হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-৩য় পর্ব
হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অযথাই তুমি আমার সাথে এ দুর্ব্যবহার করতেছ। আমি এখনও তোমাকে পরামর্শ দিচ্ছি, তুমি আল্লাহ্ পাকের খাঁটি ধর্মে দীক্ষত হয়ে যাও তোমার ঐ সব ভুয়া দেব-দেবির উপাসনা পরিত্যাগ কর।
হযরত জারজীস (আঃ) কথা শুনে পুনরায় ক্রোধে গর্জন করে উঠল এবং তাঁর নতুন কতিপয় অনুচরকে ডেকে বলল, তোমরা একটি লৌহ দণ্ড জলন্ত আগুনে ধর। তা যখন উত্তপ্ত হয়ে আগুনের বর্ণ ধারণ করবে, তখন তা ঐ লোকটির মস্তক চেপে ধরবে। এবং যতক্ষন পর্যন্ত সে মারা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁকে এ শাস্তি দিতে থাকবে।
বাদশাহর নির্দেশমাত্র হযরত জারজীস (আঃ) এর প্রতি এ অত্যাচার শুরু করল। কিন্তু আল্লাহ্ পাকের অসীম রহমতে তাতেও তিনি কোনরূপ ক্লেশ অনুভব করলেন না। মোট কথা, তাঁকে হত্যা করার এ প্রচেষ্টাও আল্লাহ্ পাক ব্যর্থ করে দিলেন।
বাদশাহ দাদিয়ান এ অবস্থা দেখে একেবারে অস্থির হয়ে গেল। কিভাবে হযরত জারজীস (আঃ) কে হত্যা করা যায় তেমন কোন কার্যকারী ব্যবস্থাই সে আর খুঁজে না পেয়ে তাঁদের লোকদেরকে নির্দেশ দিল, তোমরা জারজীসকে কারাগারে নিয়ে ভুতলে উপুড় করে লৌহ দণ্ড দ্বারা অনাবরত তাঁর পা ও মাথায় সজোরে প্রহার করতে থাক। আর তাঁর পিঠের উপর ভারী পাথর চাপিয়ে দাও যেন তাঁর জিহ্বা বের হয়ে যায়।
বাদশাহর নির্দেশ অনুযায়ী হযরত জারজীস (আঃ) কে সত্যিই কারাগারে নিয়ে উপুড় করে শোয়ায়ে তাঁর পিঠে ভারী পাথর চাপিয়ে দিয়ে কয়েকজন লোক একই সাথে তাঁকে লৌহদন্ড দ্বারা প্রহার করতে লাগল। অবিরাম এ কঠোর নির্যাতন চলাকালে আল্লাহ্র পক্ষ হতে কতিপয় ফেরেস্তা আগমন করে হযরত জারজীস (আঃ) কে বললেন, হে আল্লাহ্র নবী! পাপীষ্ট কাফির আপনার প্রতি যে কঠোর নির্যাতন শুরু করেছে তা সহ্য করা শক্তির সীমার বাইরে। তবুও আপনি মহান আল্লাহ্ পাকের উপর নির্ভর করে ধৈর্যাবলম্বন করুন। তাতে আল্লাহ্ পাকের দরবারে আপনার মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হবে। কোনক্রমে আপনি অধের্য হবেন না।
হযরত জারজীস (আঃ) কাফিরদের অত্যাচার নীরবে সহ্য করে মনে মনে শুধু আল্লাহ্র পবিত্র নাম জপতে থাকলেন, এভাবে একাধারে একমাস কাল শাস্তি প্রদান করে যখন বাদশাহর লোকজন দেখল, হযরত জারজীস (আঃ) সম্পূর্ণ মৃতের মত পড়ে রয়েছে। তাঁর কোন অঙ্গ প্রতঙ্গেই জীবিত লোকের কোন নিদর্শন মিলতেছে না, তখন তাঁরা মনে করল যে, হযরত জারজীস (আঃ) নিঃসন্দেহে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যু বাক্তির উপর শাস্তি প্রদান করা নিরর্থক মনে করে তাঁর পিঠের উপর হতে ভারী পাথর খানা নামিয়ে রেখে তাঁরা চলে গেল এবং হযরত জারজীস (আঃ) এর মৃত্যু হয়েছে বলে বাদশাহর নিকট সংবাদ পৌছাল।
বাদশাহ খবর শুনে খুশি হল এবং এতদিন পরে তাঁর একটি মস্ত বড় বিপদ দূর হয়ে গেল মনে করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করল।
কিন্তু পরদিন ভোরে যখন বাদশাহ দরবারে এসে শাহী কাজ কর্ম শুরু করল, ঠিক সে মুহুর্তে হযরত জারজীস (আঃ) বাদশাহর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে বাদশাহ? আমি তোমার দরবারে পুনরায় আসলাম এ জন্য যে, এখনও তোমার হুশ হওয়া উচিত। আমি তোমাকে সতর্ক করতেছি তুমি ভ্রান্ত পথ পরিত্যাগ করে সৎপথ অবলম্বন কর।
বাদশাহ হযরত জারজীস (আঃ) কে দেখামাত্র তাঁর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সে কিছুই বুঝে উঠতে পারল না যে, হযরত জারজীস (আঃ) কি উপায় তাঁর এত কঠোর নির্যাতন হতে প্রতিবারই প্রাণ রক্ষা করতেছেন? সে ভাবতে লাগল কোন প্রক্রিয়ার দ্বারা তাঁর প্রাণ সংহার করতে পারবে। কিছুক্ষণ ভেবে সে তাঁর দরবারে করাত এনে অনুচরগণকে হুকুম করল, তোমরা তাঁর দেহটি চিরে দুখণ্ড করে তা টুকরো টুকরো করে ফেল। অতঃপর ঐ টূকরাগুলো খাঁচায় আবদ্ধ বাঘের সামনে দাও। আমি দেখতে চাই বাঘ তাঁর মাংস খেয়ে ফেলছে।