হযরত যাকারিয়া (আঃ) – পর্ব ২
মরিয়ম আল্লাহর নামে উৎসর্গকৃত তদুপরি তাদের ইমাম সাহেবের কন্যা। তাই মসজিদের সাথে সম্পর্কিত মুজাহিদ ও ইবাদতকারীরা সকলেই তাঁর লালন পালন ও পরিচর্যার দায়িত্ব গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করল। হযরত যাকারিয়া (আঃ) ছিলেন মরিয়মের খালু। তাই হযরত যাকারিয়া (আঃ) নিজেকে সর্বাপেক্ষা বেশী হকদার বলে দাবী করলেন। তিনি যুক্তি প্রদর্শন করলেন যে, তাঁর স্ত্রী মরিয়মের আপন খালা, খালা মায়ের সমতুল্য। সুতরাং খালার কাছে থাকলেই তাঁর লালন পালন ও পরিচর্যা সুষ্ট হবে। কিন্তু অন্যান্য লোকেরা তাঁর এ দাবী প্রত্যাখ্যান করল। অবশেষে সিদ্ধান্ত হল যে, তাঁরা এ ব্যাপারে লটারী প্রদান করবে। লটারীতে যে বিজয়ী হবে সে মরিয়মের লালন পালনের দায়িত্ব লাভ করবে। তাদের মধ্যে সিদ্ধান্ত হল যে, তারা নদীর মধ্যে স্ব স্ব কলম নিক্ষেপ করবে। যার কলমে স্রোতের বিপরীত দিকে চলবে সে মরিয়মের অভিভাবক নির্ধারিত হবে। পবিত্র কোরআনে তাদের এ লটারীর কথা উক্ত হয়েছে-
وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يُلْقُونَ أَقْلَامَهُمْ أَيُّهُمْ يَكْفُلُ مَرْيَمَ
অর্থঃ এবং আপনি তাদের কাছে ছিলেন না যখন তারা নিজেদের কুলমগুলো নিক্ষেপ করেছিল যে, তাদের মধ্যে কে মরিয়মকে লালন-পালনের ভার গ্রহণ করবে। (সূরা আল-ইমরান)
দেখা গেল যে, নিক্ষিপ্ত কলমগুলোর মধ্যে হযরত যাকারিয়া (আঃ)-এর কলম স্রোতের বিপরীত দিকে ধাবিত হচ্ছে। লটারিতে বিজয়ী হওয়ার শর্ত মোতাবেক মরিয়ম তাঁর পরিচর্যাধীন হয়ে পড়ল। কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, তিনি মরিয়মের জন্য এক ধাত্রী রেখে তাকে দুগ্ধ পান করানোর ব্যবস্থা করেন। কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, মরিয়মের দুগ্ধপান করার প্রয়োজন হয়নি। আপনা হতে তিনি বেড়ে উঠেছেন। মসজিদ সংলগ্ন একটি উত্তম কক্ষে তার বসবাসের ব্যবস্থা করে দিলেন। তিনি অন্যত্র কোথাও গেলে কক্ষে তালা লাগিয়ে যেতেন। আবার যখন ফিরে আসতেন তখন তালা খুলে দিতেন। এভাবেই মরিয়ম বড় হতে থাকলেন। তিনি এ কক্ষেই ইবাদতে লিপ্ত থাকতেন। একদা হযরত যাকারিয়া (আঃ) মরিয়মের কামরায় প্রবেশ করে দেখলেন যে, মরিয়মের নিকট এমন কিছু ফল রয়েছে যা এ মৌসুমে কোথাও পাওয়ার সম্ভাবনা নেই- তা কি করে
মরিয়মের এখানে আসল। তাই তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে মরিয়ম! এ ফল তুমি কোথায় পেলে। এ তো বর্তমানে কোথায়ও পাওয়া যায় না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-
كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزْقًا ۖ قَالَ يَا مَرْيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَـٰذَا
অর্থঃ যাকারিয়া যখন মরিয়মের কক্ষে প্রবেশ করলেন তখন মরিয়মের কাছে কিছু খাদ্য দেখতে পেয়ে বললেন-হে মরিয়ম তোমার জন্য এটা কোথা থেকে এসেছে। (সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-৩৭ অংশ বিশেষ)
তখন মরিয়ম জবাবে বলেন যে-
قَالَتْ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ ۖ إِنَّ اللَّهَ يَرْزُقُ مَن يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
অর্থঃ এটা আল্লাহর তরফ থেকে পেয়েছি। নিঃসন্দেহে আল্লাহ যাকে চান তাকে তার ধারণার বাইরে রিজিক প্রদান করেন। (সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-৩৭)