হযরত মুসা (আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-নবম পর্ব

হযরত মুসা(আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

উপস্থিত সকলে হাতে তালি দিয়ে ফেরাউন কে সমর্থক করল। পরে দিন দেশের সমস্ত যাদুকরদেরকে নির্দিষ্ট দরবারে হাজির হওয়ার জন্য খবর প্রেরণ করা হল। ছোট বড় আর কাউকে আর বাদ রাখা হল না। ফেরাউনের হুকুম অমান্য করার ক্ষমতা কার নেই। তাই সবাই সময় মত রাজদরবারে হাজির হল। সে এক বিরাট সমাবেশ। চার হাজারের অধিক যাদুকর সেখানে হাজির হল। তখন ফেরাউন তাদের কে বলল,আমি তোমাদের তিনশত বছর যাবত প্রতিপালন করেছি অভাব-অনাটনে, বিপদে তোমাদের সাহায্য করেছি। এখন আমি এক মহা বিপদের সম্মুখীন। আমাদের ঘরে প্রতিপালিত হয়ে মুছা আজ আমার বিরোধিতা করছে। সে আমার খোদাই দাবি ভন্ড করার ষড়যন্ত্র করছে। সারা দেশেব্যাপী তার নবুয়াতী প্রাপ্তির খবর ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমাকে ভুয়া খোদা বলে মানুষ কে বুঝাচ্ছে এবং জনসাধরন কে আকাশের অদৃশ্য খোদার দাসত্ব করার আহবান জানাচ্ছে। এমন কি সে কিছুটা যাদুবির্দ্যা অর্জন করেছে। যা দিয়ে এখন সকলকে ভয় দেখাতেছে। অতএব এখন তার জাদু প্রদর্শীনকে আসার প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে আমাদের যাদু পরিচালনা করতে হবে। যাতে আর দ্বিতীয় বার মুসা মানুষের  নিকট যেতে সাহস না পায়। সে তোমাদের যাদুর সম্মুখে ধ্বংস হোক বা না হোক, সে যেন একাকী দেশ থেকে পালিয়ে যায়। তোমরা কি এ ধরনের যাদু প্রদর্শন করতে সম্মত আছ? সকল যাদুকর হ্যাঁ বলে ফেরাউনের কথায় স্বাগত জানাল। এ সমস্ত যাদুকরের সর্দার ছিল এক অন্ধ যাদুকর। সে বল্ল, মহাত্নান! আমরা সর্বাত্নক চেষ্টা করে যাব। তবে এ জন্য মাল-ছামান খরিদের জন্য অনেক টাকা পয়সা খরচ হবে। ফেরাউন তখন একটি সিন্দুকের চাবি সর্দারের হাতে দিয়ে বলল, যত খরচ হয় তার পরোয়া নেই।

মুছা কে পরাভূত করতেই হবে। অন্ধ সরদার বাজার থেকে বড় বড় দড়ি কাছি লোহার রড় ইত্যাদি কিছু খরিদ করে আনল। ময়দানে অনেক গুলা আগুনের কন্ডুলী তৈরি করল। বড় বড় গাছে এনে ময়দানের এক প্রান্তে রেখে দিল। দীর্ঘ ছয় মাস বসে বান, টোনা ইত্যাদি বিভিন্ন রকমারি যাদু প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিল। এর পর হযরত মুছা (আঃ) সেখানে আসার জন্য বলা হল। হযরত মুছা (আঃ) তার ভাইকে নিয়ে ও লাঠি খানা নিয়ে সেখানে হাজির হলেন।

যাদুকরেরা তাকে জিজ্ঞাসা করল প্রথমে সে কি যাদু প্রদর্শন আরম্ভ করবে। হযরত মুছা (আঃ) বললেন, আপনারা প্রথমে আরম্ভ করুন। তখন বড় যাদুকরেরা ছোটদের প্রতি নির্দেশ দিল তোমার আরম্ভ কর পরে যদি প্রয়োজন  হয় আমরা এখানে উপস্থিত আছি। কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হয় তোমাদের যাদু ক্রিয়ার সম্মুখে এ ছোকড়ার ইহলীলা শেষ হয়ে যাবে। আমাদের আর ময়দানে নামতে হবে না।

