হযরত মালেক দীনার (রঃ) – পর্ব ৫
হযরত মালেক দীনার (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধঃ
হযরত মালেক (রঃ) পার্থিব জীবনে কঠোর সংযম পালন করতেন। বিশেষ করে খাদ্য ও পানীয়ের ব্যাপারে। বহুদিন অম্ল ও মিষ্টি দ্রব্য গ্রহণ করেননি। রোজা রাখতেন সারা বছর। দু’এক টুকরো শুকনো রুটি দিয়ে ইফতার করতেন। সেহরীও সারতেন একই ভাবে। হয়ত শুকনা রুটি বা এক গ্লাস পানি দিয়ে। আর এ ধরণের ব্যবস্থায় তার কোনও ক্ষোভ তো ছিলই না, বরং তিনি খুশী ছিলেন।
অবশেষে একদিন প্রবৃত্তির তাড়না অনুভব করলেন। গোশত খেতে ইচ্ছা হল তাঁর। দীর্ঘদিন খাননি। আজ যখন খাবার ইচ্ছা জাগল, তখন তা আর দমন করতে পারলেন না। গোশত কিনে নিয়েই বাড়ী ফিরলেন। দোকানী জানত, মালেক দীনার গোশত খান না। তাই গোশত কিনে নিয়ে গিয়ে তিনি কী করেন, তা জানার জন্য তার এক চাকরকে গোপন পাঠাল।
চাকর দেখল, গোশত নিয়ে তিনি বাড়ীতে গেলেন না। চলে এলেন এক নির্জন স্থানে। পাত্র থেকে গোশত বের করে নাকের কাছে নিয়ে গিয়ে শুঁকলেন। আর আপন মনে বলতে লাগলেন, রে প্রবৃত্তি! আজ তোমার জন্য এতটুকুই ব্যবস্থা করা গেল। এর বেশী আর পারা গেল না। তারপর বাইরে এসে গোশতটুকু এক ভিখারীকে দিয়ে দিলেন।
আবার তিনি সান্ত্বনা দিলেন তাঁর আত্মাকে। হে দুর্বল আত্মা! তোমার সঙ্গে আমার শত্রুতা নেই, সুতরাং ইচ্ছা করে তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি তা নয়। তুমি একটু সবর কর। খুব বেশি দিন তোমাকে কষ্ট সহ্য করতে হবে না। অবশ্যই এর শেষ আছে একদিন। সেদিন দেখবে, রাশি রাশি সুস্বাদু খাবার তোমার সম্মুখে উপস্থিত। চল্লিশ দিনের মাথায় গোশত না খেলে নাকি বুদ্ধি লোপ পায়। যদি এ কথা বিশ্বাস করি না। কারণ, আমি একটানা কুড়ি বছর গোশত খাইনি। তাতে আল্লাহর রহমতে আমার বুদ্ধি লোপ পায়নি তাই শুধু, বরং আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চাকরটি গিয়ে দোকান মালিককে সবিস্তরে সব বলল। হযরত মালেক (রঃ)-এর এই ত্যাগ ও সংযমের কথা শুনে সে হতবাক হয়ে গেল।
তিনি বসরায় বাস করেছেন চল্লিশ বছর। কিন্তু বেশি দিন খেজুর খাননি। খেজুরের সময় কেউ খেতে অনুরোধ করলে তিনি বলতেন, খেজুর খেয়ে তোমাদের পেটের কতটুকুই বা উন্নতি হয়েছে আর আমি যে খাই না, তাতে আমরাই বা এমনকি অবনতি হয়েছে?
কিন্তু চল্লিশ বছর অতিক্রান্ত হলে তাঁর খেজুর খাওয়ার ইচ্ছা হয়। মন বলল, খেজুরের স্বাদটা একবার নেওয়া যাক। কিন্তু তিনি এর বিরোধিতা করে বললেন, না, তোমার এ ইচ্ছা আমি পূর্ণ হতে দেব না।
হঠাৎ একরাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন কে যেন বলছেন, মালেক! তুমি এভাবে আত্মাকে আর কষ্ট দিও না। খেজুর খাও। স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে তিনি খেজুর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন বটে। তবে আপন আত্মার উদ্দেশ্যে বললেন, হে আত্মা! প্রথমতঃ তোমাকে রোজা রাখতে হবে পুরো এক সপ্তাহ। আর প্রতি রাতে ভোর পর্যন্ত আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকতে হবে। তারপর তোমার বাসনা পূর্ণ
করব, তার আগে না। তখন তিনি রোজা রাখতে লাগলেন। সপ্তাহখানেক রোজা রাখার পর কিছু খেজুর কিনে এক মসজিদে গেলেন। খেজুরগুলো খাবেন বলে সামনে নিয়ে বসলেন।
একটি ছেলে এই দৃশ্য দেখে তার পিতাকে ডেকে উঠল জোরে জোরে। আব্বা দেখুন, মসজিদে এক ইহুদী এসেছে। সে এখানে বসে খেজুর খাওয়ার তোড়জোড় করছে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া