে তাঁর দিকে এগিয়ে আসল।
এদিকে তাঁর মামা ভাগীনাকে বিচার করতে পাঠিয়ে ভাবতে লাগলেন যে, বাঘটির কি বিচার করা যায়; বাঘতো অন্য প্রাণী শিকার করেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তবে বাঘটিকে একটি চপেটাঘাত করে এই বলে দিলেই হয় যে, যেন এভাবে কোন প্রাণীর দুগ্ধ ছানাকে আহার না করে।
হযরত শাহজালাল (রঃ) ছিলেন একজন অগাধ আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অধিকারী। তাই তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞানের মাধ্যমে তাঁর মামার মনোভাব জানতে পারলেন এবং সেই অনুসারে বাঘটিকে কাছে ডেকে ভীষণ এক চড় লাগিয়ে বললেন, যা দুষ্টু এভাবে আর কখনও কোন দুগ্ধ ছানাকে খাসনে যা বনে চলে যা। আর যেন তোদের বিরুদ্ধে কোন নালিশ না আসে।
আধ্যাত্মিক জ্ঞানের শিরোমণী হযরত শাহজালাল (রঃ) বাঘের বিচার করে মামার কাছে চললেন। গিয়ে হাস্যবদনে বললেন মামা ওদের আর কি বিচার করা যায়? বনের পশু শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করাই তো ওদের ধর্ম। তবে আপনার আদেশ পেয়ে আমি এই ভাবে বাঘটির বিচার করেছি যে, বাঘটিকে কাছে ডেকে এক চপেটাঘাত করে বলে দিয়েছি যেন এভাবে দুগ্ধছানা কখনও শিকার করিসনে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া