হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১০
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ৯ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, আমার সঙ্গে সে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল, বোস্তাম শহরে সে প্রবেশ করবে না। কিন্তু সে তাঁর কথা রাখেনি। তাই তাঁকে বন্দী করে রেখেছি।
শয়তানকে যিনি বন্দী করতে পারেন, তাঁর আল্লাহ-প্রদত্ত শক্তি সম্বন্ধে আর কোন সন্দেহ থাকতে পারে না।
মাঝে মাঝে দেখা যেত, হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর বাড়ীতে মহিলাদের প্রচুর ভিড়। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, ওঁরা ফেরেশতা। কালাম শেখার জন্য তাঁর কাছে আসে। একবার প্রথম আকাশের একদল ফেরেশতা এসে তাঁর সঙ্গে এবাদাত করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। তিনি তাঁদের জানান, আল্লাহ্র সাধনা করার শক্তি তাঁর নেই। কিন্তু তবুও সপ্ত আকাশ থেকে দলে দলে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে ঐ একই ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। আর তিনিও ঐ একই উত্তর দিলেন।
তখন তারা জিজ্ঞেস করেন, আপনার এ শক্তি কি কখনও হবে? তিনি বলেন, শেষ বিচারের দিনে যখন হিসাব-নিকাশ শেষ হবে, তখন তিনি আল্লাহ্র ধ্যান করতে করতে পবিত্র আরশ প্রদক্ষিণ করবেন।
এক রাতে অপারর্থিব আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠল হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর ঘর। তিনি তখন আলোর উদ্দেশ্যে বললেন, হে আলো। এ যদি শয়তানের কারসাজি হয়, তাহলে আমাকে প্রতারিত করার সাধ্য তোমার নেই। আর তুমি যদি আল্লাহ্র নিকটবর্তী ফেরেশতাগণের তরফ থেকে এসে থাক, তাহলে তোমাকে সেবা করার সুযোগ দাও, যাতে আমি অলৌকিক শক্তির অধিকারী হয়ে মর্তবা হাসিল করতে পারি।
এক রাতে এবাদাত করে তিনি কোন তৃপ্তি অনুভব করলেন না। তিনি তাঁর সেবককে বললেন, দেখ তো বাড়ীতে কিছু আছে কিনা। খাদেম খুঁজে পেল এক গুচ্ছ আঙ্গুর। তিনি তখনই সেগুলো গরীব-দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে বললেন। আর সেটা করা মাত্র তিনি এবাদাতের স্বাদ পেতে লাগলেন।
প্রতিবেশীদের প্রতি তিনি যথেষ্ট কর্তব্যপরায়ণ ছিলেন। এক দরিদ্র ইহুদী রুজি-রোজগারের জন্য প্রায়ই বাইরে বাইরে কাটাতো। তাতে তাঁর পরিবারবর্গের খুবই অসুবিধা হত। এমনকি তেলের অভাবে ঘরে আলো জ্বলত না। তার একটি শিশু সন্তান ছিল। রাতের বেলায় সে খুব কান্নাকাটি করত। হযরত বায়েজীদ (রঃ) ঐ ঘরে আলো জ্বালাবার ব্যবস্থা করে দেন।
ইহুদী ফিরে এসে এ কথা শুনে খুশী। হযরতের প্রতি তার শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, শুধু বাইরের আধারে নয়, আমরা রয়েছি ভেতরের আধারে চল, তার কাছে গিয়ে এ আঁধার দূর করি। স্বপরিবারে হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর কাছে গিয়ে তিনি ইসলামের দীক্ষা গ্রহণ করেন। ইসলামের আলো এসে তাঁদের মনের কালিমা ও আঁধার দূর করে দেয়।
এক অগ্নিপূজকে ইসলাম গ্রহণ করতে বলা হয়। তিনি বললেন, বায়েজীদ (রঃ) যে ইসলাম পালন করেন, তা অনুসরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তোমরা যে ইসলাম নিয়ে আছ, তার প্রতি আমার এতটুকু শ্রদ্ধা নেই। অর্থ্যৎ বায়েজীদ (রঃ) কতদূর ধর্মনিষ্ট ছিলেন তার মন্তব্য থেকে বেশ স্পষ্ট হয়।
একদিন হযরত বায়েজীদ (রঃ) তার শিষ্যদের বললেন, আল্লাহ্র একজন ওলী আসছে। চল, আমরা তাঁকে স্বসম্মানে এগিয়ে আনি।
সত্যিই সেদিন একটি গাধার পিঠে চড়ে হযরত ইব্রাহীম হারাবী (রঃ) এসে হাজির। তিনি হযরত বায়েজীদ (রঃ)-কে বললেন, আপনি কী করে জানলেন যে আমি আসছি? হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, আল্লাহ্ আমাকে জানিয়ে দেন যে, তাঁর এক বন্ধু আসছেন। তাঁকে স্বসম্মানে বরণ করে তাঁর দ্বারা আল্লাহ্র দরবারে আমি যেন সুপারিশ করিয়ে নিই।
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন