হযরত মমশাদ দীনুরী (রঃ) – পর্ব ১
হযরত মমশাদ দীনুরী (রঃ) দীনুর নামক স্থানে বসবাস করতেন। দেশবাসীর কাছে পরম শ্রদ্ধেয় এই তাপস চরিত্রের মাধুর্যে, সাধনায়, তাওয়াক্কুলে এক অসামান্য ব্যক্তিত্ব। ২৯৯ হিজরী সনে তাঁর মৃত্যু হয়। ১
তিনি তাঁর সাধনালয়ে নির্জন এবাদতে মগ্ন থাকতেন। এজন্য সাধনালয়ের দরজা সব সময় বন্ধই থাকত। তাঁর ঘরে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। একমাত্র মুসাফিরকে স্বাগত জানাতেন। মেহমানদের আপ্যায়নে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটত না। কিন্তু স্থানীয় লোকের ঠাঁই হত না সেখানে। কেননা, তাঁরা স্থায়ীভাবে তাঁর ঘরে কখনও থাকবেন না, চলে যাবেন। আর তখন বিচ্ছেদ-বেদনায় তিনি ব্যথিত হবেন। এজন্য তিনি তাঁদের তেমন আমল দিতেন না।
একবার এক লোক তাঁর দোয়া চাইলে তিনি বললেন, আমার দোয়ার দরকার নেই। তুমি নিজেই আল্লাহর দরবারে চলে যাও। আল্লাহর দরবার কোথায়? এ প্রশ্নের জবাবে বললেন, যেখানে তুমি নেই সেখানে। তাঁর কথার মর্ম উপলদ্ধি করে লোকটি নির্জন সাধনায় নিমগ্ন হল। আর আল্লাহর আসীম করুণায় তাঁর সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে গেল।
কিছুদিন পরে প্রবল বন্যায় দেশ যখন ডুবুডুবু, তখন দেখা গেল ঐ লোক বন্যার পানির ওপর জায়নামাযে বসে দিব্যি চলে আসছে, হযরত মমশদ দীনুরী (রঃ) – আস্তানায়। জায়গাটি ছিল উঁচু। এজন্য বন্যায় প্লাবিত হয়নি। তাঁকে দেখে হযরত দীনুরী (রঃ) বললেন, তুমি তো উচ্চস্তরে উপনীত। লোকটি বললেন, আমার যা সাফল্য সব আপনার বদৌলতে। আল্লাহ ছাড়া কারও মুখাপেক্ষী না হওয়ার নীতি আপনিই আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন।
একবার এক শিষ্য তাঁর জন্য হালুয়া তৈরীর অনুমতি চাইলেন। তিনি বললেন, ভক্তি ও আনুগত্যের সঙ্গে হালুয়ার সম্পর্ক কি? আর কোন কথা না বলে শিষ্যটি উঠে গেলেন। কিন্তু বারবার তাঁর কানে ধ্বনিত হতে লাগল, ভক্তি ও আনুগত্যের সঙ্গে হালুয়ার সম্পর্ক কি? এমনকি তিনি যখন এক বনে প্রবেশ করলেন, তখনও তাঁর কানে হযরত মমশাদ (রঃ) – এর ঐ একই কথার অনুরণন। আর কথাটি বলতে বলতে শিষ্যটি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। হযরত মমশাদ (রঃ) যখন তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনলেন, তখন আল্লাহর দরবারে তওবা করলেন। বললেন, প্রভু গো! আমার কথায় আঘাত পেয়ে লোকটির এ অবস্থা। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া