হযরত শামাউন (আঃ)-এর শারীরিক গঠন ও নবুয়ত লাভ-৫ম পর্ব

হযরত শামাউন (আঃ)-এর শারীরিক গঠন ও নবুয়ত লাভ- ৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

এ কথা শুনামাত্র নবীপত্নী স্বামীকে বললেন, কি বস্তুটি প্রিয়! আমার নিকট একটু বলুন।

নবী (আঃ) বললেন, তা কেউই জানে না তোমারও জানার দরকার নেই।

এতে নবীপত্নী অত্যন্ত দুঃখিত হবার ভাব দেখিয়ে বললেন, কেন আমার জানার দরকার নেই। তাহলে কি আপনি আমাকে অবিশ্বাস করেন?

তখন হযরত শামাউন (আঃ) স্ত্রী অসন্তুষ্টি এবং মনোবেদনার ভাব লক্ষ্য করে বললেন, তুমি যখন একান্তই বিষয়টি জানতে চাচ্ছ, তখন তোমাকে বলতেছি, কিন্তু খুব সাবধান, কোনরূপে যেন তা কোন শত্রুর নিকট প্রকাশ না পায়। আমার মাথায় কয়েকটি কেশ বা আমার শরীরের কয়েকটি পশম দ্বারা আমার হাত-পা বাঁধতে পারলে আমার এমন কোন সাধ্য নেই যে, আমি তা কোনরূপে খুলতে পারি। গোপন বিষয়টি এভাবে নবীপত্নীর অতি সহজেই নবীর নিকট হতে জেনে লইলেন।

রাত্রে যখন নবী (আঃ) নিদ্রামগ্ন হলেন, তখন তাঁর স্ত্রী উঠে স্বামীর মাথা চুলকিয়ে দেবার বাহানা করে তাঁর মাথা হতে ছয়টি কেশ উৎপাটন করলেন এবং তাঁর তিনটি দ্বারা তাঁর দু-পা ও তিনটি দ্বারা দু’হাত শক্তভাবে বেঁধে বাদশাহর লোকজনের নিকট খবর পাঠালেন। এদিকে হযরত শামাউন (আঃ) জেগে উঠে যখন নিজের হাত পা ও তাঁর নিজের কেশ দ্বারা অবস্থায় দেখলেন, তখন তাঁর এ কথা বুঝার বাকী রইল না যে, এটা তাঁর একমাত্র স্ত্রীরই কাজ। কেননা স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ এ গোপন রহস্যটি জানত না। তিনি স্ত্রীকে ডাকতে লাগলেন কিন্তু তিনি তখন আর ঘরে ছিলেন না। তিনি স্বামীকে এভাবে বেঁধে রেখে নিজেই বাদশাহর লোকজনকে এ খবর জানাতে চলে গেলেন। একটু পরেই বাদশাহর লোকজন হযরত শামাউন (আঃ) কে এ অবস্থায় দেখে খুব খুশি হল এবং তখন তাঁর উপর নানারূপ অত্যাচার এবং নির্যাতন চালাতে শুরু করল। পাপীষ্ঠগণ এবার সুযোগ পেয়ে হযরত শামাউন (আঃ) এর হাত-পা, চক্ষু, কর্ণ কেটে ফেলল। তাঁর দেহে একেবারে অসার হয়ে গেল। অতঃপর বাদশাহ হুকুম করল যে, তোমরা শামাউনকে হত্যা করে তাঁর লাশ নদীতে ফেলে দাও। সাথে সাথে বাদশাহর নির্দেশ পালিত হল।

হযরত শামাউন (আঃ) পাপীদের দ্বারা নদীতে নিক্ষিপ্ত হলেন বটে, কিন্তু তিনি নদীগর্ভে ডুবার পূর্বেই ফেরেস্তা জিব্রাঈল (আঃ) তাঁর কর্তিত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও দেহ ধারন করে অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো যেখানে যা ছিল সেগুলো ঠিক ঠিক স্থানে বসিয়ে দিলেন এবং আল্লাহ্‌র নির্দেশমত তাঁকে পুনর্জীবন দান করলেন। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র নবী! এবার আল্লাহ্‌ আপনাকে পূর্বাপেক্ষাও কয়েক গুণ বেশী শক্তি দান করেছেন। অতএব, এবার আপনি পাপাত্তা বাদশাহর দরবারে গিয়ে তাঁর এবং তাঁর পাপীষ্ঠ সহচর অনুচরদের প্রতি চরম আঘাত হানুন। আর তাঁদের বাড়িঘর, দালান কোঠা সমূলে ধ্বংস করে তাঁদের অন্যায় আচরণের যথোপযুক্ত প্রতিশোধ নিন।

হযরত শামাউন (আঃ) ফেরেস্তা জিব্রাইল (আঃ) এর পরামর্শ অনুযায়ী প্রথমেই পাপিষ্ট বাদশাহর সমুদ্র তীরের প্রমোদ ভবনটি এক ধাক্কায় সমুদ্রে নিক্ষেপ করলেন। পাপিষ্ট কাফিরগণ দূর হতে দেখতে পেল যে, হযরত শামাউন (আঃ) পুনজীবিত হয়ে ক্ষুদিত সিংহ বিক্রমে রাজপ্রসাদ অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছেন। তা দেখে ভয়ে ও ত্রাসে তাঁদের অন্তরাত্না শুকিয়ে গেল। এবং কাঁপতে কাঁপতে যে যেদিকে পারল ছুটে পালাল।

এমতাবস্থায় হযরত শামাউন (আঃ) রাজ প্রসাদের ভিতর ঢুকে তাঁর স্তম্ভ উপড়ায়ে ফেলতে লাগলেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই রাজ ভবনটি ভূমিতে ধ্বসে পড়ল। তৎপর নগরীর অন্যান্য দালান কোঠাগুলো একেক ধাক্কায় ভূমিস্মাৎ করতে লাগলেন। তাঁর এ প্রচণ্ড ধ্বংস লীলায় কেউ যে এসে বাঁধা প্রদান করবে এমন সাহস কারও হল না। স্বয়ং বাদশাহ অবশ্য একবার হুস্কার দিয়ে বলল, ওহে তোরা কে কোথায় আছ! হে প্রধান সেনাপতি! তুমি তোমার বাহিনী নিয়ে শামাউনকে আক্রমণ কর। কিন্তু তখন কে শুনে তাঁর কথা। হযরত শামাউন (আঃ) এর ক্রিয়া কার্যের দৃশ্য দেখে প্রধান সেনাপতিসহ সকল সৈন্য আত্নগোপন করে ছিল। সুতরাং হযরত শামাউন (আঃ) এর সামনে একটি প্রাণীও এগিয়ে আসল না। একটু পরেই তিনি বাদশাহর কক্ষে পৌঁছে তাঁকে ধরে শূন্যে তুলে এক আছাড়েই তাঁর জীবন লীলা সাঙ্গ করে দিলেন। অন্যান্য পাপীষ্ঠ কাফিরদল এদিকে সেদিকে পালানোর সময় যে তাঁর সামনে পড়ল তাকেই জাহান্নামে পাঠিয়ে দিলেন। যারা কোনরূপ প্রাণ নিয়ে পালাতে পারল, তারা ভীতি ও আতঙ্কে নগর ছেড়ে বহু দূরে চলে গেল। এভাবে রাজধানী নগরীটি একেবারেই কাফিরমুক্ত হয়ে গেল। সেখানে তখন কেবল কিছু সংখ্যক দ্বীনদার লোকই রইল।

হযরত শামাউন (আঃ)-এর শারীরিক গঠন ও নবুয়ত লাভ – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।