রাসূলুল্লাহর (সাঃ) অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহাবী হযরত যায়িদ (রাঃ) এর বেশ কয়েকটি উপনাম বা ডাকনাম সীরাত গ্রন্থসূমহে পাওয়া যায়। যেমনঃ আবু সাঈদ, আবু খারিজা, আবু আবদির রহমান ও আবু সাবিত। মুসলিম উম্মাহ তাকে অনেকগুলি উপধিতে ভূষিত করেছে। যেমনঃ হাবরুল উম্মাহ, কাতিুবুল ওহী ইত্যাদি। মদীনার বিখ্যাত খাযরাজ গোত্রের নাজ্জার শাখার সন্তান। পিতা সাবিত ইবন দাহহাক এবং মাতা নাওয়ার বিনতু মালিক। নাওয়ার ছিলেন প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আনাস ইবন মালিকের (রাঃ) খান্দানের মেয়ে।
রাসূলুল্লাহর (সাঃ) মদীনায় আসার পূর্বে মদীনার অধিবাসীদের পরস্পরের মধ্যে যে সব রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও সংঘর্ষ হয় তার মধ্যে বুয়াস যুদ্ধটি সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। এ যুদ্ধে যায়িদের পিতা সাবিত নিহত হন। এটা হিজরতের পাঁচ বছর পূর্বের ঘটনা। তখন যায়িদের বয়স মাত্র ছয় বছর। তিনি মায়ের তত্ত্বাধানে বড় হন। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) মদীনায় হিযরতের সময় যায়িদ এগারো বছরের এক বালক মাত্র।
তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন মদীনায় ইসলামের ভিত্তি খুব একটা মজবুত হয়নি। মক্কা থেকে হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ) প্রেরিত সুবাল্লিগ হযরত মুসয়াব ইবন উমাইর (রাঃ) যখন মদিনায় ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চলেছেন তখন কোন এক সময়ে আতি অল্প বয়সে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। বালেগ হওয়ার পূর্বে ঈমান আনা যাদি কোন গৌরবের বিষয় হয় তাহলে হযরত যায়িদ সেই গৌরবের বিষয় হয় তাহলে হযরত যায়িদ সেই গৌরবের অধিকারী। জীবনের সূচনা থেকেই এভাবে তিনি শিরকের পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি থাকেন।
তিনি ইসলাম গ্রহনের পর থেকেই কুরআন পড়তে শুরু করলেন। মানুষ ও তাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো। তিনি ছিলেন প্রচন্ড মেধাবী ও তীক্ষ্ণ মেধাশক্তির শক্তির অধিকারী। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) বরাবর নিয়ে গেল এবং এই বলে পরিচয় করে দিল যে, ছেলেটি নাজ্জার গোত্রের। এরই মধ্যে সে সতেরটি সূরার পাঠ শেষ করেছে। রাসূল (সাঃ) তাঁর মুখ থেকে কুরআন তিলওয়াত শুনে খুব খুশি হলেন। যায়িদ বলেনঃ তখন আমার বয়স মাত্র এগারো বছর। বদর যুদ্ধের সময় তিনি তের বছরের এক বালক মাত্র। যুদ্ধে যাওয়ার বয়স তখনো হয়নি। তবুও আনসার ও মুহাজিরগণ যখন বদরের দিকে যাত্রা করলেন তখন এ বালকও যুদ্ধে যাওয়ার সিন্ধান্ত নিলেন। তাঁরই মত ছোটদের একটি দলের সাথে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সামনে উপস্থিত হয়ে যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। যুদ্ধের বয়স না হওয়ার কারনে রাসূল (সাঃ) তাদেরকে সান্তনা দিয়ে ফিরিয়ে দেন।
হযরত যায়িদ সর্ব প্রথম কোন যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন সে বিষয়ে সীরাত বিশেষজ্ঞ মতভেদ আছে। অনেকের ধারণা তিনি উহুদে যোগদান করেন। এটাই তাঁর বয়স ষোল পূর্ণ হয়ে গেছে। আবার অনেকে বলেছেন, খন্দক তাঁর জীবনের প্রথম যুদ্ধ। আল ওয়াকিদী বর্ণনা করেছেন, যায়িদ ইবন সাবিত বলেনঃ আমাকে বদর ও উহুদে অংশ গ্রহনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। খন্দকে প্রথম অনুমতি পাই। ইবন হিশামও বলেন, তাঁর বয়স কম হওয়ায় রাসূল (সাঃ) অন্যদের সাথে তাঁকেও উহুদে ফিরিয়ে দেন।
হায়াতুস সাহাবা গ্রন্থে যায়িদ ইবন সাবিতের একটি বর্ণনা সংকলিত হয়েছে। তদ্বারা বুঝা যায়, তিনি উহুদে অংশ গ্রহন করেছিলেন। তিনি বলেনঃ উহুদের দিন যুদ্ধ শেষে রাসূল (সাঃ) আমাকে সা’দ ইবনুর রাবীকে খুঁজতে পাঠালেন। যাবার সময় বলে দিলেনঃ যাদি তাঁকে পাও আমার সালাম জানাবে। আর তাকে বলবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জানতে চেয়েছেন, তুমি নিজেকে কেমন দেখতে পাচ্ছো?
যায়িদ বলেনঃ আমি শহীদদের মাঝে ঘুরে ঘুরে তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। এক সময় পেয়ে গেলাম। তখন তাঁর অন্তিম মুহূর্ত। সারা দেহে তাঁর তীর, বর্শ ও তারবারির সত্তরটি আঘাত। বললামঃ সা’দ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রতি সালাম এবং তোমার প্রতিও। তুমি বলবে, আমি জান্নাতের খোশবু লাভ করছি।
হযরত যায়িদ (রাঃ) -২পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।