হযরত শামাউন (আঃ)-এর শারীরিক গঠন ও নবুয়ত লাভ-২য় পর্ব

হযরত শামাউন (আঃ)-এর শারীরিক গঠন ও নবুয়ত লাভ-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

বাদশাহ তাঁদের এ প্রস্তাব সমর্থন করে বলল, তোমাদের এ প্রস্তাবটি একান্ত সঠিক ও যথার্থ। তোমরা এ ধরণের একটি কৌশল খুঁজে বের কর। শামাউনকে শেষ না করতে পারলে সে আমাদের ধর্মের অস্তিত্বই শেষ করে দিবে।

বাদশাহর নির্দেশে তাঁর পরিষদ্গণ এক বিচক্ষণ কুটনী রমণীকে খোঁজ করে বের করল। কুটনি বুড়ীর সাথে তারা খুব গোপনে নিজেদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করল এবং কার্যোদ্ধার করা সম্ভব হলে তাঁকে মূল্যবান উপঢৌকন দেয়ার লোভ দেখাল। অতঃপর তারা ঐ বুড়ীকে বাদশাহর নিকট হাজির করল। বাদশাহ বুড়িকে বাদশাহর নিকট হাজির করল। বাদশাহ বুড়ীকে বলল, তুমি কিভাবে কি করবে, আমাকে একটু শুনালে খুব খুশি হতাম।

বুড়ী বলল, দেখুন জাঁহাপনা! এ কাজটি তো খুবই নগন্য। এটা অপেক্ষা অনেক গুরুতর কাজ জীবনে অনেক করেছি। সুতরাং এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। কিভাবে কি করব, তা শুনে আপনি কি করবেন? কাজ আগে সমাধা করি।

রমণীর কথা শুনে বাদশাহ বলল, হ্যাঁ, রমণী কাজ সমাধাই আমার প্রধান উদ্দেশ্য। তা সমাধা করার পন্থা আমার জানা দরকার নেই। তুমি যে কোনভাবে কাজ সমাধা করতে পার তাই কর। তবে জেনে রাখা এ কাজটি সমাধা করতে পারলে আমি তোমাকে এমন এক মূল্যবান পূরস্কার প্রদান করব, যা তোমার কল্পনার বাইরে।

আপনার অভিরুচি জাঁহাপানা! এ কথা বলে কুটনী রমণী বাদশাহর দরবার হতে বিদায় নিল। উক্ত রমণী হযরত শামাউন (আঃ) এর স্ত্রী মাধ্যমে কার্যোদ্ধার করতে মনস্থ করল এবং এটাই সহজ পথ হিসেবে সে বেছে নিল। এ পথে কি করতে হবে তা ছিল তার নখদর্পণে। হযরত শামাউন (আঃ) এর স্ত্রী ছিলেন একজন পূণ্যবতী মহিলা। তাই তার এ সরলতার সুযোগই গ্রহণ করল উল্লেখিত কুটনী রমণী। একদা সে হযরত শামাউন (আঃ) বাড়ির ভীতর প্রবেশ করে তাঁর স্ত্রী সাথে সাক্ষাত করল।

নবী পত্নি তাঁকে কোনদিন দেখেন নি। তাই জিজ্ঞেস করলেন, কে আপনি অপরিচিতা রমণী! আমি কোনদিন আপনাকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। আপনার পরিচয় বা কি? আর এখানেই বা এসেছেন কি মনে করে?

বৃদ্ধা রমণী চতুরতার সাথে বলল, মা! আমাকে তুমি চিনবে কিভাবে কোন দিন কি আমি কি তোমার নিকট আসতে পেরেছি? তোমার মা ছিলেন আমার বড় বোনের মত। তিনি আমাকে কত স্নেহ করতেন। আমার দিন কাটত শুধু তারই নিকট। আমার বাড়ি তোমার পিতৃালয়ের কাছেই। তোমার মার স্নেহ আমি কোনদিনই ভুলতে পারব না। এত ভাল মহিলা আর কোথাও দেখিনি। তোমাকে দেখেছি সেই ছোট বেলায়। যখন বড় হয়েছ তখন হতেই আমি বার্ধক্য জনিত কারণে আর আসতে পারিনি। যার মা আমাকে এত স্নেহ করতেন, তাঁর মৃত্যুর পর তারই কন্যার খোঁজ খবর না নেয়ার প্রবৃত্ত আমার কোনদিনই ছিল না। বোনঝী কিন্তু কি করব, শত ইচ্ছা থাকা সত্বেও শুধু অক্ষমতার জন্য তোমার খোঁজ খবর নিতে পারিনি। তোমার স্বামীর বাড়ি এখানে তাও আমার জানা ছিল। কিন্তু সবই ভাগ্যের দোষ। তবে কোনদিন আমি তোমার নিকট আসতে না পারলেও সব সময়ই বিভিন্ন লোক মারফত তোমার যাবতীয় সুখ-দুঃখের সংবাদ নিয়েছি। এখন বল, তোমার সংসারী জীবন কিভাবে অতিবাহিত হচ্ছে? তুমি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভাল আছ তো?

নবী পত্নী জবাব দিলেন। আল্লাহ্‌র রহমতে ভালই আছি খালা।

কুটনী রমণী বলল, তুমি তো তা বলবেই মাগো, কিন্তু তুমি যাই বল না কেন, তোমার দুর্ভাগ্যের কথা আমার কানে সবই পৌঁছেছে। সেজন্য আমার সব দুর্বলতা ও অক্ষমতা ঝেড়ে ফেলে তোমার দুঃখের ভার লাঘব করার জন্য আজ তোমার নিকট ছুটে এসেছি।

নবী পত্নী বৃদ্ধা রমণীর কথার অর্থ বুঝতে না পেরে বিস্ময় বললেন, খালা! আপনি কি বলতেছেন, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার আবার দুর্ভাগ্য কিসের? আমি আল্লাহ্‌ পাকের অমীয় রহমতে খুব সুখ শান্তিতে আছি। বরং আমি নবীর সহধর্মিনী হিসাবে নিজেকে পরম সৌভাগ্যবতী নারী হিসাবে মনে করতেছি।

হযরত শামাউন (আঃ)-এর শারীরিক গঠন ও নবুয়ত লাভ- ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।