তখন ছোট যাদুকরেরা রশি ও কাছিগুলাকে যাদুর মাধ্যমে বড় বড় সর্পে আকারে ময়দানে ছেড়ে দিল। সর্প গুলা দেখতে খুবি বড় ছিল কিন্তু ওরা হযরত মুছা(আঃ)এর দিকে অগ্রসর না হয়ে অন্য দিকে ছুটে পালানোর চেষ্টা করল। যাদুকরেরা সর্পগুলাকে যতই এ দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছিল, ততই সেগুলা অন্য দিকে ছুটে চলল। তখন তারা বড় যাদুকর কে গিয়ে বললেন উস্তাদ এখন ময়দানে আসুন না হয় ইজ্জত থাকবে না। আমরা যত চেষ্টা কছি সর্পগুলিকে হযরত মুছা (আঃ) কে এর দিকে ধাবিত করতে, ততই সে গুলা অন্য দিকে ছুটে যাচ্ছে।

তখন কয়েক জন বড় যাদুকর ময়দানে এসে লোহার রড়গুলাকে বড় বড় সর্প, বিচ্চু, বাঘ, সিংস, কুমীরের আকার ধারন করে প্রদর্শন করল। সেগুলা হযরত মুছা (আঃ) এর দিকে তেড়ে আসছিল। হযরত মুছা (আঃ) তখন আল্লাহার নির্দেশে লাঠিখানা ছেড়ে দিলেন অমনি লাঠিখানা এক বিশাল সর্প ধারন করল। সে সর্পটি ছিল এক অদ্ভুত রকমের প্রানি। অনেক লম্বা ও বিরাট দেহের অধিকারি। তার মাথা ও মুখ ছিল সত্তর হাজার। প্রত্যেকটি মুখ দ্বারা যাদুকরের তৈরি করা প্রাণী গুলা নিমেশে গিলে ফেলল। এমন কি যাদু প্রদর্শনের জন্য গাছপালা ও অন্যান্য দ্রব্যাদী যা কিছু সেখানে মজুদ করা ছিল তা নিমিষে মধ্যে গিলে ফেলল। যাদুকররা প্রাণ নিয়ে দৈীড়াতে আরম্ভ করল। সর্পটির শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ ছিল মেঘের গর্জনের চেয়েও ভীষন।

যাদুকরদের অধিকাংশের শরীরে সর্পের নিশ্বাস লাগায় তারা ছটফট করে মাটিতে শুয়ে পড়তে আরম্ভ করল। প্রধান অন্ধ যাদুকর কতিপয় বড় যাদুরর অবস্থা বুঝে মাঠিতে সেজদায় পড়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল, আমানতু বি রব্বি মুছা। যখন সর্পটি সবকিছু খেয়ে মাথা উত্তোলন করল তখন শ্বাস প্রশ্বাসে চারদিকের গাছপালা শুকিয়ে যেতে আরম্ভ করল। আর মুখের নালা যেখানে পড় সেখানে আগুন ধরে উঠল।ফেরাউন তার উজিরদের নিয়ে সিংহাসনে বসে এ দৃশ্য দেখা মাত্র সিংসাহন ত্যাগ করে ঊর্দ্ধশ্বাসে পাহাড়ের দিকে দৌড়াতে আরম্ব করল। সর্পটি সম্মুখে অগ্রসর হয়ে ফেরাউনের রাজ প্রাসাদের উপর কয়েক ছোঁ মারল। অমনি বিশাল রাজ প্রাসাদ চুর্ন-বিচুর্নি হয়ে মাটির সাথে মিশে গেল।

রাজ প্রাসাদের চারিদিকে যে সমস্ত ইমারাত, ফুল বাগিচা, অন্দর মহল, বালাখানা ছিল তা কিছুই রেহাই পেল না। সব কিছু নিমিষের মধ্যে ধুলিসাৎ হয়ে গেল। শুধু মাএ আছিয়ার মহল টা অক্ষত রইল। এ সময় আল্লহ তা’লার তরফ হতে নির্দেশ আসল, হে মুছা! সত্বর সর্পটিকে ধরে ফেল না হয় সে মিশর রাজ্যের সব কিছু নিশ্চহ্ন করে দিবে। হযরত মুছা (আঃ) আল্লাহার নির্দেশে সঙ্গে সঙ্গে সর্পের জেল ধরলেন। অমনি সর্পটি ক্ষুদ্র লাঠিতে পরিণীত হল। সর্পের নিশ্বাসে সেখানে কয়েক হাজার মানুষ প্রান ত্যাগ করে এবং কয়েক মাইল এলাকার শস্য, ফল গাছপালা সবকিছু শুকিয়ে গেল।

সূত্রঃ কুর আনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত মুসা(আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-১০ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক  করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।