হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ৪

হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন    

এই মহিমান্বিত মহাতাপসীর আলোকোজ্জ্বল জীবনের বিচিত্র পরিচয় ছড়িয়ে আছে মানুষের মনোলোকে। তার কিছু আলোকরশ্মি এখানে বিবৃত হলঃ

১। এক দুর্বল গাধার পিঠে মালপত্র তুলে দিয়ে তিনি চলেছেন চিরবাঞ্ছিত মক্কা মোয়াজ্জামায়। রাস্তায় গাধাটি মারা গেল। সঙ্গের লোকেরা তাঁর মালপত্র বয়ে নিয়ে যেতে চাইল। তিনি রাজি হলেন না। অগত্যা তাঁকে ছেড়ে সবাই চলে গেল। আর তিনি হাত ওঠালেন আল্লাহর দরবারে। প্রভু গো! আপনি আপনার দাসীকে পবিত্র কাবার দিকে ডাক দিলেন। অথচ, গাধাটিকে মেরে ফেলে আমাকে এমন বিপাকে ফেললেন? কাজটি কি ঠিক হল? আল্লাহ তাঁর অভিমান ক্ষুব্ধ হৃদয়ের প্রার্থনায় বিচলিত হয়ে মৃত গাধার প্রাণ ফিরিয়ে দিলেন। তাঁর হজ্জ যাত্রার আর বিঘ্ন ঘটল না।

২। মক্কা শরীফের উপকন্ঠে নির্জনে তিনি তাঁর প্রভুর কাছে আবেদন জানালেন, তিনি তাঁকে দেখতে চান। আল্লাহ তাঁকে খবর দিলেন, তুমি কি চাও দুনিয়া ধ্বংস হোক, আর তার দায়-দায়িত্ব তোমার ওপর পড়ুক? তুমি কি জান না, আমাকে দেখতে চেয়ে মূসার কী অবস্থা হয়েছিল? আমি তাঁকে বার বার বাধা দিয়েছিলাম, সে শোনেনি। ফলে আমার নূরের কণামাত্র প্রকাশ করায় তূর পর্বত জ্বলে পুড়ে শেশ হয়ে গেল।

৩। তিনি দ্বিতীয়বার যখন হজ্জযাত্রায় যান, তখন কাবার অদূরে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হন। হঠাৎ তিনি দেখেন, খোদ কাবা তাঁকে স্বাগত জানাবার জন্য এগিয়ে আসছে। তখন তিনি বলেন, এ ঘর নিয়ে আমি কী করব? আমি ঘরের মালিককে চাই। কেননা, ঘরের মালিক নিজেই বলেছেন, যে আমার দিকে আধ হাত এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। অতএব, কেবল কাবা নিয়ে আমি খুশী হতে পারি না।

৪। ঠিক এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অন্য একটি কাহিণী শোনা যায়-যা তাপসী রাবেয়া (রঃ) এর মর্যাদা বহু গুণ বৃদ্ধি করে। মহাসাধক হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) চলেছেন মক্কা শরীফে। এক পা করে যান আর দু’রাকাআত করে নফল নামাজ পড়েন। পায়ে হাঁটার বদলে হামাগুড়ি দিয়ে যেতে থাকেন। দারূণ কষ্টকর সেই হজ্জ যাত্রা। মক্কায় পৌঁছাতে তাঁর সময় লেগে গেল চৌদ্দ বছর। কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখলেন, কাবা শরীফ তার জায়গায় নেই, নাকি তাঁর চোখ খারাপ? তাই দেখতে পাচ্ছেন না? তাঁর সংশয়-সন্দেহ হতাশার উত্তরে একজন ফেরেশতা বললেন, না চোখের দোষ নয়। আসলে এক বৃদ্ধাকে স্বাগত জানাবার জন্য কাবা ঘর সাময়িকভাবে স্থান ত্যাগ করেছে।

কে, কে সে? চীৎকার করে কেঁদে উঠলেন আদহাম (রঃ)।

আর তখন লাঠিতে ভর দিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছেন হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)। পবিত্র কাবা ঘরও ফিরে এসেছে আপন জায়গায়। হযরত আদহাম (রঃ) বললেন, পৃথিবীতে আপনি এক নজির স্থাপন করলেন। হযরত রাবেয়া (রঃ) বললেন, আপনি তো পথে নামাজ পড়তে পড়তে চৌদ্দ বছর লাগিয়ে দিলেন। আর আমি দিব্যি হেসে-খেলে এখানে এসে হাজির হয়েছি। নজির স্থাপন কে করল, আমি না আপনি?

আল্লাহর প্রিয়জনদের এ রহস্যময় সংলাপের অর্থ একমাত্র আল্লাহই জানেন।

আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাপসী রাবেয়া (রঃ)-এর প্রার্থনা, কোন ত্রুটি বিচ্যুতির কারণে আল্লাহ যদি তাঁর হজ্জ কবুল না করেন, তাহলে সেটি তাঁর পক্ষে চরম বিপদ স্বরূপ। সেই বিপদের পূণ্য অর্জনের সৌভাগ্য যেন তাঁর হয়।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন    

হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ৪

হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন    

এই মহিমান্বিত মহাতাপসীর আলোকোজ্জ্বল জীবনের বিচিত্র পরিচয় ছড়িয়ে আছে মানুষের মনোলোকে। তার কিছু আলোকরশ্মি এখানে বিবৃত হলঃ

১। এক দুর্বল গাধার পিঠে মালপত্র তুলে দিয়ে তিনি চলেছেন চিরবাঞ্ছিত মক্কা মোয়াজ্জামায়। রাস্তায় গাধাটি মারা গেল। সঙ্গের লোকেরা তাঁর মালপত্র বয়ে নিয়ে যেতে চাইল। তিনি রাজি হলেন না। অগত্যা তাঁকে ছেড়ে সবাই চলে গেল। আর তিনি হাত ওঠালেন আল্লাহর দরবারে। প্রভু গো! আপনি আপনার দাসীকে পবিত্র কাবার দিকে ডাক দিলেন। অথচ, গাধাটিকে মেরে ফেলে আমাকে এমন বিপাকে ফেললেন? কাজটি কি ঠিক হল? আল্লাহ তাঁর অভিমান ক্ষুব্ধ হৃদয়ের প্রার্থনায় বিচলিত হয়ে মৃত গাধার প্রাণ ফিরিয়ে দিলেন। তাঁর হজ্জ যাত্রার আর বিঘ্ন ঘটল না।

২। মক্কা শরীফের উপকন্ঠে নির্জনে তিনি তাঁর প্রভুর কাছে আবেদন জানালেন, তিনি তাঁকে দেখতে চান। আল্লাহ তাঁকে খবর দিলেন, তুমি কি চাও দুনিয়া ধ্বংস হোক, আর তার দায়-দায়িত্ব তোমার ওপর পড়ুক? তুমি কি জান না, আমাকে দেখতে চেয়ে মূসার কী অবস্থা হয়েছিল? আমি তাঁকে বার বার বাধা দিয়েছিলাম, সে শোনেনি। ফলে আমার নূরের কণামাত্র প্রকাশ করায় তূর পর্বত জ্বলে পুড়ে শেশ হয়ে গেল।

৩। তিনি দ্বিতীয়বার যখন হজ্জযাত্রায় যান, তখন কাবার অদূরে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হন। হঠাৎ তিনি দেখেন, খোদ কাবা তাঁকে স্বাগত জানাবার জন্য এগিয়ে আসছে। তখন তিনি বলেন, এ ঘর নিয়ে আমি কী করব? আমি ঘরের মালিককে চাই। কেননা, ঘরের মালিক নিজেই বলেছেন, যে আমার দিকে আধ হাত এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। অতএব, কেবল কাবা নিয়ে আমি খুশী হতে পারি না।

৪। ঠিক এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অন্য একটি কাহিণী শোনা যায়-যা তাপসী রাবেয়া (রঃ) এর মর্যাদা বহু গুণ বৃদ্ধি করে। মহাসাধক হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) চলেছেন মক্কা শরীফে। এক পা করে যান আর দু’রাকাআত করে নফল নামাজ পড়েন। পায়ে হাঁটার বদলে হামাগুড়ি দিয়ে যেতে থাকেন। দারূণ কষ্টকর সেই হজ্জ যাত্রা। মক্কায় পৌঁছাতে তাঁর সময় লেগে গেল চৌদ্দ বছর। কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখলেন, কাবা শরীফ তার জায়গায় নেই, নাকি তাঁর চোখ খারাপ? তাই দেখতে পাচ্ছেন না? তাঁর সংশয়-সন্দেহ হতাশার উত্তরে একজন ফেরেশতা বললেন, না চোখের দোষ নয়। আসলে এক বৃদ্ধাকে স্বাগত জানাবার জন্য কাবা ঘর সাময়িকভাবে স্থান ত্যাগ করেছে।

কে, কে সে? চীৎকার করে কেঁদে উঠলেন আদহাম (রঃ)।

আর তখন লাঠিতে ভর দিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছেন হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)। পবিত্র কাবা ঘরও ফিরে এসেছে আপন জায়গায়। হযরত আদহাম (রঃ) বললেন, পৃথিবীতে আপনি এক নজির স্থাপন করলেন। হযরত রাবেয়া (রঃ) বললেন, আপনি তো পথে নামাজ পড়তে পড়তে চৌদ্দ বছর লাগিয়ে দিলেন। আর আমি দিব্যি হেসে-খেলে এখানে এসে হাজির হয়েছি। নজির স্থাপন কে করল, আমি না আপনি?

আল্লাহর প্রিয়জনদের এ রহস্যময় সংলাপের অর্থ একমাত্র আল্লাহই জানেন।

আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাপসী রাবেয়া (রঃ)-এর প্রার্থনা, কোন ত্রুটি বিচ্যুতির কারণে আল্লাহ যদি তাঁর হজ্জ কবুল না করেন, তাহলে সেটি তাঁর পক্ষে চরম বিপদ স্বরূপ। সেই বিপদের পূণ্য অর্জনের সৌভাগ্য যেন তাঁর হয়।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন    

আরো পড়তে পারেন...

মুগীরা ইবন শু’বা (রা)

নাম আবু আবদিল্লাহ মুগীরা, পিতা শু’বা ইবন আবী আমের। আবু আবদিল্লাহ ছাড়াও আবু মুহাম্মাদ ও…

সাপের তওবা

একটি সাপের ঘটনা বর্ণনা করছি। আমার কাছে যারা তালীম গ্রহন করতে আসে প্রথমেই আমি কাউকে…

আবদুল্লাহ ইবন হুজাফাহ আস-সাহমী-(রা)

আবু হুজাফাহ আবদুল্লাহ নাম। পিতার নাম হুজাফাহ। কুরাইশ গোত্রের বনী সাহম শাখার সন্তান। ইসলামী দাওয়াতের…