হযরত যায়িদ (রাঃ) -১৫পর্ব

হযরত যায়িদ (রাঃ) -১৪পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ফিকাহ্ শাস্ত্রে হযরত জায়িদ (রাঃ) দারুণ পারদর্শী ছিলেন। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) জীবদ্দশায় তিনি ইফতার আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। সাহল ইবন আবী খায়সামা বলেনঃ রাসূলুল্লাহর (সাঃ) জীবদ্দশায় মুহাজিরদের তিনজন এবং আনসারদের তিনজন ফাতওয়া দিতেন। আনসারদের সেই তিনজনের একজন হলেন যায়িদ ইবন সাবিত (রাঃ)।

ইমাম শা’বী ও প্রখ্যাত তাবে’ঈ মাসরুকও একই ধরনের কথা বর্ণনা করেছেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) ও উমারের (রাঃ) খিলাফতের সময়ও তিনি মদীনায় ইফতার আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, হিজরী ৪৫ সন পর্যন্ত তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, যেমন ইবন সা’দ বর্ণনা করেছেন।

খলীফা আবু বকর (রাঃ) কোন জটিল সমস্যার সম্মুখীন হলে কতিপয় চিন্তাশীল ও ফিকাহবিদ আনসার ও মুহাজির সাহাবীর সাথে পরামর্শ করতেন। তাঁদের মধ্যে যায়িদ ইবন সাবিতও একজন ছিলেন। এভাবেই তিনি আবু বকর, উমার ও উসমান (রাঃ)-এর যুগে ফাতওয়া প্রদান করতেন।

কাবীস ইবন জুওয়াইব বর্ণনা করেছেন যে, উমার, উসমান, আলী (রাঃ)-এর আমলে, এমনকি হিজরী ৪০ সনে মু’য়াবিয়ার (রাঃ)-এর খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর হিজরী ৪৫ সনে মৃত্যু পর্যন্ত, যায়িদ (রাঃ) মদীনার বিচার ও ফাতওয়া, কিরাআত ও ফারায়েজ শাস্ত্রের প্রধান ছিলেন।

তার যোগ্যতার পূর্ণ স্বীকৃতি খলীফা উমার (রাঃ) দিয়েছেন। তিনি যায়িদকে (রাঃ) এত গুরুত্ব দিতেন যে, তাঁকে মদীনার বাইরে কোথাও যাওয়ার অনুমতি দিতেন না। মদীনার বাইরে বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হতো এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী সম্পাদনের জন্য উপযুক্ত লোকের প্রয়োজন দেখা দিত। এ কারণে খলীফার নিকট বিভিন্ন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করা হতো। তিনি তাঁদের মধ্যে কাউকে মনোনীত করতেন। কিন্তু যায়িদের নামটি প্রস্তাব করা হলে তিনি বলতেনঃ

“যায়িদ আমার হিসাবের বাইরে নেই। কিন্তু আমি কি করবো? মদীনাবাসী তাঁর মুখাপেক্ষী বেশি, কারণ তাঁর কাছে যা পারে, অন্যদের কাছে তা তারা পারে না।”

হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) বলতেন, যায়িদ ছিলেন ফারুকী খিলাফতের একজন বড় আলীম। উমার (রাঃ) সকল মানুষকে নানা দেশে ও শহরে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ফাতওয়া ও সিন্ধান্ত দানের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। কিন্তু যায়িদ মদীনায় বসে মদীনাবাসী এবং সেখানে আগত লোকদের নিকট ফাতওয়া দিতেন।

সুলায়মান ইবন ইয়াসার বলেন, ফাতওয়া, ফারায়েজ ও কিরাআতে উমার ও উসমান (রাঃ) যায়িদের (রাঃ) ওপর কাউকে প্রাধান্য দিতেন না।

প্রখ্যাত তাবেঈ হযরত সা’ঈদ ইবন মুসায়্যাব একজন মস্তবড় মুজতাহিদ হওয়া সত্বেও ফাতওয়া বিচারে হযরত যায়িদের (রাঃ) অনুসারী ছিলেন। তাঁর সামনে যখন কোন মাসয়ালা বা প্রশ্ন আসতো এবং মানুষ অন্যান্য সাহাবীর ইজতিহাদসমূহ বর্ণনা করতো, তখন তিনি তাদেরকে প্রশ্ন করতেন, “এ ব্যাপারে যায়িদ কি বলেছেন?” বিচার ফয়সালায় যায়িদ ছিলেন সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী। আর যে সকল বিষয়ে কোন হাদীস পাওয়া যেত না, সে সম্পর্কে মত প্রদান এবং দানের ব্যাপারে তিনি ছিলেন সবচেয়ে অন্তদৃষ্টির অধিকারী। তাঁর কোন কথা থাকলে তাই বলতেন।

ইমাম মালিক (রহ) ছিলেন মদীনার ইমাম। আজও তিনি ফিকাহ ও হাদীস শাস্ত্রে অগণিত মানুষের ইমাম। তিনি বলতেন, উমার (রাঃ) পরে যায়িদ ইবন সাবিত ছিলেন মদীনার ইমাম। ইমাম শাফেঈও (রহ) ফারায়েজ শাস্ত্রের সকল মাসয়ালা হযরত যায়িদের তাকলীদ করেছেন।

হযরত যায়িদ (রাঃ) -১৬পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!