হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ৬
হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
২৩. একবার পায়ের ব্যথা শুরু হতেই হযরত জুনায়েদ (রঃ) সূরা ফাতিহা পাঠ করে ফুঁ দিলেন। আর অমনি অদৃশ্য আওয়াজ ভেসে এল, আমার পবিত্র কালামকে তুমি তোমার নফসের কাজে ব্যবহার করছ, এতে কি তোমার এতটুকু লজ্জা হচ্ছে না?
২৪. একবার চোখের অসুখ দেখা দিল। এক অগ্নিপূজক চিকিৎসক চোখে পানি দিতে বারণ করলেন। তিনি বললেন, তা কি করে হয়? ওজু করতে হবে তো। চিকিৎসক কিছু না বলে চলে গেলেন। অতঃপর হযরত জুনায়েদ (রঃ) ওজু করে এশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে গেলেন। সকালে ঘুম ভাঙলে দেখা গেল অসুখ সেরে গেছে। তখন তাঁর কাছে অদৃশ্য শব্দ এল-এবাদতের কারণে তিনি চোখের অসুখের কথা উপেক্ষা করছেন। তাই আল্লাহ্ তাঁর অসুখ সারিয়ে দিয়েছেন। পরে তাঁর চক্ষু চিকিৎসক জিজ্ঞেস করলেন, একটি রাতের মধ্যে এ অসুখ সারলো কী করে? তিনি বললেন, ওজু করার কারণে। তখন চিকিৎসক বললেন, আসলে আমিই ছিলাম রোগী, আর আপনি চিকিৎসক। অতঃপর তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করলেন।
২৫. হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর দরবারে গমনরত এক জ্ঞানী ব্যক্তি দেখলেন শয়তান ইবলীস কোথায় যেন দৌড়ে পালাচ্ছে। আর দরবারে উপস্থিত হয়ে দেখলেন, হযরত জুনায়েদ (রঃ) রীতিমত ক্রুদ্ধ। তখন জ্ঞানী ব্যক্তি বললেন, হুজুর ক্রোধ সংবরণ করুন। কেননা ক্রোধের অবস্থায় শয়তান জয়লাভ করেন। তিনি পথে দেখা ঘটনাটিও বললেন। হযরত জুনায়েদ (রঃ) বললেন, সে আমাকে ক্রুদ্ধ দেখলেই পালিয়ে যায়। কেননা, প্রবৃত্তিগত কারণে আমি তাঁর প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করি না। বরং তা আল্লাহ্র জন্য। আর অন্য লোকের রাগ হয় নফসের তাড়নায়। আল্লাহ্ পাক স্বয়ং যদি দুরাচার শয়তানের হাত থেকে অব্যাহতি লাভে প্রার্থনার আদেশ না দিতেন, তাহলে আমি কখনই তার থেকে আত্মরক্ষার জন্য প্রার্থনা করতাম না। কেননা, সে নিজেই আমার ক্রোধের ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়। তার থেকে পরিত্রাণ লাভের কামনা করার তো প্রশ্নই ওঠে না।
২৬. একবার ইবলীস দাঁড়িয়ে আছে মসজিদের বাইরে মানুষের রূপ ধরে। হযরত জুনায়েদ (রঃ) তাঁকে সনাক্ত করে জিজ্ঞেস করলেন, হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করতে কে তোমাকে নিষেধ করেছিল? উত্তর না দিয়ে ইবলীস পালটা প্রশ্ন করে, আপনি বলুন তো, আমার জন্য আল্লাহ্ ছাড়া আর কাউকে সেজদা করা কি জায়েজ ছিল?
ইবলীসের এই তাৎক্ষণিক সূক্ষ্ণ প্রত্যুত্তর শুনে হযরত জুনায়েদ (রঃ) হতবাক হয়ে গেলেন।
তখন ধ্বনিত হল অদৃশ্য কন্ঠঃ তুমি ইবলীসকে বল, তুই ভীষণ মিথ্যাবাদী। সত্যবাদী হলে হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার আল্লাহ্র আদেশ কখনই অমান্য করতে পারতিস না। কেননা, আল্লাহ্র আদেশ অগ্রাহ্য করার অধিকার কারোর নেই। ইবলীস অনুমান করতে পারলো যে, হযরতের প্রতি অদৃশ্য বাণী এসে গেছে। অতএব, কালবিলম্ব না করে সে দৌড়ে পালাল।
২৭. একটি লোক দরবারে বারবার বলছিল-এ যুগে ধর্ম-ভ্রাতা আর ধার্মিকের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। হযরত কথাটি কয়েকবার শুনলেন। তারপর বললেন, তুমি যদি এরূপ ধরম-ভ্রাতা চাও যে তোমার বোঝা বহন করতে সক্ষম, তাহলে তা সহজে মিলবে না ঠিকই, তবে তুমি যদি এমন লোক চাও যে, তুমি তার বোঝা বহন করবে, তাহলে এমন লোক তোমাকে অনেক দেখাতে পারি।
২৮. একবার তাঁকে কাঁদতে দেখে কারণ জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেন, সারা জীবন ধরে আমি আপদ-বিপদের খোঁজ করছি এই জন্য যে, তেমন কিছু এলে আমিই তার প্রথম শিকার হতে এগিয়ে যাব। কিন্তু, আমি শুধু শুনেই যাচ্ছি যে, আমার সাধনা এখনও বিপদের সঙ্গে মোকাবিলা করার মতো শক্ত ও যোগ্যতাসম্পন্ন হয়নি।
২৯. হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর বাণী সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় ইবনে শুরাইহকে। তাঁর উক্তিগুলি কিরূপ মনে করেন?
ইবনে শুরাইহ বললেন, খুবই আশ্চর্যজনক। কথাগুলি তিনি কি নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি বলে বলেন? ইবনে শুরাইহ বললেন, তা বলতে পারি না। তবে এটা ঠিক যে, কথাগুলি সবই গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। মনে হয়, যেন আল্লাহ্ তাঁর মুখ দিয়ে বলাচ্ছেন। তিনি আরও বললেন, আমার এ মন্তব্যের প্রমাণ এই যে, তিনি তওহীদের ওপর কথা বলেন, তখন সেগুলি এমন নতুন ধরনের হয় যে, সবাই তা অনুধাবন করতে সক্ষম।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া