হযরত বুজাইর (রাঃ ) এর আপন ভাই কা’ব এর নামে পত্র – ১ম পর্ব

হযরত আবদুর রহমান ইবনে কা’ব (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, হযরত কা’ব ইবনে যুবাইর (রাঃ) ও হযরত বুজাইর ইবনে যুহাইর (রাঃ) (দুই ভাই) সফরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইলেন। আবরাকুল আযযাফ নামক জলাশয়ের নিকট পৌঁছিয়া হযরত বুজাইর (রাঃ) হযরত ক’ব (রাঃ) কে বলিলেন, তুমি একটু এই জানোয়ারগুলির নিকট অপেক্ষা কর, আমি এই ব্যক্তি অর্থাৎ রাসূল (সাঃ)-এর নিকট হইতে শুনিয়া আসি, তিনি কি বলেন? হযরত কা’ব সেখানে অপেক্ষা করিতে লাগিলেন। হযরত বুজাইর (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর খেদমতে হাজির হইলে তিনি তাহার নিকট ইসলাম পেশ করিলেন। হযরত বুজাইর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করিলেন। হযরত কা’ব এই সংবাদ পাইয়া (তাহার বিরুদ্ধে) এই কবিতা রচনা করিলেন-

অর্থঃ শোন, হে আমার সঙ্গীদ্বয়, আমার পক্ষ হইতে বুজাইরকে এই পয়গম পৌঁছাইয়া দাও যে, তোমার অপর লোকটির (অর্থাৎ হযরত আবু বকরের) নাশ হউক! সে তোমাকে কোন পথ ধরাইয়াছে। তোমাকে এমন এক চরিত্রের পথ ধরাইয়াছে যে পথে না তোমার পিতামাতাকে দেখিয়াছি, আর না তোমার কোন ভাইকে পাইয়াছ। আবু বকর তোমাকে একটি নিকৃষ্টতম পেয়ালা পান করাইয়াছে, জ্বীনের গোলাম সেই লোকটি বার বার তোমাকে উহা হইতে পান করাইয়া পরিতৃপ্ত করিয়াছে।

রাসূল (সাঃ)-এর নিকট এই কবিতা পৌঁছিলে তিনি ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি কা’বকে হত্যা করিবে তাহার খুন মাফ এবং বলিলেন, কা’বকে যে যেখানে পায় যেন কতল করিয়া দেয়।

হযরত বুজাইর (রাঃ) তাহার ভাই কা’ব কে পত্র মারফৎ এই সংবাদ জানাইলেন যে, রাসূল (সাঃ) তোমার হত্যাকারীর খুন মাফ বলিয়া ঘোষণা করিয়াছেন, সুতরাং নিজের প্রাণ বাঁচাও, তবে

বাঁচিতে পারিবে বলিয়া আমার মনে হয় না। তারপর লিখিলেন, জানিয়া রাখ, যে কেহ রাসূল (সাঃ)-এর নিকট আসিয়া আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ও আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ পড়িয়া লয় তিনি তাহার এই শাহাদাৎকে গ্রহণ করিয়া লন। অতএব আমার এই পত্র তোমার নিকট পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে তুমি মুসলমান হইয়া চলিয়া আস। হযরত কা’ব (রাঃ) পত্র পাঠ করিয়া মুসলমান হইয়া গেলেন এবং রাসূল (সাঃ)-এর প্রশংসা করিয়া একটি কবিতা রচনা করিলেন। তারপর আসিয়া রাসূল (সাঃ)-এর মসজিদের দ্বারে উট বসাইয়া নামিলেন এবং মসজিদে প্রবেশ করিলেন। রাসূল (সাঃ) তখন সাহাবা (রাঃ)দের মাঝখানে এমনভাবে বসিয়াছিলেন যেমন সকলের মাঝখানে দস্তরখান হইয়া থাকে। আর সাহাবা (রাঃ) তাঁহাকে ঘিরিয়া গোলাকার হইয়া বসিয়াছিলেন। তিনি কখনও একদিকে মুখ করিয়া, আবার কখনও অপরদিকে মুখ করিয়া সাহাবা (রাঃ)দের সহিত দ্বারে উট বসাইলাম এবং রাসূল (সাঃ)কে তাঁহার হুলিয়া মোবারক দেখিয়াই চিনিতে পারিলাম। আমি লোকদের উপর দিয়া অগ্রসর হইয়া তাঁহার নিকট যাইয়া বসিলাম এবং ইসলাম গ্রহণ করিয়া বলিলাম, আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্নাকা রাসূলুল্লাহ, ইয়া রাসূলাল্লাহ, নিরাপত্তা চাহিতেছি। রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কে? হযরত কা’ব (রাঃ) বলিলেন, আমি কা’ব ইবনে যুহাইর। তিনি বলিলেন, তুমিই সেই কবিতা রচনা করিয়াছিলে? তারপর হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর প্রতি তাকাইয়া বলিলেন, হে আবু বকর, সে তার কবিতায় কিরূপ বলিয়াছিল? হযরত আবু বকর (রাঃ) পড়িয়া শুনাইলেন-

অর্থঃ আবু বকর তোমাকে নিকৃষ্টতম পেয়ালা পান করাইয়াছে, আর জ্বীনের গোলাম সেই লোকটি বার বার তোমাকে উহা হইতে পান করাইয়া পরিতৃপ্ত করিয়াছে।

সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা

হযরত বুজাইর (রাঃ ) এর আপন ভাই কা’ব এর নামে পত্র – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।