হযরত যায়িদ (রাঃ) -১৫পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ফকীহ সাহাবীদের তিনটি তাবকা বা স্তর ছিল। এর প্রথম তাবকায় ছিলেন হযরত যায়িদ (রাঃ)। তিনি জীবনে বিপুল পরিমাণ ফাতওয়া দিয়েছেন। সবগুলো একত্রে সংগ্রহ করা হলে বিরাট আকারে একটি বই হবে।
হযরত যায়িদের (রাঃ) ফিকাহ তাঁর জীবনকালে জনগণের নিকট ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছিল। হযরত সা’ঈদ ইবন মুসায়্যাব বলতেন, যায়িদ ইবন সাবিতের এমন কোন কথা নেই যার ওপর মানুষ সর্বসম্মতভাবে আমল করেনি। সাহাবাদের মধ্যে বহু ব্যক্তি এমন ছিলেন, যাঁদের কথার ওপর কেউই আমল করেননি। কিন্তু হযরত যায়িদের (রাঃ) ফাতওয়ার ওপর তাঁর জীবনকালেই পূর্ব ও পশ্চিমের সকল মানুষ আমল করেছে।
মানুষের ধারণা, ফিকহ শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ ও প্রসারের নিমিত্ত হয়েছেন চারজন সাহাবী ব্যক্তিত্ব—যায়িদ ইবন সাবিত, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবন উমার ও আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ)। তাঁদের শিষ্য ও ছাত্রদের মাধ্যমে গোটা মুসলিম জাহানে ইলমে দীন প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু মদীনা ছিল ইসলামের উৎস ও নবীর (সা) আবাসস্থল। এ ঘটনা যায়িদ ও তাঁর ছাত্রদের বদৌলতে জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে।
ফকীহ সাহাবীদের দুটি মজলিস ছিল। একটির সভাপতি ছিলেন হযরত উমার (রাঃ) আর অন্যটির হযরত আলী (রাঃ)। হযরত যায়িদ (রাঃ) ছিলেন উমারের (রাঃ) মজলিসের সদস্য। এখানে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হতো এবং জটিল ও গুরুত্বপূর্ন মাসয়ালা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গৃহীত হতো।
যে সকল বিষয় এখনো বাস্তবে ঘটেনি, সে সম্পর্কে কোন প্রশ্নের জবাব তিনি দিতেন না। খারেজা ইবন জায়িদ বর্ণনা করেন—কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, “এটা কি ঘটেছে, না ঘটেনি?” এ রকম প্রশ্নে তিনি কোন মতামত দিতেন না। বিষয়টি যদি বাস্তবে না ঘটতো, তাহলে সে সম্পর্কে কিছুই বলতেন না। আর ঘটলে বলতেন।
হযরত জায়িদ (রাঃ) সাধারণত সব সময়ে জ্ঞান বিতরণে নিয়োজিত থাকতেন। তা সত্বেও সর্বসাধারণের সুবিধার জন্য মসজিদে নববীতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফাতওয়া ও মাসায়ালার জবাব দিতে বসতেন।
হযরত জায়িদের (রাঃ) মাসায়ালাসমূহ ফিকাহর সকল অধ্যায়ে পরিব্যাপ্ত ছিল। এর বিস্তারিত আলোচনা সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্ভব নয়। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি মাসায়ালা তুলে ধরা হলো।
১. তিনি বলেছেন, ফরজ নামায ছাড়া অন্য নামায ঘরে আদায় করা উত্তম। তিনি বলেছেন, কাড়ী বা পুরুষের সামায আদায় একটি নূর বা জ্যোতির বিশেষ। পুরুষ যখন ঘরে নামাযে দাঁড়ায়, তখন তার পাপসমূহ মাথার ওপর ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। একটি সিজদা দেওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তার পাপ মুছে দেন।
২. এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলো, জুহর ও আসরে কি কিরাআত আছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। রাসূল (সা) দীর্ঘ সময় ধরে এ দুটি নামাযে কিয়াম (দাড়িয়ে থাকা) করতেন এবং এ সময় তাঁর ঠোঁট ও নাড়াচাড়া করতো। এর অর্থ এই নয় যে, ইমামের পিছনে মুকতাদি কিরাআত করবে। মূলতঃ প্রশ্নটি ছিল ইমামের সম্পর্কে, মুকতাদি সম্পর্কে নয়। প্রশ্নের উদ্দেশ্য হলো জুহর ও আসর নামাযে কি কিছু পড়া হয়। যায়িদ ইবন সাবিত, আবু কাতাদাহ ও সা’দ ইবন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে যে সব বর্ণনা এসেছে, তা দ্বারা প্রমাণিত হয় না যে সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সা) পিছনে কিরাআত করেছেন।
৩. কোন ব্যক্তি যদি নিজের বাসগৃহে জীবনকাল পর্যন্ত কাউকে থাকার জন্য দান করে, তাহলে তার মৃত্যুর পর তার ছেলেরা তার ওয়ারিস হবে। হযরত যায়িদের বর্ণনায় এর বিবরণ এসেছে। তিনি বলেছেনঃ
৪. হযরত যায়িদের মতে, যতদিন পর্যন্ত বাগানে ফল ভালোভাবে না আসে অথবা গাছে খেজুর পরিপক্ক না হয়, ততদিন তা আন্দাজে বেচাকেনা নাযায়েজ।
হযরত যায়িদ (রাঃ) -১৭পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।