হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ)- পর্ব ৮
হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ৭ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত যুনযুন (রঃ) এর এক শিষ্য কঠোর সাধনায় লিপ্ত হন। তিনি একাধারে চল্লিশ দিন করে চল্লিশ বার নির্জন ধ্যানে রত হন। হজ্জও আদায় করেন চল্লিশ বার। তাছাড়া একটানা চল্লিশ বার সারারাত এবাদতে মগ্ন ছিলেন। অথচ তিনি একদিন গুরুর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, তাঁর সাধনার কোন ফল ফললো না। আলাহ তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন না। তাঁর দিকে চোখ তুলেও তাকালেন না। বেলায়াতও দিলেন না। কোন গুপ্ত তত্ত্বও তাঁর কাছে প্রাকাশিত হল না। তিনি আরও বললেন, এসব কথা বলে তিনি তাঁর নিজের গুণকীর্তন করছেন, তা নয়। বরং তাঁর দীনতা আর কাতরতার কথাই নিবেদন করেছেন মাত্র। আর আল্লাহর নিন্দা করাও তাঁর উদ্দেশ্য নয়। তিনি এখনও কায়মনো-বাক্যে আল্লাহর কাছে আত্ননিবেদনে আগ্রহী। এবাদতে তাঁর হৃদয় শিথিল হয়ে আসছে, তাও তিনি বলতে চান না। তবে তাঁর আশংকা, হয়ত দিন ফুরিয়ে আসছে। এই ব্যররথতার মধ্য দিয়েই যদি জীবন শেষ হয়ে যায়, তাহলে তাঁর কী হবে। সারাজীবন শুধু আশা পোষণ করে কেটে গেল।
শিষ্যের অভিমানী অনুযোগ শুনে হযরত যুনযুন (রঃ) বললেন, আজ রাতে পেট পুরে খাও-দাও। আর এশার নামাজ আদায় না করে সারারাত ঘুমাও। তোমার বন্ধু যখন খুশী মনে দেখা দিলেন না, তখন হয়ত কঠোর রুপেই দেখা দেবেন।
শুরুর নির্দেশে তিনি তাই করলেন। এমনকি এশার নামাজ না পড়েই বিছানায় শুয়ে পড়লেন। কিন্তু স্বস্তি পেলেন না। অতএব নামাজ আদায় করলেন। তারপর আবার বিছানায় গেলেন। ঐ রাতেই তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) – কে স্বপ্নে দেখলেন। তিনি বলছেন, তোমার বন্ধু তোমাকে সালাম জানিয়ে বলেছেন, আমার দরবারে এসে যে ধৈর্যধারণ না করে বিরক্ত হয়, সে কাপুরুষ। আল্লাহর এবাদত বন্দেগীতে ধৈর্য অত্যন্ত জরূরী। তাতে বিরক্ত হওয়া চলে না। আল্লাহ আরও বলেছেন, তোমার চল্লিশ বছরের আশা পূর্ণ হবে। আল্লাহ তোমার প্রার্থি বস্তু দান করবেন। তবে ঐ ডাকাত যুনযুন (রঃ)-কে আমার সালাম জানিয়ে বলবে, সে মিথ্যুক। তাকে আমি শহরের বুকে অপমান করে ছাড়ব। তাহলে সে আর আমার প্রেমিক ও শরণাগত দাসদের সঙ্গে বঞ্জনা ও প্রতারণা করবে না। হযরত যুনযুন (রঃ)-এর শিষ্য জেগে উঠে কাঁদতে শুরু করলেন। আর মুরশিদের কাছে গিয়ে স্বপ্নের বৃত্তান্ত বললেন। হযরত যুনযুন (রঃ) যখন শুনলেন আল্লাহ তাঁকে সালাম জানিয়ে মিথ্যুক দরবেশ বলেছেন তখন তাঁর চোখ বেয়ে আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ল।
এখন প্রশ্ন, হযরত যুনযুন (রঃ) এর মতো একজন সিদ্ধ পুরুষ এশার নামাজ না পড়ে ঘুমিয়ে পড়ার পরামর্শ দিলেন কেন? এমন অসিদ্ধ সিদ্ধান্ত কি করে হয়?
এর উত্তর- যিনি প্রকৃত মুরশিদ, তিনি মূলত একজন চিকিৎসকের মতো। চিকিৎসকগণ প্রয়োজনে বিষকেও ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করেন। হযরত যুনযুন (রঃ) যখন বুঝতে পারলেন, ঐ ব্যবস্থা কার্যকর হতে পারে, কেবল তখনই তিনি ঐ রকম বিধান দেন। তিনি অবশ্য এও জানতেন যে, তার শিষ্য নামাজ আদায় না ক্রে পারবেন না। যেমন-আল্লাহ নবী হযরত ইব্রাহীম (আঃ) – কে তাঁর পুত্র কোরবানী করার নির্দেশ দেন। কিন্তু আল্লাহ জানতেন, পুত্র কোরবানী হবে না।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া