হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ৬
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তিনি বললেন, আসলে আল্লাহ্র সাহায্য ছাড়া মনকে তাঁর দিকে নিয়ে যাওয়াই কঠিন। আর তিনি যদি এ ব্যাপারে সাহায্য করেন, তাহলে আর কষ্টের কিছু নেই।
হযরত আবু তুরাব (রঃ)-এর এক শিষ্য সাধনাবলে মারেফত বিষয়ে উচ্চস্থানের অধিকারী হন। আবু তুরাব (রঃ) তাকে বললেন, হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর সাহচর্য তোমার পক্ষে খুব কার্যকর হত। শিষ্য বললেন, আমি তো বায়েজীদ (রঃ)-এর প্রাপ্ত আল্লাহকে রোজ শতবার দেখে থাকি। আবু তুরাব (রঃ) বললেন, তুমি তা দেখছ তোমার হিসাবে। কিন্তু তাঁর সান্নিধ্য পেলে তুমি তাকে দেখতে বায়েজীদ (রঃ)-এর হিসাবে। বস্তুত দীদারে এলাহীর রকমফের রয়েছে।
মুরশিদের কথায় আবু তুরাব এর শিষ্য একদিন হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হলেন। আবু তুরাব (রঃ)-ও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। হযরত বায়েজীদ (রঃ) তখন কোথাও যাচ্ছিলেন। রাস্তায় দেখা হয়ে গেল। আর যেই শিষ্যের চোখের সঙ্গে তাঁর চোখ মিলল, অমনি বিপুল ভয়ে শিষ্যের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর চাহনি তিনি সহ্য করতে পারলেন না। শরীরে শুরু হল কম্পন। কিছুক্ষণ পরেই তিনি মারা গেলেন।
হযরত ইয়াহইয়া মাআয (রঃ) একজন সিদ্ধ সাধক ছিলেন। তিনি হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ)-কে একখানি পত্র লেখেন। যার মর্ম নিম্নরূপঃ
হযরত! এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে আপনার কী ধারণা, যিনি আজলের এক পেয়ালা পানি পান করে আত্ম-বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছেন এবং এখনও ঐ অবস্থায় রয়েছেন? আর এক কথা। আপনার কাছে একটি গোপন কথা জানতে চাই। তবে যখন আপনি আর আমি জান্নাতের তুবা গাছের ছায়াতলে বসে বিশ্রাম নেব, তখন সেটি আপনার কাছে প্রকাশ করব।
এক পত্র বাহক মারফত তিনি পত্রখানি পাঠিয়ে দিলেন। আর সেই সঙ্গে একখানি রুটি পাঠান। অনুরোধ করেন, তিনি যেন সেটি খান। কেননা, সে রুটির খামির তৈরি হয়েছে পবিত্র যমযমের পানির দ্বারা।
হযরত বায়েজীদ (রঃ) এর উত্তরে লেখেন, এখান এমন এক ব্যক্তি আছেন, যিনি আজলের দরিয়া সমূহের সমস্ত পানি পান করে চীৎকার করেছেন, আরও আছে কি?
আর শুনুন ভাই, তুবা গাছের ছায়ায় বসার জন্য জান্নাতের কী দরকার। যেখানে আল্লাহ্র স্মরণে থাকেন, সেখানেই জান্নাত। সেখানেই তুবা গাছ। হযরত বায়েজীদ (রঃ) হযরত ইয়াহইয়া (রঃ)-এর গুপ্ত প্রশ্নটিরও উত্তর লিখে দেন। পত্রের শেষে তিনি লেখেন, আপনার পাঠানো রুটি খেতে পারলাম না। কেননা, যমযমের পানি দিয়ে এর খামির প্রস্তুত হলেও আটা কোন জায়গার তা লেখেননি।
চিঠির উত্তর পেয়ে হযরত ইয়াহহিয়া (রঃ) হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য বেরিয়ে পড়লেন। তাঁর বাড়ীতে যখন পৌঁছালেন তখন রাতের প্রথম প্রহর প্রায় অতিক্রান্ত। এত রাতে তাঁর সঙ্গে দেখা না করে সারা রাত তিনি বাইরে কাটিয়ে দিলেন। জানতে পারলেন হযরত বায়েজীদ (রঃ) কবরস্থানে রয়েছেন। তিনিও সেখান গেলেন। দেখলেন, তিনি ধ্যানমগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন- সেই সন্ধ্যা থেকে।
রাত শেষ হয়ে যখন পূবালী আলো ফুটে উঠল আকাশে, তখন নীরবতা ভঙ্গ করে গভীর সুরে তিনি তাঁর প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে বলে ওঠলেন, প্রভু গো! আমি আপনার কাছে আপনার সাহায্য ও অনুগ্রহ ছাড়া আর কিছু চাই না। হযরত মাআয (রঃ) মনে করলেন তাঁর ধ্যান ভঙ্গ হয়েছে। তাই তিনি তাঁর দিকে অগ্রসর হয়ে সালাম জানালেন।
তাঁর গত রাতের অবস্থা জানতে চাইলেন। হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, আল্লাহ্ পাক আজ রাতে আমাকে বিশটি মাকান চিনিয়ে দিলেন। কিন্তু আমি বললাম, প্রভু গো! ওসবে আমার প্রয়োজন নেই। কেননা, সেগুলো শুধু পর্দা বা আবরণ বিশেষ, হযরত ইয়াহইয়া (রঃ) বললেন, প্রভু যখন নিজে থেকে আপনাকে দিতে চাইলেন, তখন আপনি মারেফতের প্রার্থনা করলেন না কেন?