হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১২

হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

গৌর গোবিন্দ ক্রোধঃ

মহান আল্লাহ তায়ালা ১৭০৯৯ টি মাখলুকাতকে মানুষের কল্যানের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। কারও থেকে শ্রম নিয়ে কারও গোস্ত ভক্ষন করে মানুষ উপকৃত হয়, গরু এমন একটি প্রাণী যেটার দ্বারা মানুষ শ্রম ও ভোগ করে এবং ইহার গোস্তও ভক্ষণ করে। যেসব প্রাণীর গোস্ত আল্লাহ হালাল করে দিয়েছেন তাদের মধ্যে গরুর গোস্ত ছিল অন্যতম। তবে বামপন্থী দু একটা গরুকে ভগবতীর ন্যায় মনে করে উহাকে পূজা করে থাকে। সেহেতু তাদের নিকট গরু জবেহ করে, হাড় গোস্ত ভক্ষণ করা খুবই জঘন্য অপরাধ মনে করে।

আবার অনেকে গো প্রাণীকে মায়ের সমান মনে করে খুব ভক্তি শ্রদ্ধা করে থাকে। দুর্ধর্ষ পৌত্তলিক ও আচারনিষ্ঠ হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দ ছিল বাম পন্থী ভ্রান্ত দলের লোক। তিনি স্বাভাবিক ভাবেই খুব অত্যাচারী লোক তাঁর উপর আবার এহেন জঘন্যতম অপরাধে যে কত পরিবর্তন হয়েছে সেটা বলাবাহুল্য। তিনি একবার গো হত্যাকে রাষ্টবিরোধ কাজ বলে ঘোষণা করেছিল যাতে করে কোন মুসলমান স্বীয় ধর্ম ঠিকভাবে পালন করতে না পারেন।

সে যাই হোক আল্লাহর খেলা বোঝা ভার। ধর্ম প্রাণ বোরহান উদ্দিন একটি পুত্র সন্তান লাভ করে মহান প্রভুর কাছে কৃত প্রতিজ্ঞা পালন করার জন্য তাঁর গৃহে পালিত সবচেয়ে সুন্দর ও সবচেয়ে হৃষ্ট পুষ্ট- গরুটাই আল্লাহর নামে কোরবানী করে উহার গোস্ত গরীব দুখীদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। এদিকে যখন গোস্ত বণ্টন করতে ছিলেন। তখন একটি পাখি এসে ছো মেরে এক টুকরো গোস্ত নিয়ে গেল। কিন্তু হতভাগা পাখিটি গোস্ত টুকরো খেতে পারল না। যখন গৌর গোবিন্দের রাজপুরীর উপর উপর দিয়ে পাখিটি গোস্ত টুকরো নিয়ে উড়ে যাচ্ছিল তখন রাজপুরীর পূজামন্দিরের আঙ্গিনায় গোস্ত টুকরো পড়ে গেল।

কথায় বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়। শেখ বোরহান উদ্দিনের পালাও তাই। খুব গোপন সতর্কের সাথে গো জবাই করে গোস্ত বন্টন করেছিল। তারপরও তাঁর সুখের সংসার তাসের ঘরের ন্যায় বালুর বাধের ন্যায় ফসকে গেল। তাঁর জীবনের নেমে আসে অশান্তি হাহাকার। মহান আল্লাহ যে বোরহান উদ্দিনের কষ্টের মাধ্যমে এ বাংলার জাতিকে মুক্তি দেবেন তা কে জানত? গোবিন্দ যখন শিব পূজায় রত ছিল , ঠিক সেই সময় মন্দিরের সেবায়েত পূজারী দৌড় এসে পূজারী কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠল, মহারাজ সর্বনাশ হয়েছে, জাত, ধর্ম আচার-অনুষ্টান সব কিছু সর্বনাশ হয়েছে।

বেঁচে থেকে আর লাভ কি? বামন ঠাকুরের চেহারা বিকৃত হয়ে গেল। এবার গৌর গোবিন্দ বামন ঠাকুরকে লক্ষ করে বলল তুমি অমন কর না। কি হয়েছে বামন ঠাকুর খুলে বল। বামন ঠাকুর তখন কম্পিত কণ্ঠে বলল, মহারাজ আমরা যাকে ধর্মে মা বলে শ্রদ্ধা নিবেদন করি সেই গো মাংস মন্দিরের আঙ্গিনায়। এ কথা মুখে আনলেও নরকে যেতে হবে। ঠাকুরের কথা শেষ না হতেই সে গর্জে উঠল, অসম্ভব আমরা রাজ্যে এমন কাজ করার সাহস কে পেল? তখন বামন তাঁকে সেখানে নিয়ে পড়ে থাকা গোস্তের টুকরাটি দেখাল। সাথে সাথে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল।

বামন ঠাকুর বলল, নিশ্চয়ই কোন মুসলমানই এ কাজ করার সাহস পেয়েছে। গৌর গৌবিন্দ রেগে বলল, মুসলমান? কোথায় সে মুসলমান আমার রাজ্যে বসে এতবড় জঘন্য অপরাধ। কোন মুসলমানের বাচ্চায় সাহস পেল? তখনই রাজা তার লোক লস্করকে ডেকে পাঠাল কে সেই অপরাধী মুসলমান। মুহূর্তের ভিতরে আমার সম্মুখে হাজির কর। নিজ হাতে আমি তাকে শায়েস্তা করব।

যেই হুকুম সেই কাজ। রাজার লোক লস্কর সকলে রাজ্যের অলি গলিতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক খোঁজা খুঁজির পর সংবাদ পেল যে শেখ বোরহান উদ্দীন এই কাজ করেছে। এবারে সেখানে গিয়ে কয়েকজন লোক গিয়ে বোরহান উদ্দীনকে ধরে নিয়ে রাজ দরবারে হাজির করল। গোবিন্দ গর্জে উঠে বোরহান উদ্দীনকে জিজ্ঞেস করল, কেন তুমি এহেন কাজ করেছ? কে তোমাকে এমন কাজ করার সাহস দিল। তখন বোরহান উদ্দীন তার সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। অত্যাচারী গোবিন্দ ইহা শুনে আরো ক্রোধে ফেটে পড়ল। বলল একটি ছোট শিশুর মঙ্গলের জন্য এহেন জঘন্যতর অপরাধ করতে সাহস পেলে। আজ আর তোমার রক্ষা নেই।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আরো পড়তে পারেন...

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন প্রাচ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী, শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, লেখক, গবেষক ও সমাজ সংস্কারক।…

অপু ও ফলচুরি রহস্য

মহানগরের কোলাহলের মাঝে, ব্যস্ত জনপথের কিছুটা দূরে একফালি সবুজ ল্যান্ডস্কেপ । সদ্য গড়ে ওঠা আবাসন…

ভালুক ও কাঠবিড়ালী

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘খুকি ও কাঠবিড়ালী’ কবিতাটি কম-বেশি সবাই পড়েছে। এ কবিতাটির কারণেই ছোট্ট…

হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১২

হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

গৌর গোবিন্দ ক্রোধঃ

মহান আল্লাহ তায়ালা ১৭০৯৯ টি মাখলুকাতকে মানুষের কল্যানের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। কারও থেকে শ্রম নিয়ে কারও গোস্ত ভক্ষন করে মানুষ উপকৃত হয়, গরু এমন একটি প্রাণী যেটার দ্বারা মানুষ শ্রম ও ভোগ করে এবং ইহার গোস্তও ভক্ষণ করে। যেসব প্রাণীর গোস্ত আল্লাহ হালাল করে দিয়েছেন তাদের মধ্যে গরুর গোস্ত ছিল অন্যতম। তবে বামপন্থী দু একটা গরুকে ভগবতীর ন্যায় মনে করে উহাকে পূজা করে থাকে। সেহেতু তাদের নিকট গরু জবেহ করে, হাড় গোস্ত ভক্ষণ করা খুবই জঘন্য অপরাধ মনে করে।

আবার অনেকে গো প্রাণীকে মায়ের সমান মনে করে খুব ভক্তি শ্রদ্ধা করে থাকে। দুর্ধর্ষ পৌত্তলিক ও আচারনিষ্ঠ হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দ ছিল বাম পন্থী ভ্রান্ত দলের লোক। তিনি স্বাভাবিক ভাবেই খুব অত্যাচারী লোক তাঁর উপর আবার এহেন জঘন্যতম অপরাধে যে কত পরিবর্তন হয়েছে সেটা বলাবাহুল্য। তিনি একবার গো হত্যাকে রাষ্টবিরোধ কাজ বলে ঘোষণা করেছিল যাতে করে কোন মুসলমান স্বীয় ধর্ম ঠিকভাবে পালন করতে না পারেন।

