হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১৮
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১৭ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর উপদেশ বাণীঃ
আরেফ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন-
১. আরেফের চরিত্রে আল্লাহ্র গুণাবলী থাকবে।
২. ধ্যান ও এবাদত-বন্দেগীর তরবারি দিয়ে যিনি যাবতীয় কামনা-বাসনা কেটে ফেলেছেন, তিনিও খাঁটি আরেফ।
৩. আরেফের কাছে মারেফতের তুচ্ছ একটি বিন্দু জান্নাতের লক্ষ লক্ষ বালাখানা থেকেও মুল্যবান।
৪. আরেফ যখন নীরব, তখন তাঁর ইচ্ছা হয় আল্লাহ্র সঙ্গে কথা বলতে। আর যখন তিনি মুদিত আঁখি, তখন তাঁর ইচ্ছা হয় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। যখন দু’হাটুর মাঝখানে মাথা রেখে তিনি চোখ বুজে থাকেন, তখন তিনি ভাবতে থাকেন, এখন ইস্রাফীল যদি শিঙায় ফুঁ দিতেন, তাহলে মাথা তুললে মাবুদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত হয়ে যেত।
৫. আল্লাহ্ যেমন একা, সঙ্গীবিহীন। একা থাকেন আর একা থাকতে ভালোও বাসেন, তেমনি আরেফও মানুষের ভিড় পছন্দ করেন না। একা থাকতে ভালোবাসেন।
৬. আরেফকে কেউ প্রভাবিত করতে পারে না। কিন্তু সবই তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হয়।
৭. আরেফ নিজেকে নির্বোধ মনে করেন। কিন্তু নির্বোধেরা নিজেদের আরেফ বা বিজ্ঞ মনে করে।
৮. আরেফ হল উড়ন্ত পাখী। আর যারা আরেফ নয়, তারা হল চতুষ্পদ প্রাণী।
৯. আরেফের অন্তর হল স্বচ্ছ কাচে ঘেরা বাতির মতো। তাঁর অত্যুজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয় আলমে আরওয়াহ।
১০. আরেফ পানাহার করেন নিজের সঙ্গে, কেনাকাটা করেন নিজ থেকে। বিক্রি করেন নিজের নিকট। আবার নিজ থেকে তিনি দূরে সুদূরেও থাকেন। নিদ্রায় কিংবা জাগরণে তিনি আল্লাহ্ ছাড়া আর কিছুই দেখেন না। আল্লাহ্ ছাড়া কারো সঙ্গে তিনি মিলিতও হন না আর নিজের মনের কথা আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো কাছে প্রকাশও করেন না।
১১. আরেফের জন্য যা অবশ্য পালনীয়, তা হল বিষয়-বিভব থেকে নিস্পৃহ থাকা। জান্নাতের ভরসা না করা ও জাহান্নামের পরোয়া না করা।
আল্লাহ্র আনুগত্য প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন-
১. আল্লাহ্র আনুগত্য অক্ষুণ্ণ রাখতে হলে মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুবরণ কর।
২. ক্ষুধার্ত থাকার লাভ কি? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ক্ষুধার্ত থাকলে ফেরাউন ‘আমি তোমাদের আল্লাহ্’- এই কথা বলার সুযোগ পেত না।
একজন বলল, আল্লাহ্র আনুগত্যের ব্যাপারে মনে হয় অলৌকিক ক্ষমতাও অন্তরায়। যেমন- আপনি পানির ওপর হাঁটতে পারেন, শূন্যে উড়তে পারেন, এক রাতে মক্কায় পৌঁছাতে পারেন। এগুলো কি মনের মধ্যে অহংকার সৃষ্টি করে না? তিনি বললেন, এ তোমার ভুল ধারণা। এক টুকরা কাঠও পানিতে ভাসতে পারে। ক্ষুদ্র বালুকণাও বাতাসে উড়তে পারে। জাদুকরও এক রাতের মধ্যে হিন্দুস্তান থেকে বেলুচিস্তানে যেতে পারে। অতএব, অলৌকিক শক্তি কী এমন বস্তু যে, তার দ্বারা অহমিকা সৃষ্টি হবে?
৪. আল্লাহকে পাওয়ার পথ কি?
উত্তরঃ অহম বা আমিত্ব বর্জন করা।
৫. তিনি বলেন, দুটি জিনিস ধ্বংস ডেকে আনবে। যথা-
(ক) আল্লাহ্র সৃষ্টিকে সম্মান না করা ও
(খ) আল্লাহ্র অবদান স্বীকার না কারা।
৬. আল্লাহ্ আপন ইচ্ছায় কি তাঁর দাসদের জান্নাতবাসী করেন না?
উত্তরঃ হ্যাঁ, তা করেন বৈকি! তবে কথা হল, আল্লাহ্ যাকে উচ্চস্তরে নিয়ে গেছেন, তার আর জান্নাতের দরকার কি?
৭. আল্লাহকে যাঁরা পেয়েছেন, তাঁরা জান্নাতের শোভা বর্ধন করেন ঠিকই। কিন্তু জান্নাত তাদের জন্য এক আযাব ছাড়া অন্য কিছু নয়।
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১৯ পড়তে এখানে ক্লিক করুন