হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ১৩

হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ১২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

৬০. তওহীদ কি?

উত্তরঃ আল্লাহ্‌র একত্ববাদে নিজেকে নিমজ্জিত করে নিজেকে লুকিয়ে ফেলা।

৬১. ফানা ও বাকা কি?

উত্তরঃ ফানা বা ধ্বংস হল- আল্লাহ্‌ ছাড়া সৃষ্টির সবকিছুই ধ্বংসশীল বলে বিশ্বাস করা। আর বাকা হল স্থায়িত্ব একমাত্র আল্লাহ্‌র জন্য বলে বিশ্বাস রাখা।

৬২. গবেষণার স্বরূপ যথাঃ (ক) আল্লাহ্‌র আয়াত বা নিদর্শনের ওপর চিন্তা-ভাবনা করা, (খ) আল্লাহ্‌র নিয়ামত ও এহসান সম্বন্ধে সূক্ষ্ণ চিন্তা করা, (গ) কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতিসমূহ সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করা ও (ঘ) নিজ আত্মা এবং আত্মার অসংখ্যা গুণরাশি সম্বন্ধে সূক্ষ্ণ চিন্তা করাকে বলে গবেষণা।

৬৩. দাস যখন প্রতিটি বস্তুর মালিক একমাত্র আল্লাহ্‌ বলে মনে করে, দুনিয়ার সবকিছুর আত্মপ্রকাশ আল্লাহ্‌ হতে বলে বিশ্বাস করে, দুনিয়ার সবকিছুর অস্তিত ও স্থায়িত্ব আল্লাহ্‌র হাতে বলে বিশ্বাস স্থাপন করে, আর প্রত্যেক বস্তুর প্রত্যাবর্তন আল্লাহ্‌র দিকেই বলে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে, তখনই দাসত্বের স্বরূপ প্রকাশ পায়।

৬৪. সত্যবাদীর গুণের নাম হল সততা। কথায়, কাজে ও অবস্থায় যিনি সৎ, তিনিই সিদ্দীক।

৬৫. আল্লাহ্‌র কাজে রিপুকে বের করে দেওয়াই হল বিশুদ্ধতার পরিচয়।

৬৬. প্রতি মুহূর্তে আযাবের আশঙ্কার সন্ত্রস্ত হয়ে থাকাকে বলে ভয়।

৬৭. কেউ সরল অন্তঃকরণ কিছু প্রার্থনা করলে তাকে তা দান করে প্রতিদান না চাওয়াকে বলে সহানুভূতি।

৬৮. যে দরবেশ আল্লাহ্‌র খুশীতে খুশী থাকেন তিনিই সেরা সাধক।

৬৯. যে ব্যক্তি উপকার করে ভুলে যায় ও মানুষের অপরাধ ক্ষমা করে, তার সাহচর্য গ্রহণ করবে।

৭০. যে আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্যের উপাসনা করে না, সে-ই দাস।

৭১. যে জ্ঞানের এবং আল্লাহ্‌র আশ্রয়ে থাকে, তাকেই বলে মুরীদ বা শিষ্য।

৭২. মাথা নত রাখা ও মাটিতে শয়ন করাকেই বলে দীনতা।

৭৩. বৈধ থেকে অবৈধের দিকে মুখ ফেরানো হল আলেমের পদস্খলন।

৭৪. স্থায়িত্ব থেকে ধ্বংসের দিকে আসক্ত হওয়া হল দরবেশদের পদস্খলন আর আল্লাহ্‌ থেকে অলৌকিকতার দিকে ফিরে আসা হল তত্ত্বজ্ঞানীর পদস্খলন।

৭৫. হযরত জুনায়েদ (রঃ) বলতেন, হে দয়াময়, রোজ কিয়ামতে আমাকে অন্ধ করে দেবেন। কেননা, যে আপনাকে দেখে না তার জন্য অন্ধ থাকাই শ্রেয়। তাহলে সে অন্য কাউকেও দেখতে পাবে না।

অস্তিম মুহূর্ত ঘনিয়ে এলে হযরত জুনায়েদ (রঃ) তাঁর শিষ্যগণকে বললেন, আমাকে ওজু

করিয়ে দাও। শিষ্যগণ ওজু বানিয়ে দিলেন। কিন্তু ভুলবশতঃ তাঁর আঙুল খিলাল করানো বাকী থেকে গেল। তিনিই তা মনে করিয়ে দিলেন। আর তা করা হল। তারপর তিনি সেজদায় গিয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলেন। শিষ্যেরা বললেন, সারা জীবন এত নামাজ, এত সেজদা করলেন! এখন শেষ মুহূর্তেও সেই সেজদা! এখনও কি সেজদার সময় আছে? তিনি বললেন এই সময়ের মতো এত অধিক মুখাপেক্ষী তিনি আর কখনও হননি। অতঃপর তিনি কুরআন পাঠ করতে শুরু করলেন। শিষ্যরা বললেন, এখন আপনি কুরআন পাঠ করতে শুরু করলেন? হযরত বললেন, এ সময় থেকে উত্তম আমার জন্য আর কী হতে পারে? সময় বড় সঙ্কীর্ণ। আর কয়েক মুহূর্ত পরেই আমলনামা গুটিয়ে ফেলা হবে। আমি চোখের সামনে দেখছি, আমার সত্তর বছরের এবাদতসমূহ শূণ্যে চুলের মতো একটি সূক্ষ্ণ সুতায় ঝুলছে আর প্রবল বাতাসে তা দুলছে। আমি বলতে পারি না, ঐ প্রবল বায়ু কি? সে আমার মিলন ঘটাবে নাকি বিচ্ছেদ? একদিকে দেখছি পুলসেরাত। অন্য দিকে অপেক্ষামাণ মালাকুল মওত। কাজীকেও দেখতে পাচ্ছি- যার গুণ সুবিচার করা। তিনি তো আমার দিকে ফিরেও দেখছেন না। সামনে রয়েছে অনেকগুলি পথ। জানি না, কোন পথে আমাকে নিয়ে যাওয়া হবে।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।