সে যাই হোক আল্লাহর খেলা বোঝা ভার। ধর্ম প্রাণ বোরহান উদ্দিন একটি পুত্র সন্তান লাভ করে মহান প্রভুর কাছে কৃত প্রতিজ্ঞা পালন করার জন্য তাঁর গৃহে পালিত সবচেয়ে সুন্দর ও সবচেয়ে হৃষ্ট পুষ্ট- গরুটাই আল্লাহর নামে কোরবানী করে উহার গোস্ত গরীব দুখীদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। এদিকে যখন গোস্ত বণ্টন করতে ছিলেন। তখন একটি পাখি এসে ছো মেরে এক টুকরো গোস্ত নিয়ে গেল। কিন্তু হতভাগা পাখিটি গোস্ত টুকরো খেতে পারল না। যখন গৌর গোবিন্দের রাজপুরীর উপর উপর দিয়ে পাখিটি গোস্ত টুকরো নিয়ে উড়ে যাচ্ছিল তখন রাজপুরীর পূজামন্দিরের আঙ্গিনায় গোস্ত টুকরো পড়ে গেল।

কথায় বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়। শেখ বোরহান উদ্দিনের পালাও তাই। খুব গোপন সতর্কের সাথে গো জবাই করে গোস্ত বন্টন করেছিল। তারপরও তাঁর সুখের সংসার তাসের ঘরের ন্যায় বালুর বাধের ন্যায় ফসকে গেল। তাঁর জীবনের নেমে আসে অশান্তি হাহাকার। মহান আল্লাহ যে বোরহান উদ্দিনের কষ্টের মাধ্যমে এ বাংলার জাতিকে মুক্তি দেবেন তা কে জানত? গোবিন্দ যখন শিব পূজায় রত ছিল , ঠিক সেই সময় মন্দিরের সেবায়েত পূজারী দৌড় এসে পূজারী কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠল, মহারাজ সর্বনাশ হয়েছে, জাত, ধর্ম আচার-অনুষ্টান সব কিছু সর্বনাশ হয়েছে।

বেঁচে থেকে আর লাভ কি? বামন ঠাকুরের চেহারা বিকৃত হয়ে গেল। এবার গৌর গোবিন্দ বামন ঠাকুরকে লক্ষ করে বলল তুমি অমন কর না। কি হয়েছে বামন ঠাকুর খুলে বল। বামন ঠাকুর তখন কম্পিত কণ্ঠে বলল, মহারাজ আমরা যাকে ধর্মে মা বলে শ্রদ্ধা নিবেদন করি সেই গো মাংস মন্দিরের আঙ্গিনায়। এ কথা মুখে আনলেও নরকে যেতে হবে। ঠাকুরের কথা শেষ না হতেই সে গর্জে উঠল, অসম্ভব আমরা রাজ্যে এমন কাজ করার সাহস কে পেল? তখন বামন তাঁকে সেখানে নিয়ে পড়ে থাকা গোস্তের টুকরাটি দেখাল। সাথে সাথে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল।

বামন ঠাকুর বলল, নিশ্চয়ই কোন মুসলমানই এ কাজ করার সাহস পেয়েছে। গৌর গৌবিন্দ রেগে বলল, মুসলমান? কোথায় সে মুসলমান আমার রাজ্যে বসে এতবড় জঘন্য অপরাধ। কোন মুসলমানের বাচ্চায় সাহস পেল? তখনই রাজা তার লোক লস্করকে ডেকে পাঠাল কে সেই অপরাধী মুসলমান। মুহূর্তের ভিতরে আমার সম্মুখে হাজির কর। নিজ হাতে আমি তাকে শায়েস্তা করব।

যেই হুকুম সেই কাজ। রাজার লোক লস্কর সকলে রাজ্যের অলি গলিতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক খোঁজা খুঁজির পর সংবাদ পেল যে শেখ বোরহান উদ্দীন এই কাজ করেছে। এবারে সেখানে গিয়ে কয়েকজন লোক গিয়ে বোরহান উদ্দীনকে ধরে নিয়ে রাজ দরবারে হাজির করল। গোবিন্দ গর্জে উঠে বোরহান উদ্দীনকে জিজ্ঞেস করল, কেন তুমি এহেন কাজ করেছ? কে তোমাকে এমন কাজ করার সাহস দিল। তখন বোরহান উদ্দীন তার সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। অত্যাচারী গোবিন্দ ইহা শুনে আরো ক্রোধে ফেটে পড়ল। বলল একটি ছোট শিশুর মঙ্গলের জন্য এহেন জঘন্যতর অপরাধ করতে সাহস পেলে। আজ আর তোমার রক্ষা নেই।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন