মাঝির গল্প

সত্যব্রত মাঝি। মাঝির পুরো নাম। সবার কাছে ও মাঝি বা মাঝিদা এসব নামেই পরিচিত। আজ উইক এন্ড। ও দেরী করে ঘুম থেকে ওঠেনা। জীবন টা শুরু করেছিল চাটারড ফার্মে কাজ দিয়ে। অনেক জাগায় ঘুরতে হয়েছে। ধরতে হয়েছে ভোরের ট্রেন। তাই সকালে ওঠা ওর বরাবরের অভ্যেস। আজ ও সকাল সকাল উঠে পড়েছে। আট টার মধ্যে স্নান ও সারা। কিন্তু সকাল থেকেই ওর কাল রাতের অভিজ্ঞতা টা মন থেকে যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে ও কি কাল স্বপ্ন দেখেছিল। নাহঃ। বিশুর সাথে এটা আলোচনা করতে হবে। বিশু ও তো গান বাজনা শোনে। আর কাল রাতের ঐ ব্রাম্মণ শুদ্র নিয়ে যখন ওর সাথে রাতে তর্ক হচ্ছিল, তখন ত ঐ এই সাম বিন গানটা শুনতে বলেছিল। “সাম ভয়ে বিন শ্যাম সখিরি মোরা সুনা লাগে ধাম সাম ভয়ে বিন শ্যাম।“ মাত্র চারটে লাইন।

মধ্য রাতে উস্তাদ গাইছেন। কখন “সখিরি মোরা” এই কথাটাই বলা শেষ হচ্ছে না। কখন “সুনা লাগে” বলে যেন চতুর্দিক সুন সান করে দিচ্ছেন। কখন “সাম ভয়ে” তে লাগাচ্ছেন তান আবার অপেক্ষা কিছু। যেন বিখ্যাত কোন ফুটবলার বল নিয়ে তীব্র গতিতে ছুটতে ছুটতে হটাত থেমে ঘুরে গেলেন আর পরক্ষনেই আবার অন্য দিকে চলে গেলেন। যেমন করে পাহাড়ি নদী পাথরের বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত পার হতে হতে সমতল ভূমির দিন আনি দিন খাই এর সাক্ষী হতে হতে অবশেষে সমুদ্র বুকে মিশে যায়, উস্তাদের ঠুমরী ও যেন নদীর মত সুরের আনাচ কানাচ ঘুরে ঘুরে আবহমান কালের খেয়া তরী বয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোন আরও বড় সুরমন্ডলীতে মিশে যাবে বলে।

রাত যে কখন বেড়ে চলছে। কে জানে। কোন খেয়াল নেই। ও খালি ভাবছে, উস্তাদের এই গান চলছে আর ও কে নিয়ে যাচ্ছে এক অজানা অচেনা অভিজ্ঞতার মধ্যে। উস্তাদ যেন তাকে নিয়ে খেলায় মেতেছে। কে শ্যাম! কোথায় সখি। এসব কখন মাথাতেই আসেনা। রাত্রি দিন হিসেব নিয়ে থাকে ও। ডেবিট। ক্রেডিট। কিন্তু আজ এত রাতে ওর যে কি হচ্ছে। মাটিতে কি গড়িয়ে যাবে। কিসের এত সুনা। কিসের ধাম। মিশ্র পিলু রাগ, আদ্ধা তাল, সখি, সাম এসব অবান্তর হয়ে গিয়ে উস্তাদ যেন তার জন্য বার বার তাকে ছুটিয়ে বেড়াচ্ছে। “সুনা লাগে ধাম।“ এই কথাটায় এসে উস্তাদ যেন ১০০ মিটার দৌড়ে জেতার তৃপ্তি নিয়ে দর্শকের দিকে এগিয়ে এসেছেন। থেমেছেন। যেন তার জন্য তার ই দিকে তাকিয়ে আছেন। সামান্য একটা ঠুমরী।

সেটা এরকম রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে। শুনতে শুনতে কি করব ভেবে পাবেনা। গায়কীর গমকে কিছু কথা কখন বুকের মধ্যে ঢুকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে। সংসার সন্ন্যাসীর মত সব কিছু থেকেও চারপাশ একাকী করে দিয়েছে। ভাবসাগর কি একেই বলে। মাঝি পথ চলতে থাকল ভাবতে ভাবতে।

আরো পড়তে পারেন...

সুবর্ণগোলক—-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

কৈলাসশিখরে, নবমুকুলশোভিত দেবদারুতলায় শার্দ্দুলচর্ম্মাসনে বসিয়া হরপার্ব্বতী পাশা খেলিতেছিলেন। বাজি একটি স্বর্ণগোলক। মহাদেবের খেলায় দোষ এই-আড়ি…

বসন্ত এবং বিরহ—-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

রামী। সখি, ঋতুরাজ বসন্ত আসিয়া ধরাতলে উদয় হইয়াছেন। আইস, আমরা বসন্ত বর্ণনা করি। বিশেষ আমরা…

গর্দ্দভ– বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

হে গর্দ্দভ! আমার প্রদত্ত, এই নবীন সকল ভোজন করুন।১ , আমি বহুযত্নে, গোবৎসাদির অগম্য প্রান্তর…