হযরত শামউন মুহেব্ব (রঃ) – পর্ব ৩
হযরত শামউন মুহেব্ব (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আর ঐ রাতেই খলীফা স্বপ্নে দেখলেন, এক সৌম্য-দর্শন সাধক তাঁকে বলেছেন, মিথ্যা অভিযোগে শামাউনকে প্রাণদণ্ড দিলে তোমার রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে। অতএব, সাবধান! স্বপ্ন দেখে খলীফা দারুণ ভীত হয়ে পড়লেন আর পরদিন তিনিই তাঁকে দরবারে এনে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং সসম্মানে বিদায় দিলেন। এ সুযোগও কাজে লাগল না দেখে খলীলের ভেতরটা আরও জ্বলে উঠল। কখন কিভাবে তাঁর ক্ষতি করা যায় সে বিষয়ে তিনি আরও তৎপর হলেন।
পৌঢ় অবস্থায় এই খলীল কুণ্ঠ রোগে আক্রান্ত হন। অনেকেরই ধারণা, হযরত শামাউন (রঃ)-এর বিরামহীন বিরুদ্ধাচরণের পরিণাম ছাড়া এটি আর কিছু নয়।
সমকালের এক প্রখ্যাত সাধকের কাছে খলীলের প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বললেন, খলীলের স্থান নিশ্চয়ই ধর্মভীরু লোকদের অন্তর্গত নয়। কেননা, তিনি কোন ভালো কাজ করেননি। সাধকের এ কথাটি খলীলেরও কানে আসে। অন্যের মন্তব্য শোনার তাঁর প্রয়োজন ছিল না। কেননা, তিনি তাঁর কৃতকর্ম সম্বন্ধে সবচেয়ে বেশী ওয়াকিফহাল ছিলেন। শোনা যায়, এরপর তিনি নাকি তওবা করে তাঁর যাবতীয় ধন-সম্পদ ফকীর-দরবেশগণের কাছে পাঠিয়ে দেন। অবশ্য তাঁরা কেউই তাঁর দান গ্রহণ করেননি।
তিনি বলেনঃ
১. আল্লাহর স্মরণে সদা-সর্বদা নিজেকে মগ্ন রাখাই হল আল্লাহর সঙ্গে প্রেম। যেমন আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ কর।
২. যিনি আল্লাহর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রাখেন, তিনি ইহকাল ও পরকালের সৌভাগ্য লাভ করেন। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যিনি আল্লাহর সঙ্গে প্রেম করেন, আল্লাহ তাঁর সঙ্গেই বিরাজ করেন।
৩. যার চেয়ে উত্তম আর কিছু নেই, যা শুধু এবাদত-বন্দেগী বা মুখের কথায় পাওয়া যায় না, এরই নাম প্রেম।
৪. প্রেমের সংজ্ঞা শব্দ-বাক্য দ্বারা প্রকাশ করা যায় না।
৫. প্রেমিকের বিপন্ন করা হয় কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অনুপযুক্ত ইতর-জনেরা বিপদ দেখে অধৈর্য হয়ে পালিয়ে যায়।
৬. ফকিরীর মর্ম কি? এর উত্তরে তিনি বলেন, তিনিই প্রকৃত ফকীর যিনি ফকিরীকে ভালোবাসেন। মূর্খ ধনীরা যেমন ধন ভালবাসে। ফকীরগণ ধনকে ভয় করেন যেমন মূর্খ লোকেরা ফকিরীকে ভয় করে।
তাসাউফ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তুমি কোন বস্তুর অধীন হবে না এবং কোন বস্তুও তোমার অধীন হবে না। তাকেই বলে তাসাউফ।
হযরত আবু মুহাম্মদ মুরতায়েশ (রঃ) ছিলেন শোনিরিয়ার অধিবাসী। তিনি জন্মগ্রহণ করেন নিশাপুরী। আর তাঁর মৃত্যু হয় বাগদাদে। বহু দেশ ভ্রমণ করে আল্লাহর সৃষ্টি-রহস্য উন্মোচনে তিনি সক্রিয় ছিলেন। তিনিও একজন প্রেমময় সাধক পুরুষ ছিলেন। হযরত আবু ওসমান (রঃ) ও হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)-এর সাহচর্য লাভ করে তিনি তত্ত্বজ্ঞান লাভ করেন। হযরত হাফস (রঃ)-এর সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে।
আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তিনি তেরবার হজ্জ সমাধা করেন। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন, একটি হজ্জও প্রবৃত্তির অনুসরণমুক্ত ছিল না। কী করে সেটা বুঝলেন? তিনি বলেন, একবার তাঁর মা
পানি আনতে বলায় তিনি বিরুক্তি বোধ করেন। এর দ্বারাই তিনি তা উপলব্ধি করেন। কেননা, কোন হজ্জই তাঁর রিপু এতটুকু বিরক্ত হয়নি।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া