হযরত মুসা (আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-৪র্থ পর্ব
হযরত মুসা(আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত মুসা (আঃ) স্ত্রীর কথা শুনে পুনরায় আল্লাহ তায়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন। অতঃপর তিনি দুজন খাদেম কে নিয়ে তিনি মিশর এর দিকে রওয়ানা করলেন। দীর্ঘ সময় পথ চলার পর তিনি মিশর গিয়ে পৌঁছালেন। প্রথমে তিনি নিজ বাড়িতে গিয়ে কড়া নাড়েন। তখন তার বোন দরজা খুলে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কে? হযরত মুসা (আঃ) বললেন, আমি মেহমান, তখন তার বোন ভিতরে গিয়ে তার মাকে বলল। দরজায় একজন মেহমান এসেছে। তার মা বললেন মেহমান কে ভিতরে নিয়ে এসো এবং মেহমান দারি কর। মহিলা দরজায় এসে মেহমান কে ভিতরে আসতে বললেন, হযরত মুসা (আঃ) ভিতরে এসে বসলেন। তখন তার মা এসে পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন।
হযরত মুসা (আঃ) বললেন, আমি একজন প্রবাসী মেহমান। তার মা তখন আরাম করতে বললেন। হযরত মুসা (আঃ) তার মা বোন ও ভাইকে চিনতে পারলেন। কিন্তু তারা কেউ তাকে চিনতে পারলেন না। হযরত মুসা (আঃ) এর ভাই হারুন এসে তার সাথে পরিচয় করলেন। এসময় তিনি আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে নবুয়াতী লাভ করেছেন। তাই তার আচার ব্যবহার ছিল অতি নম্র, ভদ্র,ও মার্জিত। হযরত মুসা (আঃ) ভাইয়ের চরিত্র দেখে খুব খুশি হলেন। কিছু সময় পরে হযরত মুসা (আঃ) বললেন আমার সাথে আমার দুজন খাদেম আছে। যদি আপনি আদেশ দেন তবে তাদেরকে এখানে নিয়ে আসি। হযরত হারুন (আঃ) তখন তার মাতা কে ডেকে মেহমানের আবেদনের কথা বললেন। তখন তার মা ঐ খাদেমকে নিয়ে আসতে বললেন এবং তিনি হযরত মুসা (আঃ) কে সম্বোধন করে বললেন বাবা তুমি আমার ছেলে ন্যায়, অতএব তোমার লোক আমার এখানেই থাকবে।
বাবা তোমার ন্যায় আমার এক ছেলে ছিল যার নাম মুছা। সে ছিল অত্যন্ত উদার এবং আল্লাহ তায়ালা যে সমস্ত গুনাবলীর অধিকারী করেছেন তার নবী ব্যতিত সাধারন মানুষের ভিতরে থাকে না। সে ছেলেকে আমি দশবছর পুর্বে হারাই উন্মাদের সামিল জীবনযাপন করছি। আমি সেই থেকে আজ পর্যন্ত অহরহ মেহমানের খেদমত করে যাচ্ছি। হয়ত তাদের দোয়ার বরকতে একদিন আমার ছেলে আমার কোলে ফিরে আসবে। মাতার মুখে এই সমস্ত কথা শুনে হযরত মুসা (আঃ) বললেন, মা আমি তোমার সেই হারানো সন্তান মুছা। দীর্ঘ দিন পরে মা ও পুত্রের মিলন ক্ষণে কি অবস্থা ঘটতে পারে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মা পুত্র ভাই বোন সকলেই জড়াজড়ি করে সজোরে চিৎকার করে কাঁদলেন।
পরে কিছুটা শান্ত হয়ে হযরত মুসা (আঃ) দুজন লোক কে নিয়ে আসলেন। তাদের পরিবার এর মধ্যে এক আনন্দ ফোয়ারা উচ্ছাসিত হয়ে উঠল। তারা দীর্ঘ দিনের তৃষিত হৃদয়ে লাভ করলেন। খানিক পরে হযরত মুসা (আঃ) তার স্নেহ ভাজন পিতার সাক্ষাৎ লাভ করলেন এবং তাকে জড়িয়ে ধরে জীবনের সকল দুঃখ কষ্টের কথা ব্যক্ত করলেন। সর্বশেষে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ এর কথা ব্যক্ত করে বললেন, আমরা দুই ভাই একত্রে ফেরাউনকে দিনের দাওয়াত দিতে যাচ্ছি। আপনি আমাদের কে এই ব্যাপারে সাহায্য করুন। পিতা বললেন, যদিও ব্যাপারটা ঝুকিপূর্ণ তবুও আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ উপেক্ষা করা যাবে না। তোমরা অগ্রসর হও। আমি তোমাদের সব রকম সাহায্য করব। হযরত মুসা (আঃ) হারুন কে ডেকে বললেন, তোমার উপর আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ফেরাউনকে দিনের দাওয়াত প্রদান করা সম্পর্কে কোন নির্দেশ এসেছে? হযরত হারুন (আঃ) বললেন হ্যাঁ, জিব্রাইল আপনার আগমনের কথা আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন এবং আপনার কাজে আমাকে সাহায্য করতে বলেছেন। অতএব তখন কি ভাবে এ কাজ সমাধা করব তার একটা উপায় গ্রহণ কর উচিৎ। উভয়ের চিন্তা ভাবনা করে সিধান্ত গ্রহণ করলেন প্রথমে অত্যন্ত শান্ত ভাবে ফেরাউন কে দিনের দাওয়াত দিতে হবে।
সূত্রঃ কুর আনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত মুসা(আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন