হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ৪
হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
একথা না বলে পারা যায় না যে, একজন ভাল ছাত্রের মধ্যে যে সকল গুণ থাকা প্রয়োজন তা এক শাহজালাল (রঃ) – এর মধ্যে বিদ্যমান ছিল। তাঁর ধী-শক্তির প্রমাণ হিসেবে একথা বলা যায় যে, তিনি মাত্র সাত বছর বয়সের সময় ৩০ পারা কুরআন শরীফ মুখস্ত করেন। এরপর তিনি তাঁর মামাকে শিক্ষাগুরু হিসেবে গ্রহণ করে তাঁর কাছ থেকে কোরআন, হাদিস তাফসির, ফেকাহ, তাসউফ ও বালাগত, মানতেক ইত্যাদি বিষয়ের উপর গভীর জ্ঞান লাভ করেন। এক সময় তাঁর মামা সৈয়দ আহম্মদ কবির একার পক্ষে এতগুলি বিষয়ের অধ্যাপনা করা কষ্ট অনুভব করলেন। তখনই তাঁর মামা উচ্চ শ্রেণীর আলেমকে বালক শাহজালালের গৃহশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেন। এবারে তারা উভয় বালক শাহজালাল কে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে লাগলেন।
তিনি শুধু জাহেরী ইলেমই শিক্ষা করেননি। বরং বাতেনী ইলেমও শিক্ষা করেছিলেন। তাইতো দেখা যায় বালোকেরা যে বয়সে দুষ্টামী খেলাধুলার মধ্যে কাটায় যে বয়সে বালক শাহজালাল (রঃ) জ্ঞান অর্জনের জন্য নিজেকে মনোনিবেশ করেছিলেন। জ্ঞানের সাধক হযরত শাহজালাল বাল্যকাল থেকে সকল আমার আয়েশ আনন্দ উৎসব পরিহার করে গভীর জ্ঞান সাগরে সাধনায় মত্ত হয়েছিলেন। তাঁর মামা তাকে শুধু জ্ঞানই শিক্ষা দেননি জ্ঞান শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিয়েছিলেন। উত্তম চরিত্র গঠনের জন্য যা কিছুর দরকার তাও তাঁকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। যার কারণে মানুষ তাঁর সংযম, সততা, সরলতা, বিনয় কোমলতা প্রভৃতি মহৎ গুণ দেখে তাঁর প্রতি মুগ্ধ হয়েছিল।
তাঁর মামা সৈয়দ আহম্মদ কবির ছিলেন একজন বিচক্ষণপূর্ণ লোক, সেহেতু তার বিচক্ষণতার দ্বারা তার ভাগীবার পূর্ণ পরিচয় পেয়েছিলেন। সে অতি সহজেই বুঝতে পেরেছিলেন যে বালক শাহজালাল এখন জগৎ বরেণ্য ব্যক্তি হবেন। বালক শাহজালাল এর অন্তরখানা ছিল আয়নার মত স্বচ্ছ ও নির্মল। তাইতো তাঁকে ইসলামের দর্পন বলেও আখ্যা দিয়েছেন। শৈশব হতেই কোন খারাপ কাজ করাতো দূরের কথা কোন দিন তাঁর মধ্যে খারাপ কাজের রেখাপাতও ঘটেনি। ভবঘুরে লাগামহীন বালকদের মত এখানে সেখানে ঘোরা ফেরা করে কখনই সময় কাটাননি। মামা সৈয়দ আহম্মদ কবির তাঁর দিকে কড়া দৃষ্টি রাখতেন, যাতে করে কোন খারাপ কাজে যেন শাহজালালকে স্পর্শ করতে না পারে।
এদিকে বালক শাহ জালাল তাঁর মামার ও গৃহশিক্ষকের নিকট থেকে সবক লয়ে আদায় করতে লাগলেন। তাঁর মামাও তাঁকে উচ্চ হতে উচ্চ স্তরের ফয়েজ দিতে লাগলেন। আল্লাহ পাকের অপর মহিমায় বালক শাহজালাল এলেমের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে উচ্চ হতে উচ্চ স্তরে পৌছাতে লাগলেন। আল্লাহর খেলা বুঝা ভার-যাকে তিনি দান করেন অতি অল্প সময়েই মানযিলে মাকছুদে পৌছাতে পারেন। বালক শাহজালালের উপরও আল্লাহর অপর করুণার ধারা প্রবাহিত হল, সেহেতু তিনি মানযিলে মাকছুদে পৌঁছে ছিলেন। মামা সৈয়দ আহম্মদ কাবিরের অকৃত্রিম প্রচেষ্টা ও বালক শাহ জালালের আগ্রহে তিনি কামেলে ওলির স্তর লাভ করেছিলেন। তাইতো তাঁকে আমরা ভক্তি ভরে স্মরণ করি। শুধু তাই নয় ইতিহাসের পাতায় আজ তাঁর নামটি আমর হয়ে আছে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া