যুগ যুগ ধরে জমজম কূপ অনাবাদ অবস্থায় পড়েছিল। যার কোন নিশানা মানুষের জানা ছিল না। এই কূপ হযরত আদম (আঃ)-এরও পূর্বে পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হয়। কারণ কিছু ঐতিহাসিকদের মতে, হযরত আদম (আঃ)-এর জন্য আল্লাহ পাক এই কূপ প্রকাশ করেছিলেন। সৃষ্টির রহস্য আল্লাহ পাক ছাড়া কেউ বুঝতে পারে না।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) যখন বিবি হাজেরা ও সদ্যজাত পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ)-কে জনমানব শূন্য মক্কার বালুকারাশি মরুপ্রান্তরে গাছপালা বিহীন স্থানে রেখে যান, তখন দুগ্ধপোষ্য শিশুর করুণ ক্রন্দনে, সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে, আল্লাহর আদেশে জিব্রাইল (আঃ) হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর পায়ের নিচে সেই কূপের প্রকাশ করেন।
ইয়ামনের জারহাস একবার শাম দেশে ব্যবসার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় মক্কার মরু অঞ্চলে পাখি উড়তে দেখে সেদিকে অগ্রসর হয়। সেখানে পৌঁছে তারা অতি উত্তম পানির সন্ধান পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হয়। বিবি হাজেরার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তারা জমজম কূপের আশপাশে বসবাস শুরু করে। পরে জারহাস কবিলার এক মহিলার সঙ্গে ইসমাইলের বিবাহ হয়। কালক্রমে সেই জারহাস কবিলা খানায়ে কাবার প্রতি অবজ্ঞা দেখায়। এর ফলে তারা উদাসীন হয়ে যায়।
পবিত্র কাবা গৃহের গুরুত্ব তারা ভুলে যায়। কিন্তু তাদের সর্দার বা ওমর বিন হারস খানায়ে কাবার ইজ্জত ও হুরমত সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং এর অবহেলা ও বেয়াদবীর পরিণাম কত জঘন্য, তা পুরোপুরি জানতেন। তাই তিনি জারহাস কবিলাকে কঠোরভাবে সতর্ক করেন। কিন্তু তারা কর্ণপাত না করায়, আল্লাহ পাকের আযাব ও গজবের ভয়ে, তাদেরকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।
কাবা গৃহের অভ্যন্তরে একটি গর্ত ছিল। কাবা গৃহের জন্য হাদিয়ার স্বরূপ যে সব মূল্যবান বস্তু আসত, সেই সমস্ত দ্রব্যাদি তাতে সংরক্ষিত হত। কাবার খাজানা নামে এটি পরিচিত ছিল। তাতে দুটি স্বর্ণের হরিণী, অনেক মূল্যবান তরবারি, বর্ম এবং অন্যান্য বহু জিনিস রাখা হত।
এ সব জিনিস লুণ্ঠিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়, মেজাজ ঐ সব জিনিস রাত্রে শুষ্ক জমজম কূপটি খনন করে তাতে পুতে রাখেন। তারপর তিনি ঐ দেশ ছেড়ে চলে যান। কওমে জারহাসের উপর আল্লাহ পাকের আযাব নাযিল হয়ে যায়।
মেজাজ সর্দার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কিছু দিন পর খোজায়া নামে এক শক্তিশালী কওম মক্কার উপর হামলা চালায় এবং মারাত্মক আঘাত হেনে জারহাস কবিলাকে হেরেম শরীফ হতে বহিষ্কৃত ও বিতাড়িত করে। এ সময় থেকে প্রায় পাঁচশত বছর পর্যন্ত—অর্থাৎ আবদুল মুত্তালিবের যুগ পর্যন্ত—কূপটি সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন ও অজ্ঞাত অবস্থায় ছিল।
দীর্ঘকাল পর জমজম কূপ পুনঃখননের সৌভাগ্য অর্জন করেন আবদুল মুত্তালিব। আবদুল মুত্তালিব ছিলেন হাশেমের পুত্র এবং হাশেম ছিলেন আবদে মানাফের পুত্র। আবদুল মুত্তালিবের প্রকৃত নাম ছিল শায়বা।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের পূর্বে জমজম কূপের পুনঃখনন-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।