হযরত যায়িদ (রাঃ) -১৭পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অন্যদিকে, ইবন আব্বাস (রাঃ) ধারণা করেছিলেন মাতা এক-তৃতীয়াংশ পাবেন। আকরাম আবার জানতে চাইলেন, “এ ধরনের বণ্টন কুরআনে আছে নাকি আপনার নিজস্ব ইজতিহাদ?” যায়িদ (রাঃ) বললেন: “এ আমার ইজতিহাদ। আমি মাতাকে পিতার ওপর প্রাধান্য দিতে পারি না।”
খিলাফতের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ লিখিতভাবে ফাতওয়া চাইতে চিঠি পাঠাতেন। জায়িদ (রাঃ) লিখিতভাবে উত্তর দিতেন। একবার আমীর মু’য়াবিয়া (রাঃ) দাদার অংশ সম্পর্কে যায়িদের (রাঃ) ফাতওয়া জানতে চিঠি পাঠান। জায়িদ (রাঃ) জবাবে যে ফাতওয়া লিখিত দেন, তা ‘কানযুল উম্মাল’ গ্রন্থে বর্ণিত। সেই চিঠিতে তিনি খলীফা উমার (রাঃ) ও উসমানের (রাঃ) দাদার অংশ বণ্টনের নিয়মও উল্লেখ করেছেন।
হযরত যায়িদ (রাঃ) ফারায়েজ সংক্রান্ত নানা জিজ্ঞাসা বা মাসয়ালার সমাধান খলীফা উমারের (রাঃ) আমলে বিন্যস্ত করতেন। তাঁর বুদ্ধি ও বিচারশক্তিতে নতুন সমস্যার উদয় হলে তিনি তা সমাধান করতেন। পরবর্তী সময়ে এই সব সমাধান ফারায়েজ শাস্ত্রের অবিচ্ছিন্ন অংশে পরিণত হয়।
দাদার মীরাস সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত হযরত যায়িদ (রাঃ) নিয়েছিলেন, সাহাবাদের মধ্যে অনেকেই তার বিরোধিতা করেছিলেন, তবে জনগণের সমর্থন তাঁর পক্ষেই ছিল। ফারায়েজ শাস্ত্রে দাদার মীরাস একটি জটিল ও মতবিরোধপূর্ণ মাসয়ালা। হযরত যায়িদ (রাঃ) এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।
ইমাম বুখারী তাঁর ‘ফারায়েজ’ অধ্যায়ে দাদার মীরাস শীর্ষক একটি অনুচ্ছেদে এই মতবিরোধের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ইবন উমার, আলী, ইবন মাসউদ ও যায়িদ (রাঃ) এ বিষয়ে বিভিন্ন রকম মন্তব্য করেছেন।৮৯ তবে হযরত যায়িদ (রাঃ) জীবনের শেষ পর্যন্ত যে মতের প্রতি অটল ছিলেন—খলীফা উমার ও উসমান (রাঃ) সেটিকেই প্রয়োগযোগ্য মনে করা হয়।
ইসলামের ইতিহাসে হযরত উমার (রাঃ) সর্বপ্রথম দাদার অংশ গ্রহণের বিষয়ে উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। একবার তাঁর এক পৌত্র মারা গেলে উমার (রাঃ) নিজেকে তার সম্পত্তির অধিকারী মনে করতে থাকেন, যা লোকদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি করেছিল।
একদিন হযরত উমার (রাঃ) হযরত যায়িদ (রাঃ)-এর বাড়ীতে উপস্থিত হলে দেখতে পান, তিনি চিরুনী করছিলেন এবং দাসী তার চুল পরিপাটি করছিলেন। হযরত যায়িদ (রাঃ) খলীফাকে বললেন, “কষ্ট করে আসার কী প্রয়োজন ছিল, ডেকে পাঠালেই তো পারতেন।” খলীফা বললেন, “একটি মাসায়ালা সম্পর্কে পরামর্শ করতে এসেছি। যদি আপনার ওপর কোন বাধ্যবাধকতা নেই।”
যায়িদ (রাঃ) এই অবস্থায় মতামত প্রদানে সম্মতি জানালেন। পরবর্তী একদিন আবার খলীফা গিয়ে যাত্রা করেন এবং যায়িদ (রাঃ) লিখিতভাবে সিন্ধান্ত জানালেন। তিনি অংশ বন্টনের নির্দেশ শাজারার আকৃতিতে বিন্যাস করে প্রকাশ করলেন।
হযরত উমার (রাঃ) জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে ঘোষণা করলেন, “যায়িদ ইবন সাবিত এটি লিখে আমার কাছে পাঠিয়েছেন। আমি তা চালু করছি।”
হযরত যায়িদ (রাঃ) ইলমে ফারায়েজ গ্রন্থাবদ্ধ করেছেন এবং এর বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয়ে গবেষণা করে নতুন নতুন মাসায়ালা সৃষ্টি করেছেন। তবে এর মধ্যে তাঁর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উদ্ভাবন হলো “মাসায়ালা আওলে”।
কিছু লোক ধারণা করেন আওলের উদ্ভাবক হযরত আব্বাস (রাঃ)। কিন্তু এই ধারণা বর্ণনা ও যুক্তি উভয়ের পরিপন্থী।
হযরত যায়িদ (রাঃ) -১৯পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
 
					