হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আকাশে আরোহণ- পর্ব ১
বায়তুল মুকাদ্দাসে দুধ পান করার পর প্রকৃত মে’রাজ আরম্ভ হয়। সেখান হতে আলমে মালাকুত, আলমে লাহুত, আলমে জাবারুত ও লা মাকানের যাত্রা শুরু হয়। জান্নাতের বাহন বোরাকে আরোহণ করে উর্ধগমনের যাত্রা আরম্ভ করেন। বোখারীর বর্ণনায় এটাই বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু শরফুল মোস্তফা নামক গ্রন্থে এবং কাবের বর্ণনায় দেখা যায়, বোরাক ছাড়াও তাঁর জন্য সেখানে আরও দুইটি সোপান উপস্থিত করা হয়েছে।
একটি স্বর্ণের যা জান্নাতুল ফেরদাউস হতে আনা হয়েছে। মৃত্যুর পর আদম সন্তানের রূহ এ সোপান (সিঁড়ি) দ্বারা উর্ধে আরোহণ করবে। আর একটি সোপান ছিল রৌপ্যের। তাঁর সম্মানার্থে একাধিক বাহনে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। স্বর্ণের সোপানটি অতিশয় সৌন্দর্য যার কোন তুলনা নেই। যা কোন দিন মানুষের কল্পনায়ও আসে না। তা মতির দ্বারা জড়ানো। রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেন, কোন কোন মৃত ব্যক্তির চক্ষু ঈষৎ উন্মীলিত অবস্থায় আকাশের দিকে নিবদ্ধ দেখতে পাবে। তারা ঐ সোপান দর্শনে আনন্দিত হয়েই ঐ রূপ তাকিয়ে থাকে। সেই সোপানের ডানে বামে অগনিত ফেরেশতা শ্রেণীবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়েছিলেন।
রাসূল (সাঃ) বোরাকে মতান্তরে ঐ স্বর্ণের সোপান আরোহণ করলেন। জিব্রাইলও তাঁর সঙ্গে তাঁর সান্ত্বনার জন্য আরোহণ করেন। চোখের নিমিষে প্রথম আকাশের দরজায় পৌঁছেন। সে দরজার দারওয়ান হলেন ইসমাইল (আঃ) ফেরেশতা। তাঁর অধীনে সত্তর হাজার ফেরেশতা। হযরত ইসমাইল (আঃ) তাঁর বাহিনী নিয়ে ঐ দরজায় অবস্থান করছিলেন। দরজাটির নাম বাবুল হাফাজা। হযরত জিব্রাইল (আঃ) বাবুল হাফাজা রক্ষী ফেরেশতা ইসমাইলের নিকট অনুমতি চেয়ে দরজা খুলতে বললেন। ইসমাইল ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কে? উত্তর করলেন জিব্রাইল। দ্বার রক্ষী ফেরেশতা পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর নিকট কি আল্লাহর পয়গম প্রেরণ করা হয়েছে? জিব্রাইল বললেন, হ্যাঁ। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তাঁকে কি আসমানে আরোহণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। জিব্রাইল বললেন, হ্যাঁ। তখন ফেরেশতাগণ বললেন, মারহাবা! তাঁর গমন অতি শুভ এবং দরজা খুলে দিলেন।
রাসূলে পাক (সাঃ) আসমানের উপর আরোহণ করলেন। সেখানে হযরত আদম (আঃ)-কে দেখতে পেলেন। হযরত জিব্রাইল বললেন, ইনি আপনার পিতা আদম। তাঁকে সালাম কর। রাসূল (সাঃ) তাঁকে সালাম করলেন। হযরত আদম (আঃ) তাঁর সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, মারহাবা! নেক সন্তান ও নেক নবীকে। অতঃপর হযরত আদম (আঃ) তাঁর জন্য বরকতের দোয়া করলেন। হযরত আদম (আঃ)-এর ডান পার্শ্বে পিঁপড়ার ন্যায় বহু রূহ দেখতে পান এবং বাম দিকেও অনুরূপ রূহ দেখতে পান। তবে ডান পার্শ্বে তাকিয়ে আদম আনন্দিত হন এবং বাম দিকে তাকিয়ে বিষন্ন হয়ে ক্রন্দন করেন। হযরত রাসূলে পাক (সাঃ) হযরত জিব্রাইলকে তার হাকীকত সম্বদ্ধে জিজ্ঞেস করেন। জিব্রাইল (আঃ) বললেন, ডান পার্শ্বের রূহগুলো আদম সন্তানের জান্নাতী ব্যক্তিগণ এবং বাম দিকে তাঁর আওলাদের দোযখ সন্তানগণ।
কোন কোন ব্যাখ্যায় আছে, তিনি প্রথম আকাশে অগনিত ফেরেশতাকে নামাজের অবস্থায় দণ্ডায়মান দেখতে পান। তারা আবহমান কাল হতে এ অবস্থায় আছেন এবং থাকবেন। আরও বর্ণিত আছে, তিনি প্রথম আকাশে নীল ও ফোরাত নদী প্রবাহিত হতে দেখেছেন। তারপর দ্বিতীয় আসমানের দরজায় পৌঁছেন। প্রথম আকাশের ন্যায় সেখানে প্রশ্ন উত্তরের পর দরজা খোলা হল।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আকাশে আরোহণ- পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন