হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বেলাদত শরীফ

মাতা আমেনা বলেন, গর্ভের নয় মাস পূর্ণ হওয়ার পর প্রসব ব্যথা আরম্ভ হল। আমি দেখতে পেলাম আকাশের তারকারাজি এত নিকটবর্তী হয়েছে মনে হয় যেন আমার মাথার উপর ছুটে পড়বে। কিছুক্ষণ পরেই বহু প্রতীক্ষিত নূর রাসূল (সাঃ) ধরনী কোলে পদার্পণ করেন। অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে আবরাহা বাদশাহের হস্তী-বাহিনী ধ্বংস হওয়ার পঞ্চাশ দিন পরে এবং আদম (আঃ) এর ছর হাজার একশত তের বছর পরে রবিউল আউয়াল চাঁদের বার তারিখ সোমবার মোতাবেক ২৯ আগষ্ট ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে ছোবহে-ছাদেকের সময় দোজাহানের সর্দার মাতৃগর্ভ হতে ধরনী ধূলায় আগমন করেন।

শাহ আবদুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী (র) মাদারেছুন নবুয়াতে উল্লেখ করেন, রাসূল (সাঃ) স্বাভাবিক নিয়মেই জন্ম গ্রহণ করেন। মাতা আমেনার নেফাস হয়নি। শরীর নাপাক হয়নি। তিনি নাভী কাটা ও খতনা করা অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করেন। জন্ম হয়েই সেজদায় পড়েন।

মাতা আমেনা হতে বর্ণিত আছে যে, মহানবী (সাঃ) ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে একটি নূর আমার দেহ হতে বের হয়ে গেল। যার প্রখর জ্যোতি সারা ঘর আলোকিত করে ফেলল এবং সে নূর আকাশের দিকে উচ্ছসিত হল। মাশরেক ও মাগরেব সব আলোকিত হয়ে গেল। যার আলোতে আমি শাম, বসরা ও রোমের রাজ প্রাসাদ দেখতে পাই।

ফাতেমা বিনতে আবদুল্লাহ বর্ণনা করেন, মহানবী (সাঃ) ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় খানায়ে কাবাকে নূরে পরিপূর্ণ দেখতে পেলাম এবং আকাশের তারকারাজি জমিনের খুব নিকটবর্তী হয়ে যায়। হযরত আবদুর রহমান বিন আউফের মাতা বর্ণনা করেন, আমি সে রাত্রে এমন একটি নূর দেখতে পাই যার আলোতে মাশরেক ও মাগরেব আলোকিত হয়ে গিয়েছে। হাদিস শরীফে আরো বর্ণিত আছে যে, সে রাতে কাবার মূর্তিগুলো মাথা নিচু করে জমিনে পড়ে গিয়েছে। মারাত্মক ভূমিকম্প হয়ে পারস্যের বাদশাহ নওশেরওয়ার রাজপ্রাসাদের চৌদ্দটি চুড়া ভেঙ্গে পড়েছে এবং তাদের এক হাজার বছর যাবত প্রজ্জলিত অগ্নিকুণ্ড নির্বাপিত হয়ে গিয়েছে। মক্কার ইহুদীগণ দেখতে পেল হযরত ইয়াহইয়ার যে কম্বলটি তাদের নিকট সুরক্ষিত ছিল তা সম্পূর্ণ তাজা রক্তে রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছে। তারা দৌড়ায়ে কুরাইশগণের নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করল, আজ রাতে তোমাদের মধ্যে কোন সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ। আবদুল্লাহর ঘরে একটি সন্তান জন্ম নিয়েছে। তারা সেখানে গিয়ে ঐ সন্তানের মধ্যে নবুয়তের মোহর দেখতে পেয়ে বলল, আজ হতে নবুয়ত বনী ইসরাইল হতে চির বিদায় নিয়েছে। হযরত ইয়াহইয়ার কম্বলটি রক্তাক্ত হওয়া ছিল তার লক্ষণ।

মোটকথা সৃষ্টির সেরা পেয়ারা রাসূল (সাঃ) ধরণীতে আবির্ভূত হলেন। যার অপেক্ষায় যুগ যুগান্তর হতে সারা বিশ্ব প্রতীক্ষা করতেছিল। তাঁর আগমনে সৃষ্টির স্তরে স্তরে উঠল আনন্দের হিল্লোল। ধন্য হল ধরনী, যার কারণে ও যার নূরে আসমান জমিন কুল মাখলুকাত সৃষ্টি। আজ তিনি আসলেন। তাই তাঁকে কুল মাখলুকাত জানায় লক্ষ কোটি সালাম। জানাল তাঁকে মনভরা অভিনন্দন। আকাশের তারকারাজি, চন্দ্র-সুর্য, ফেরেশতাকুল, জান্নাতের হুর ও গেলমান জান্নাতী রমনী আছিয়া, মরিয়ম এবং পৃথিবীর কুল সৃষ্টি জানাল তাঁকে অশেষ মোবারকবাদ, ভাষাহীন পশু, প্রাণহীন পাথরের কন্ঠেও সেদিন ভাষা ফুটল।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।