হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১১
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১০ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত ইব্রাহীম হারাবী (রঃ) বললেন, আপনার এবং আমার মিলিত সুপারিশ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সুপারিশের তুলনায় খুবই নগণ্য। হজরত বায়েজীদ (রঃ) চুপ করে রইলেন।
যাই হোক, পরে তাঁরা এক সঙ্গে খেতে বসলেন। কিন্তু হযরত ইব্রাহীম হারাবী (রঃ)-এর মনে হল, এ খাবার বায়েজীদ (রঃ)-এর মত এক জ্ঞানী সাধকের পক্ষে সঙ্গত নয়। বায়েজীদ বোস্তামী
(রঃ) তাঁর মনের কথা টের পেলেন। কিন্তু মুখে কিছু বললেন না।
আহার ও বিশ্রামের পর তাঁকে নিয়ে গেলেন ঘরের এক দেওয়ালের কাছে। হাত দিয়ে দেওয়ালে আঘাত করা মাত্র একটি ফুটো হয়ে গেল। বায়েজীদ (রঃ) তাঁর অতিথিকে বললেন, এই ফূটো দিয়ে বাইরে দেখুন। হযরত হযরত ইব্রাহীম হারাবী (রঃ) বললেন, আপনি বন-জঙ্গলের যবের যে রুটি খান, তাতে বুনো জন্তুরা মলত্যাগ করে। আপনি সে খবর রাখেন না। অথচ মনে মনে ভাবেন, যারা উপাদেয় খাবার খায় তাঁরা ধর্মনিষ্ট হতে পারে না।
এ কথায় বড় লজ্জা পেলেন হযরত ইব্রাহীম হারাবী (রঃ)। বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ)-এর কাছে তিনি ক্ষমা চেয়ে নিলেন।
একবার বোস্তামে শুরু হয়ে গেল দুর্ভিক্ষ। অনাবৃষ্টির দরুন এ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। শহরবাসী আল্লাহ্র দরবারে আকুল প্রার্থনা জানাল। বৃষ্টির জন্য এস্তেস্কা নামাজ আদায় করল। কিন্তু কিছুই হল না। একফোঁটা বৃষ্টি ঝরল না আকাশ থেকে। হযরত বায়েজীদ (রঃ) তখন শহরের বাইরে ছিলেন। হঠাৎ তিনি ফিরে এলেন। আর সবাই তাঁকে ধরে বসল, তিনি যেন বৃষ্টির জন্য আল্লাহ্র দরবারে দোয়া করেন।
হযরত বায়েজীদ (রঃ) দুই জানুর মধ্যে মাথা রেখে আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে কী যেন বললেন কিছুক্ষণ। তারপর জনগণকে বললেন, যাও, বাড়ী ফিরে গিয়ে পানি নিস্কাশনের নালাগুলো পরিষ্কার কর। এক্ষুনি বৃষ্টি হবে। আর তাঁরা বাড়ী পৌছাবার আগেই সারা আকাশ ছেয়ে গেল ঘন কালো মেঘে। মুষলধারে শুরু হয়ে গেল বৃষ্টি। তা স্থায়ী হল দীর্ঘক্ষণ।
শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না বায়জীদ (রঃ)-এর। চুপচাপ বসে আছেন। এভাবে বসে থাকতে থাকতে দেহ অবসন্ন হয়ে এল। একবার পা দু’খানি সামনের দিকে ছড়িয়ে দিলেন। সেদিকে শহরের একজন গন্যমান্য ব্যক্তি বসে ছিলেন। হযরতের দেখাদেখি তিনিও তাঁর পা দু’খানি, প্রসারিত করলেন। বড় অহঙ্কারি ব্যক্তি তিনি । হযরতের প্রতি প্রচ্ছন্ন ঈর্ষাও ছিল। মাঝে মাঝে হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর সভায় এসে বসতেন। আর চুপচাপ তাঁর কথা শুনতেন। কিন্তু সেদিন তিনি যখন দেখলেন, হযরত বায়েজীদ (রঃ) তাঁর পদযুগল প্রসারিত করলেন, তখন তাঁর খুব রাগ হল। আর তিনিও তার পা ছড়িয়ে দিলেন সামনের দিকে। সভায় যারা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা বলে উঠলেন, আহা! থাক না। উনি একটু আরামে বসুন।
কিছুক্ষণ পর হযরত বায়েজীদ (রঃ) পা গুটিয়ে পুনরায় স্বাভাবিকভাবে বসলেন। আর ভদ্রলোকও পা টেনে বসতে চাইলেন। কিন্তু তা আর হল না। পা গুটানো গেল না। সোজা হয়েই থাকল।
এবার তিনি বুঝতে পারলেন যে, আল্লাহ্র বন্ধুর প্রতি তিনি যে ঈর্ষা পোষণ করেন, বা আজ যে অশিষ্ট আচরণ দেখিয়েছেন, এ তারই ফল। নিজের ভুল বুঝতে পেরে তিনি হযরত বায়েজীদ (রঃ) এর পা জড়িয়ে কেঁদে ওঠলেন। আমাকে মাফ করুণ হুযুর। আমি বুঝতে পারিনি।
হযরত বায়েজীদ (রঃ) তাঁর মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি আপনাকে মাফ করেছি। মনে রাখবেন, মনের পবিত্রতাই মানুষের পরম সম্পদ। যার মন পবিত্র ও কালিমাশূন্য, আল্লাহ্ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করেন।
বোস্তাম শহরের এক দরবেশের মনেও তেমনি অহংকার ছিল। হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ)-কে তিনিও তাঁর চেয়ে ক্ষুদ্র বলে মনে করতেন। অবশ্য তিনিও মাঝে মাঝে হযরতের দরবারে গিয়ে বসতেন। আর এমন ভঙ্গি করতেন, যাতে মনে হত, হযরতের তুলনায় তিনি সত্যিই এক উঁচু দরের সাধক।
একদিন তিনি হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর কাছে একটি বিষয় জানতে চাইলেন। তিনি তা বুঝিয়ে দিলেন। কিন্তু মনে যার ব্যাধি, তিনি অত সহজে বুঝবেন কেন? তাই, আবারও বললেন, বিষয়টি আরও বিশদ করুণ। বায়েজীদ (রঃ) তার মনের কথা খুব ভালো করে জানতেন। তাই বললেন, আরও বিশদ জানতে হলে আপনাকে যেতে হবে ঐ অদূরবর্তী গুহায়। ওখানে আমার এক বন্ধু আছেন। তাঁর কাছে গিয়ে জেনে আসুন।
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন