হযরত শামউন মুহেব্ব (রঃ) – পর্ব ২
হযরত শামউন মুহেব্ব (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কথিত আছে, ছাত্রজীবনে মক্তবের পথে যাবার সময় তিনি একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।
তার মর্ম এরূপঃ
প্রভু আমার, আপনি ছাড়া আমার অন্তরে আর কিছুতেই সুখ নেই। তাই আপনার দরজা ছাড়া আর কারও দরজায় আমার দৃষ্টি নেই। আমার একথা যদি মিথ্যা হয়ে থাকে, তা হলে পরীক্ষা করুন, আমার আপত্তি নেই।
কবিতাটি আবৃত্তি করার পরেই তাঁর প্রসাব বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি তাঁর সহপাঠীদের বললেন, তোমরা আমার জন্য একটু দোয়া কর যেন আল্লাহ তাঁর মিথ্যাবাদী দাসকে নিরাময় করেন।
বাগদাদের রাজদরবারে খলীল নামে এক তরুণ দরবেশ ছিলেন। তিনি নিজেকে খুব বড় সাধক মনে করতেন। আর সমালোচনা করতেন অন্যান্য সুফী-সাধকদের। যেন খলীফার দৃষ্টিতে তাঁরা দোষী ও অপরাধ বলে বিবেচিত হন। এদিকে হযরত শামাউন (রঃ)-এর নাম যশঃ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বাগদাদের এক বিত্তশালিনী তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। কিন্তু হযরত শামাউন সে প্রস্তাব নাকচ করেন।
মহিলা এবার গেলেন হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর কাছে। তিনি যেন তাঁর ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তার করে শামাউন (রঃ)-এর সঙ্গে বিবাহের ব্যবস্থা করেন। হযরত জুনায়েদ (রঃ)-ও বিরক্তিভরে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। মহিলা নিরাশ না হয়ে এবার ধরলেন তরুণ দরবেশ খলীলকে। খলীল এ ধরণের একটা সুযোগ খুঁজছিলেন। খুব খুশী হয়ে তিনি মহিলাকে বোঝালেন, সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না।
বাঁকা পথে যেতে হবে। আর পথটাও বলে দিলেন। মহিলা খলীফায় দরবারে গিয়ে তার বিরুদ্ধে একটা কিছু অভিযোগ করুন। তাহলে খলীফা তাঁকে দেবেন বটে, তবে বিয়েরও ব্যবস্থা করবেন।
খলীলের প্ররোচনায় মহিলাটি খলীফার দরবারে গিয়ে হযরত শামাউন (রঃ)-এর বিরুদ্ধে জঘন্য অভিযোগ পেশ করলেন। আর তার মুখে সে কথা শুনে খলীফা তো খাপ্পা। আবার তাতে ইন্ধন যোগালেন তরুণ দরবেশ। অতএব, তৎক্ষণাৎ শামাউন (রঃ)-কে দরবারে তলব করা হল। হযরত শামাউন (রঃ) দরবারে উপস্থিত হওয়ামাত্র খলীফা তাঁকে কঠোর ভৎর্সনা করে তাঁর প্রাণদণ্ডের আদেশ দিয়ে উদ্যত হলেন। কিন্তু কি আশ্চর্য! হঠাৎ খলীফা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। তাঁর মুখ থেকে একটি শব্দও নিঃসৃত হল না। সভাস্থ সবাই হতভম্ব। সেদিনের মতো বিচারকার্য স্থগিত হয়ে গেল।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া