হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-২য় পর্ব

হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

বাদশাহ দাদিয়ান জিজ্ঞেস করল। তোমার পারলৌকিক সুখ শান্তির দৃষ্টান্ত কিরুপ?

হযরত জারজীস (আঃ) বললেন, পারলৌকিক খুশির দৃষ্টান্ত হল, মহাশান্তিময় খুশীর বেহেস্ত। কোনরূপ দুঃখ কষ্ট ও চিন্তা ভাবনার স্থান নেই। যে বেহেস্ত প্রবেশ করতে পারে তাঁর জন্য দুঃখ কষ্ট হারাম হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যে পার্থিব জগতে বসে নিরাকার আল্লাহ্‌ পাককে অবহেলা করে দেব মূর্তির পূজা করে, পরকালে তাঁর স্থান হবে জাহান্নাম। অনন্তকাল সেখানে আগুনের আযাব ভোগ করতে হবে।

হযরত জারজীস (আঃ) এর এ প্রকার স্পষ্ট উক্তির কারণে বাদশাহ দাদিয়ান তাঁর প্রতি ক্রোধে একেবারে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠল। সে বলে উঠল, তোমার স্পর্ধা এবং সাহস সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আমার সামনেই তুমি আমাদের পুজনীয় দেব মূর্তির কুৎসা প্রচার এবং তোমার উপাস্যের বাহাদুরী প্রচারের ধৃষ্টতা প্রদর্শন করতেছ। তোমাকে এ ধরণের স্পর্ধা দেখাবার প্রতিফল আমি তোমাকে এখনই দিতেছি। দেখব তোমার কোন উপাস্য তোমাকে আমার শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারে? এ কথা বলে বাদশাহ তখনই হুঙ্কার দিয়ে উঠল, তোমার কে কোথায় আছ! যাও এ স্পর্ধিত লোকটিকে বন্ধী করে শুলে চড়িয়ে হত্যা করে ফেল।

বাদশাহর আদেশ তখনই পালিত হল। বাদশাহর অনুগত কাফিরগণ তাঁকে শুলে চড়িয়ে হত্যা করে একটা প্রকাণ্ড অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে ফেলল। কিন্তু আল্লাহ্‌ পাকের কি অপূর্ব মহিমা ও অবিশ্বাস্য ব্যাপার! হযরত জারজীস (আঃ) কে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করার পরমুহুর্তেই তিনি সে ভীষণ অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে অত্যন্ত শান্ত এবং সুস্নিগ্ধ কণ্ঠে পাঠ করতে লাগলেন, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং বলতে লাগলেন, হে মানবগণ! তোমরা জেনে রাখ আল্লাহ্‌ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। তোমরা সকলেই তাঁর ইবাদাত কর। এবং জঘন্য মূর্তি পূজাকে পরিহার কর।

এ অদ্ভুত ঘটনা দেখে বাদশাহ দাদিয়ান বলল, লোকটি কিভাবে প্রাণ বাচাল? তবে যেভাবে হোক তাঁকে ধ্বংস করতেই হবে। তোমরা একটি বৃহৎ ডেগ ভর্তি পানির মধ্যে তাঁকে রেখে পানি গরম করতে থাক। যতক্ষন ঐ তীব্র উষ্ণ গরমে তাঁর দেহ গলে না যায়। ততক্ষণ তা জাল দিতে থাক। বাদশাহর অনুচরগণ অনবরত একদিন একরাত পানিতে জ্বাল দিল। কিন্তু দেখা গেল, হযরত জারজীস (আঃ) এর তাতে কিছু হয়নি। মাছ যেভাবে পানিতে সাঁতার কাটে, হযরত জারজীস (আঃ) ঠিক সেভাবে পরম আনন্দে গরম পানির মধ্যে সাঁতার কাটতে লাগলেন। তাঁর সামান্য মাত্র ক্লেশ বা অসুবিধা হল না। তিনি সেই গরম পানির মধ্য হতে বলতে লাগলেন, হে মুর্খ বাদশাহ! তুমি ভুল পথ পরিত্যাগ করে এখনও সৎ পথ অবলম্বন কর। তাতে তোমার পরিণতি কল্যাণকর ও মঙ্গলময় হবে।

বাদশাহ দাদিয়ান তাঁর ব্যর্থতার গ্লানিতে ক্রমেই অধিকতর উত্তেজিত ও দিশেহারা হয়ে উঠছিল। সে এবার তাঁর অনুচরগণকে বলল, তোমরা এবার এক কাজ কর, ডেকের মধ্যে তামা দিয়ে জ্বাল দিতে থাক। যখন তামা গলে তরল পানির ন্যায় হবে তখন তাঁকে ঐ ডেকের মধ্যে রেখে ডেগটির মুখ বন্ধ করে পুনরায় জ্বাল দিতে থাক।

বাদশাহর অনুচরগণ তাঁর নির্দেশমত কাজ করতে লাগল। আগুনের জ্বালে তামা গলে ডেকের মধ্যে যখন টগবগ করতে লাগল, তখন ডেকের ঢাকনা খুলে তাঁরা দেখতে পেল যে, হযরত জারজীস (আঃ) ডেকের মধ্যে গরম তামাগলিত পানিতে আনন্দ চিত্তে বসে আল্লাহ্‌র ইবাদাত করতেছেন। এ দৃশ্য দেখে বাদশাহ অবাক বিস্ময় তাঁর নিকট জিজ্ঞেস করল, হে জারজীস! বলতো তুমি আমার এ ভীষণ শান্তিগুলোর মধ্যে কিভাবে প্রাণ রক্ষা করতেছ?

হযরত জারজীস (আঃ) বললেন, হে অবিশ্বাসী কাফির! তুমি আমার মহান আল্লাহ্‌ পাকের শক্তির কি বুঝবে? তিনি যাকে রক্ষা করবেন, তোমার মত হাজার পাপিষ্ঠ শক্তিশালী বাদশাহর সম্মিলিত শক্তিও তাঁর কিছুই করতে পারবে না।

হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।