হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ২৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দাস বললেন, আপনার।
বল, ক্ষমতা কার?
সবই আপনার।
অতঃপর দাসকে পরিয়ে দেওয়া হল ধৈর্যের পোশাক। এর ফলে দাস মানবীয় স্বভাব মুক্ত হলেন আর অর্জন করলেন তৌহীদের জবান। মনে হল, তাঁর আল্লাহ্র রহমতের প্রশংসাতে, তাঁর চোখ আল্লাহ্র অনুপত সৌন্দর্যরাশিতে এবং তাঁর হৃদয় আল্লাহ্র অনির্বচনীয় আলোকমালায় রূপান্তরিত হল। এখন তাঁর দৃষ্টি সসীম নয়, অসীমের পানে প্রাসারিত। তিনি এখন চিরঞ্জীব। তার আর মৃত্যুর আশঙ্কা নেই। এখন তিনি নিজে চলেন না। নিজে এবাদাত করেন না। সব কিছু অনুষ্ঠিত হচ্ছে মহিমাময় প্রভুর ঈশারা-ইঙ্গিতে। তিনি কেবল উপলক্ষ মাত্র।
অতঃপর তিনি তাঁর প্রতিপালককে বললেন, হে প্রভু! আমি তো এখন আপনার দরবারেরই অধিবাসী। প্রতিপালক বললেন, কিন্তু মানুষ যে তোমাকে দেখতে চায়। বায়েজীদ (রঃ) বললেন, কিন্তু আমি তো তাদের দেখতে চাই না। তবে আপনি যদি আমাকে মানুষের মাঝখানে রেখে দিতে চান, আমার আপত্তি নেই। কেননা, আপনার শক্তি বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার কিছু করার নেই। তবে জনসমাজে আমাকে যদি থাকতে হয়, তাহলে তারা যেন আপনার গুণাবলী আমার মধ্যে দেখতে পায়। বিশেষ করে আপনি আপনার তৌহীদ দিয়ে আমাকে সাজিয়ে দিন। লোকে আমার দিকে তাকিয়ে যেন আপনাকেই দেখে।
আল্লাহ্ তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুর করে তাঁর মাথায় মর্যাদার তাজ পরিয়ে দিলেন। তারপর বললেন, এবার আমার সৃষ্টির নিকটে এস। তিনি দরবার থেকে পা বাড়ানো মাত্র একটা আছাড় খেলেন। তখন প্রভু বললেন, তোমরা আমার বন্ধুর অবস্থা দেখ। সে আমাকে ছাড়া কিছুই জানে না, কিছুই বোঝে না। আমার পথ ছাড়া তাঁর অন্য কোন পথ জানা নেই।
যাই হোক, তিনি দরবেশগণের শেষ সীমানায় উপনীত হয়ে নিজেকে নবী-রাসূলগণের পংক্তির কাছাকাছি দেখতে পেলেন। তারপর ক্রমশঃ তিনি আল্লাহ পাকের এত কাছাকাছি পৌঁছলেন যে, মনে হল, এত কাছে আর কোন মানুষ পৌঁছায়নি। তখন গভীর দৃষ্টি মেলে দেখলেন, তাঁর মাথা রয়েছে আল্লাহ্র এক নবীর পায়ের নিচে। তখন তিনি বুঝলেন, আওলিয়াদের মর্যাদার শেষ সীমা হতে নবী-রাসূলগণের মর্যাদা শুরু।
অতঃপর তাঁর আত্মাকে যখন ফেরেশতা ও জান্নাত-জাহান্নাম দেখানোর উদ্দেশ্যে একদিকে আহ্বান করা হল তখন নবী-রাসূলগণের সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাত হয়ে গেল। তিনি তাঁদের প্রত্যেককে সালাম জানালেন। সব শেষে পৌঁছালেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর পবিত্র আত্মার কাছে। কিন্তু সেখানে রয়েছে অসংখ্যা অগ্নী-সমুদ্র। ভয়ে তার পা বাড়াবার সাহস হল না। তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়ে গেলেন। প্রভুর দীদার লাভ হল বটে। কিন্তু তৌহীদের প্রান্তর অতিক্রম করে রাসূলে করীম (সাঃ)-এর নিজস্ব দরবারে আর পৌছানো গেল না। আল্লাহ্র নিজস্ব দরবারেই রাসূলে করীম (সাঃ)-এর শিবির দৃষ্টিগোচর হল। প্রবল বাসনা থাকা সত্ত্বেও তিনি সেদিকে আর অগ্রসর হতে পারলেন না। প্রচণ্ড ব্যথা পেলেন মনে। এতদূর এসেও শেষ অবধি ওদিকে আর যাওয়া হল না। প্রভুর কাছে এ দুঃখের কথা তিনি প্রকাশও করলেন। প্রভু বললেন, ওদিকে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে যদি যেতে চাও, তাহলে আমার প্রিয় বন্ধু হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর সুন্নত ও তরীকা মজবুত করে ধর।
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ২৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন