হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের পূর্বে জমজম কূপের পুনঃখনন-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আবদুল মুত্তালিব নিরুপায় হয়ে পুত্র হারেছকে নিয়েই সেই কূপ খনন করতে লাগলেন। যখন দৃঢ় মনোবলে আল্লাহ পাকের উপর ভরসা রেখে তাঁর আদেশ পালনে ব্রতী হলেন, তখন গায়েবী সাহায্য তাঁর সহায় হয়ে গেল। পিতা-পুত্রের যৌথ প্রচেষ্টায় কিছু মাটি খনন করার পরই তারা সেই সব অস্ত্র ও স্বর্ণের হরিণী দেখতে পেলেন, যা পূর্বে কূপে পুতে রাখা হয়েছিল। এতে তাঁর অন্তরে আশার সঞ্চার হল এবং অল্প সময়ের মধ্যেই জমজমের পানি দ্রুতগতিতে উপরের দিকে উঠতে লাগল। এভাবে তিনি জমজম কূপের পুনরুদ্ধারের সৌভাগ্য অর্জন করলেন।
আবদুল মুত্তালিব অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করলেন। এ ঘটনায় তাঁর সম্মান বহুগুণে বৃদ্ধি পেল এবং কিয়ামত পর্যন্ত সারা বিশ্বের মানবজাতির নিকট তিনি এক অক্ষয় গৌরবের অধিকারী হয়ে গেলেন।
এরপর আল্লাহ পাক আবদুল মুত্তালিবকে একে একে দশটি পুত্রসন্তান দান করলেন। তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন আবদুল্লাহ (রাঃ), যার মাঝে ছিল নূরে মোহাম্মদীর ঝলক। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সুপুরুষ, সৎ ও সাহসী।
একদিন আবদুল মুত্তালিব কাবা গৃহের আঙ্গিনায় নিদ্রামগ্ন ছিলেন। এমন সময় স্বপ্নে দেখলেন, কেউ তাঁকে বলছে — “হে আবদুল মুত্তালিব! পবিত্র কাবা গৃহের মালিকের জন্য তোমার মান্নত আদায় কর।”
আবদুল মুত্তালিব তখন তাঁর পূর্বের মান্নতের কথা সম্পূর্ণ ভুলে গিয়েছিলেন। স্বপ্ন দেখার পর সকালে তিনি একটি দুম্বা জবেহ করে কুরবানী দিলেন এবং মিসকিনদেরকে খাওয়ালেন। কিন্তু পরবর্তী রাতে পুনরায় স্বপ্নে একই কথা শুনলেন— “এটা যথেষ্ট নয়, আরও উত্তম প্রাণী কুরবানী কর।”
পরদিন সকালে তিনি একটি গরু কুরবানী করলেন। তবুও পরের রাতে আবার একই স্বপ্ন দেখলেন। এবার তিনি একটি উট কুরবানী করলেন। কিন্তু তাতেও শান্তি পেলেন না। চতুর্থ রাতেও তিনি একই স্বপ্ন দেখলেন। তখন তিনি স্বপ্নের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন —
“আপনি বলে দিন, আমি কোন জিনিস কুরবানী করলে কাবা গৃহের মালিক সন্তুষ্ট হবেন?”
ঐ ব্যক্তি উত্তর দিলেন —
“তোমার পুত্রকে কুরবানী কর, যাকে তুমি মান্নত করেছিলে।”
স্বপ্ন থেকে জেগে ওঠার পর আবদুল মুত্তালিব গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন। সকালে তিনি তাঁর সকল পুত্রকে ডেকে স্বপ্নের বিস্তারিত বর্ণনা করলেন। পুত্রগণ সকলেই সন্তুষ্ট চিত্তে আদি পিতা ইসমাইল (আঃ)-এর ন্যায় পিতার হাতে কুরবানী হওয়ার জন্য অপ্রত্যাশিত আগ্রহ ও সম্মতি প্রকাশ করল।
পুত্রদের এই অগাধ আনুগত্য ও ভক্তি দেখে আবদুল মুত্তালিবের অন্তর আনন্দে ভরে গেল। এরপর তিনি লটারী দিলেন, এবং তাতে আবদুল্লাহর নাম নির্ধারিত হলো।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের পূর্বে জমজম কূপের পুনঃখনন-শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।