হযরত বেলাল (রাঃ ) এর কষ্ট সহ্য করা – শেষ পর্ব
ওরওয়া (রাঃ) বলেন, হযরত বেলাল (রাঃ) নির্যাতন সহ্য করিয়াছেন আর আহাদ, আহাদ বলিতেছেন। এমতাবস্থায় অরাকা ইবনে নওফাল তাঁহার পাশ দিয়া যাইতেন আর বলিতেন, হে বেলাল, আহাদ, আহাদ (অর্থাৎ মা’বুদ একজনই।) আল্লাহই সেই মা’বুদ। অতঃপর উমাইয়া ইবনে খালাফ যে হযরত বেলাল (রাঃ) এর সহিত এইরূপ ব্যবহার করিতেছিল তাহাকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিলেন, আমি আল্লাহ্র নামে কসম করিয়া বলিতেছি যে, যদি তোমরা তাহাকে এইভাবে হত্যা কর তবে আমি তাঁহার কবরকে রহমত ও বরকতের স্থান বানাইয়া লইব। অবশেষে একদিন তাহারা এরূপ নির্যাতন চালাইতেছিল এমন সময় হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত বেলাল (রাঃ) এর পাশ দিয়া যাওয়ার সময় উমাইয়াকে বলিলেন, এই অসহায়ের ব্যাপারে কি তুমি আল্লাহকে ভয় কর না? কতদিন (এইভাবে তাঁহার উপর নির্যাতন চালাইবে)? উমাইয়া বলিল, তুমিই তো তাহাকে নষ্ট করিয়াছ।
তুমিই তাহাকে এই শাস্তি হইতে মুক্ত কর। হযরত আবু বকর (রাঃ) বলিলেন, আমি তাহাকে মুক্ত করিব। আমার নিকট তোমার ধর্মেবিশ্বাসী এবং শক্তিশালী ও মজবুত একজন হাবশী গোলাম রহিয়াছে। আমি তাহাকে বেলালের পরিবর্তে তোমাকে দিয়া দিলাম। উমাইয়া বলিল, আমি তাহা গ্রহণ করিলাম। আবু বকর (রাঃ) উক্ত গোলাম তাহাকে দিয়া দিলেন এবং হযরত বেলাল (রাঃ) কে লইয়া স্বাধীন করিয়া দিলেন। তারপর মক্কা হইতে হিজরতের পূর্বে হযরত আবু বকর (রাঃ) আরো ছয়জনকে মুক্ত করিয়া স্বাধীন করিলেন। হযরত বেলাল (রাঃ) তন্মধ্যে সপ্তম ছিলেন।
ইবনে ইসহাক (রাঃ) হইতে বর্ণিত অপর এক রেওয়ায়াতে আছে যে, উমাইয়া হযরত বেলাল (রাঃ) কে উত্তপ্ত রৌদ্রের মধ্যে বাহির করিয়া আনিত এবং মক্কার প্রন্তরময় যমীনের উপর তাহাকে চিৎ করিয়া ফেলিত। অতঃপর একটি বড় পাথর তাঁহার বুকের উপর চাপাইয়া দিবার নির্দেশ দিত। নির্দেশ মত তাঁহার বুকের উপর ভারি পাথর রাখা হইত। এমতাবস্থায় উমাইয়া বলিত তুমি এইভাবে মরিয়া যাইবে আর না হয় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অস্বীকার করিবে এবং লা-ত ওযযার পূজা করিবে।
হযরত বেলাল (রাঃ) এই কষ্টের মধ্যেও বলিতেন, আহাদ, আহাদ। হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) হযরত বেলাল (রাঃ) ও তাঁহার সঙ্গীদের দুঃখকষ্ট সহ্য করার এবং হযরত আবু বকর (রাঃ) কর্তৃক তাহাকে মুক্ত করিয়া দেওয়ার ঘটনা স্মরণ করিয়া নিন্মের কবিতাটি আবৃত্তি করিয়াছেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর নাম আতীক (অর্থাৎ দোযখ হইতে মুক্ত) ছিল। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহকে এই উপাধি দিয়াছিলেন অথবা তাঁহার মা তাঁহার এই নাম রাখিয়াছিলেন।)
হযরত আম্মার (রাঃ) এর কবিতা নিম্নরূপ─
১. হযরত বেলাল (রাঃ) ও তাঁহার সঙ্গীদের পক্ষ হইতে আল্লাহ্ তায়ালা আতীক (অর্থাৎ হযরত আবু বকর)কে উত্তম পুরস্কার দান করুন এবং (আবু জেহেল চাচা) ফাকেহ (ইবনে মুগীরা) ও আবু জেহেলকে অপমানিত করুন। ২. আমি সেই বিকালের কথা ভুলিব না যখন তাহারা উভয়ে হযরত বেলাল (রাঃ)কে নির্যাতন করিবার ইচ্ছা করিয়াছিল এবং তাহারা এরূপ নির্যাতন করিতে কোন ভয় করিতেছিল না যাহা করিতে প্রত্যেক বিবেকবান ব্যক্তি ভয় করিয়া থাকে। ৩. এই অমানুষিক নির্যাতনের কারণ এই ছিল যে, হযরত বেলাল (রাঃ) সমগ্র সৃষ্টির প্রতিপালকের একত্ববাদকে স্বীকার করিয়াছিলেন এবং বলিয়াছিলেন যে, আমি সাক্ষ্য দিতেছি, আমার প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহ্, একটু তো থাম! ৪. তাহারা আমাকে হত্যা করিতে চাহে করুক, আমি হত্যার ভয়ে রাহমানের সহিত শিরিক করিব না। ৫. হে ইবরাহীম, ইউনুস, মূসা ও ঈসা (আঃ) এর প্রতিপালক আমাকে মুক্তি দান করুন, আর কখনও আমাকে গালিবের পরিবারস্থ ঐ সকল লোকের দ্বারা পরীক্ষায় ফেলিবেন না যাহারা পথভ্রষ্ট হইতে চায় এবং অসৎ ও ইনসাফ করে না।
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা
হযরত বেলাল (রাঃ ) এর কষ্ট সহ্য করা – প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন