হযরত যায়িদ (রাঃ) -১৭পর্ব

হযরত যায়িদ (রাঃ) -১৬পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ইসলাম পূর্ব আমলে মদীনায় গাছে ফল পরিপক্ক হওয়ার আগেই বিক্রির প্রথা ছিল। যখন ক্রেতার লোকসান হতো, তখন দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ শুরু হতো। রাসূল (সাঃ) মদীনায় এসে এ অবস্থা দেখে এ ধরনের কেনাবেচা করতে নিষেধ করেন।

ফিকাহর অন্যান্য সকল অধ্যায়ের চেয়ে ফারায়েজের অধ্যায়ে হযরত যায়িদ (রাঃ) ছিলেন বিশেষ পারদর্শী। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) একটি হাদীসে এসেছে:৮২ “আমার উম্মতের সবচেয়ে বড় ফারায়েজ শাস্ত্রে ফরজ বিশেষজ্ঞ যায়িদ ইবন সাবিত।”

রাসূলুল্লাহর (সাঃ) এই বানী থেকে বোঝা যায়, তিনি ফারায়েজ শাস্ত্রে কত গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। সাহাবায়ে কিরামও এ শাস্ত্রে তাঁর পণ্ডিত্য স্বীকার করতেন। খলীফা উমার (রাঃ) তাঁর জাবীয়ার ঐতিহাসিক ভাষণে অগণিত শ্রোতার সামনে ঘোষণা করেনঃ **”ফারায়েজ সম্পর্কেঃ কারো কিছু জিজ্ঞাসার থাকলে সে যেন যায়িদ ইবন সাবিতের নিকট যায়।”

তৎকালীন লোকেরা বলতো, “যায়িদ ফারায়েজ ও কুরআনে অন্যদের অতিক্রম করে গেছেন।”

ফারায়েজ শাস্ত্রটি যথেষ্ট জটিল। কুরআনে এ শাস্ত্রের সকল গুরুত্বপূর্ণ মাসায়ালা সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে। এর বিস্তৃত ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ রাসূলুল্লাহর (সাঃ) বানী, কর্ম এবং সাহাবায়ে কিরামের ফাতওয়া ও বিচারাচার থেকে গ্রহণ করা হয়। কুরআনে মীরাস ও অর্পিত সম্পদের বিষয়ে যা কিছু এসেছে, তা অতি সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে। এতে স্বামী–স্ত্রী, পুত্র–কন্যা, মাতা, পিতা, ভ্রাতা–ভগ্নি ইত্যাদি ধরনের উত্তরাধিকারীদের নির্দিষ্ট অংশ ঘোষণা করা হয়েছে। যে ব্যক্তি এ সীমা লংঘন করবে, সে মূলত নিজের ওপর অত্যাচারী হবে।

হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিচারফয়সালার মাধ্যমে ফারায়েজ সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত বিধানগুলোর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর ইনতিকালের পর হযরত জায়িদ (রাঃ) এই শাস্ত্রে এত উন্নতি সাধন করেন যে, তাঁর পরেই এ বিষয়ে গ্রন্থ রচিত হয় এবং বিষয়টি একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্রে পরিণত হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) সহ উঁচু মর্যাদার অনেক সাহাবী যায়িদের (রাঃ) নিকট ফারায়েজ সংক্রান্ত মাসায়েলার সমাধান জানতে চাইতেন।

যমামার নিহত অধিবাসীদের ব্যাপারে হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত যায়িদের (রাঃ) ফাতওয়া অনুযায়ী ফয়সালা করেছিলেন। অর্থাৎ, যারা বেঁচে ছিলেন, তাদেরই মৃতদের ওয়ারিস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল; মৃতদের মধ্যে পরস্পরের মধ্যে ওয়ারিস নির্ধারণ করা হয়নি।

আমওয়াসের তা’উন মহামারীর সময় যখন গোত্র থেকে গোত্র মৃত্যু ঘটে, তখন খলীফা উমার (রাঃ) যায়িদের (রাঃ) প্রদত্ত মতের ওপর ভিত্তি করে সমাধান দেন। এমনকি হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ), যাঁকে উম্মতের তত্ত্বজ্ঞ ও জ্ঞানের সাগর বলা হয়, তিনিও যায়িদের (রাঃ) সমাধানকে নিশ্চয়তা হিসেবে গ্রহণ করতেন।

একদিন একজন ছাত্র আকরামকে বলা হলো, “যায়িদকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করে এসো, একজন ব্যক্তি স্ত্রী, মাতা ও পিতা রেখে মারা গেলে তার মীরাস কিভাবে বণ্টিত হবে?”

যায়িদ (রাঃ) উত্তর দিলেন: “স্ত্রী পাবে অর্ধেক এবং বাকী অর্ধেকের এক-তৃতীয়াংশ মাতা পাবেন, বাকি যা থাকবে তা পিতার হবে।”

হযরত যায়িদ (রাঃ) -১৮পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!