হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ৫
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এক রাতে দেখা গেল, তিনি মসজিদের ছাদের ওপর চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন। আর এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেন সারারাত। তিনি যখন প্রস্রাব করলেন, তখন দেখা গেল প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তের ধারা প্রবাহিত হচ্ছে। এর কারণ কি? তিনি বলেন, আমি যথাযথভাবে আল্লাহ্র এবাদাত করতে পারিনি। আর ছেলেবেলায় একটি পাপ কাজ করেছিলাম। তাই আমি এত ভীতিগ্রস্ত যে, আমার হৃদপিণ্ড বিগলিত হয়ে রক্তে পরিণত হয়েছে। আর তাই বেরিয়ে আসছে প্রস্রাবের সঙ্গে।
হযরত ঈসা বোস্তামী (রঃ) তাঁর ধ্যান সম্বন্ধে বলেন, দু’জানুর মধ্যে মাথা রেখে চোখের দৃষ্টি অবনত করে তিনি ধ্যানে বসতেন। অনেকক্ষণ পর যখন মাথা তুলতেন, তখন তাঁর মুখে থেকে শুধু আহ ধ্বনি উচ্চারিত হত।
একবার ধ্যান-রত অবস্থায় তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে “আমার পবিত্রতা আমারই শ্রেষ্ঠতম গৌরব।” ধ্যান ভাঙলে তাকে তা বলা হল। তিনি চমকে ওঠলেন। সর্বনাশ! তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন, আবার যদি তাঁর মুখ থেকে এ ধারণের কথা বের হয় তাহলে তারা যেন তাকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে। এতটুকু সমীহ করবে না। আল্লাহ্র কী ইচ্ছা। আবারও তিনি ধ্যান-রত অবস্থায় ঐ একই কথা উচ্চারণ করলেন। তাঁর নির্দেশ মতো শিষ্যরা যখন তাকে হত্যা করতে উদ্যত হল, তখন দেখা গেল, সমস্ত ঘর জুড়ে হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর বিশাল আকৃতি।
আর সেই বিরাট বিস্তৃত মূর্তির সঙ্গে ছোট ছোট আরও অসংখ্য হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর মূর্তি। শিষ্যগণ ঐ মূর্তির ওপরেই ছুরিকাঘাত করতে শুরু করল। কিন্তু তাঁর কিছুই ক্ষতি হল না। তিনি সম্পূর্ণ অক্ষত রইলেন। আরও কিছুক্ষণ পর, একটু একটু করে ক্রমশঃ তিনি স্বাভাবিক অবয়বে ফিরে এলেন। তাকে সমস্ত ঘটনা জানানো হল। তিনি বললেন, এর মধ্যে আমার কোন হাত নেই। যা কিছু ঘটেছে, সবই ঘটেছে আল্লাহ্র ইচ্ছায়।
একদিন তাঁর হাতে ছিল একটি পাকা আপেল। তিনি আপেলটির দিকে তাকিয়ে বললেন এটা লতীফ। লতীফ আল্লাহ্র এক নাম- যার অর্থ পবিত্র ও সূক্ষ্মদর্শী। তৎক্ষণাৎ দৈববাণী শোনা গেল, আমার নামকে তুমি আপেলের মধ্যে প্রয়োগ করলে? তোমার কি এতটুকু লজ্জা নেই? আর এই অপরাধের জন্য তাঁর মন থেকে আল্লাহ্র নাম ভুলিয়ে দেওয়া হল। চল্লিশ দিন ধরে তাঁর এই শাস্তি বহাল রইল। এরপর অনুতপ্ত হয়ে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন, জীবনে আর কোন দিন বোস্তামের কোন ফল স্পর্শ করবেন না।
একবার তাঁর নিজেকে মনে হল, একালের তিনিই শ্রেষ্ঠ ওলী। অবশ্য সেই সঙ্গে তাঁর এও মনে হয় যে, এ তাঁর অহমিকা। যাই হোক। প্রচুর অস্বস্তি নিয়ে তিনি খোরাসানের পথে রওনা হলেন। তারপর এক জায়গায় পৌঁছে তিনি আল্লাহ্র দরবারে আরজ করলেন। যতক্ষণ না তাঁর এ দ্বন্দ্ব দূর হয়। ততক্ষণ ওখান থেকে এক পাও নড়বেন না। তিন দিন তিন রাত কেটে গেল। চতুর্থ দিনে দেখলেন, দূর থেকে এ উষ্ট্রারোহী তাঁর দিকে এগিয়ে আসছেন। তাঁর খুব কাছে এসে উট সওয়ার ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, বায়েজীদ! তুমি কি চাও যে, বায়েজীদ-সহ সমগ্র বোস্তাম শহর ধ্বংস করে দিই? তাঁর কথা শুনে হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর সম্বিৎ ফিরে আসে। তিনি আগন্তুকের পরিচয় জিজ্ঞেস করেন। তিনি কোথা থেকে আসছেন, তাও জানতে চান।
আগন্তুক বললেন, তুমি যখন আল্লাহ্র দরবারে শপথ করছিলে, তখন আমি ছিলাম এখান থেকে তিন হাজার মাইল দূরে। সেখান থেকে আমি আসছি। তোমাকে সাবধান করে গেলাম, তুমি তোমার মন নিয়ন্ত্রণে রেখো। এই কথা বলে তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
এ অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রয়োজন ছিল তাঁর। হযরত আবু মূসা (রঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ্র নৈকট্য অর্জনের জন্য আপানকে বড় কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল কি?