হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আকাশে আরোহণ- পর্ব ৩

 হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আকাশে আরোহণ- পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

অপর এক বর্ণনায় আছে, সপ্তম আকাশে যেয়ে বায়তুল মামূর হতে বের হওয়ার পর দু’দল লোক দেখতে পান। একদলের চেহারা অতিশয় উজ্জ্বল। অপর দলের চেহারা মলিন। অতঃপর মলিন চেহারা বিশিষ্ট দলকে একটি নহরে গোসল দেয়া হল। তাতে মলিনতা আরও কেটে গেল। তারপর আর একটি নহরে গোসল করল। এবার সম্পূর্ণ মলিনতা দূর হয়ে গেল এবং প্রথম দলের ন্যায় তাদের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যায়।

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) জিব্রাইল (আঃ) কে তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন, উজ্জ্বল চেহার বিশিষ্ট লোকজন আপনার উম্মতের ঐ সমস্ত লোক যারা ঈমানের সাথে কুফরের সংমিশ্রণ করে নি। দ্বিতীয় দল হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা নেক আমলের সাথে বদ আমলের মিশ্রণ করেছে। পাপ করে পরে তাওবা করেছে। আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করেছেন। প্রথম নহরটি আল্লাহর রহমত। দ্বিতীয় নহরটি আল্লাহর নেয়ামত এবং তৃতীয় নহরটি শারাবান তাহুরা।

হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর তত্ত্বাবধানে কতকগুলো ছোট ছোট শিশু দেখতে পেলেন। হযরত জিব্রাইল (আঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, তারা ইমানদারগণের সন্তান যারা নাবালক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।

অন্য হাদিসে আছে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে বললেন, আপনার উম্মতকে অধিক পরিমাণে বেহেশতের গাছ লাগাতে বলবেন। কেননা বেহেশতের মাটি পাক ও সুদূর প্রসারিত। রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, বেহেশতের গাছ কি কি? হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

অন্য হাদিসে আছে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বলেছেন, আপনার উম্মতকে আমার সালাম দিবেন এবং বলেবেন, বেহেশতের মাটি পাক, পানি মিষ্ট এবং তার গাছ ছোবহানাল্লাহ ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর। তারপর হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) জনৈকা সুন্দরী কুমারীকে দেখতে পেলেন। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কার জন্য? কুমারী বলল, জায়েদ বিন হারেছার জন্য। তারপর সিদরাতুল মুনতাহায় তাঁর গমন হল। হযরত জিব্রাইল (আঃ) ও তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিদরা অর্থ কুলবৃক্ষ বা বরই গাছ। আর মুনতাহা অর্থ এলাকা বা শেষ সীমানা।

সেখানে একটি অতি বৃহদাকারে কুলবৃক্ষ (বরই গাছ) আছে যার জড় বা মূল এক হাজার বছরের পথ নিচে ষষ্ঠ আকাশ অবস্থিত। তার কাণ্ড এক হাজার বছরের রাস্তা পর্যন্ত উপরের দিকে লম্বা হওয়ার পর সপ্তম আকাশে তার ডালা প্রসারিত হয়েছে। সে গাছের ফলগুলো এত বড় যেন মাকামে হাজারের মোটকা এবং পাতাগুলো হাতীর কানের নমুনায় অতি বৃহৎ। একটি পাতার ছায়াতলে সমগ্র উম্মতে মুহাম্মাদীয়া দাঁড়াতে পারবে।

যে চারটি নহরের কথা ষষ্ঠ আকাশে বর্ণনা দেয়া হয়েছে। কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায় সে চারটি নহর সপ্তম আকাশে ছিদরাতুল মনতাহা হতে উৎপত্তি হয়েছে। আল্লাহর দরবার হতে যে সমস্ত ফরমান ও ফেরেশতাগণের দায়িত্ব সম্পর্কীয় দফতর এবং আল্লাহর রহমত ইত্যাদি আকাশ জমিনে নাজিল হাবার আছে তা সরাসরি সে কুলবৃক্ষের নিকট এসে পড়ে। সেখান হতে ফেরেশতাগণ তা উঠিয়ে নে এবং ফরমান অনুযায়ী জমিনে বাস্তবায়িত করেন। এদিক জমিন হতে যে সকল নেক আমল উপরে উঠে তা ফেরেশতাগণের মারফতে ঐ কুলবৃক্ষ পর্যন্ত উঠে। সেখান হতে বিনা মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহর দরবারে পৌঁছিয়ে যায়। এ জন্য তাকে ছিদরাতুল মনতাহা অর্থাৎ সীমান্ত কূল বৃক্ষ বলা হয়।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আকাশে আরোহণ- পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।