হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-১ম পর্ব
বিভিন্ন তাফসীরকারকদের মতে হযরত জারজীস (আঃ) সিরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং নবুয়ত প্রাপ্তির পর তিনি ফিলিস্তিনে আগমন করেন। তখন ফিলিস্তিনে দাদিয়ান নামক এক প্রবল প্রভাবশালী কাফির বাদশাহী করত। অনেকে বলেন যে, ফিলিস্তিনেই নয়, ফিলিস্তিনের নিকটবর্তী ‘মওছল’ নামক স্থানেও ঐ বাদশাহ রাজত্ব করত।
হযরত জারজীস (আঃ) এর সাথে দাদিয়ানের চরম শত্রুতা এবং সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। শক্তির গর্বে গর্বিত বাদশাহ হযরত জারজীস (আঃ) কে দুনিয়া হতে চিরতরে বিদায় করার জন্য এঁকে এঁকে এক হাজারবার হত্যার ষড়যন্ত্র করে। প্রতিবারই আল্লাহ্ পাক তাঁর প্রিয় নবীকে রক্ষা করে দাদিয়ানের কু-বাসনা ব্যর্থ করে দেন।
বাদশাহ দাদিয়ান ছিল একজন কট্টর মূর্তি পূজক। সে তাঁর দেবতার মূর্তি তৈরী করে স্বর্ণ, রৌপ্য, জওহার এবং বহু মূল্যবান মণিমুক্তার দ্বারা মূর্তিগুলোকে সজ্জিত করে নিজে তাতে সেজদা করত এবং প্রজাদের দ্বারাও সিজদা করাত। তাঁর ধারণা ছিল যে, মানুষের উন্নতি, অবনতি, কল্যাণ, অকল্যাণ সব কিছু মূর্তির খুশী ও না খুশীর উপর নির্ভরশীল। তাঁর প্রজাদের মধ্যে যদি কেউ মূর্তিকে সেজদা করতে রাজী না হত তাঁকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হত। হযরত জারজীস (আঃ) আল্লাহ্ পাকের নির্দেশ মোতাবেক বাদশাহ দাদিয়ান এবং তাঁর অনুসারীদের দেব মূর্তি পূজার অসারতা এবং নিরাকার আল্লাহ্ পাকই একমাত্র উপাস্য এ সত্য সনাতন চিরন্তন বাণী প্রচার করার উদ্দেশ্য তাঁদের নিকট উপস্থিত হয়ে বাদশাহ দাদিয়ানকে বললেন, হে বাদশাহ! তুমি জ্ঞানী ব্যক্তি, অথচ প্রকৃত উপাস্যের উপাসনা না করে যার কোন অনুভূতি নেই তাঁর উপাসনা করতেছ। তা বাস্তবিক বিস্ময়কর। যে নিজের কল্যাণ করতে অক্ষম। সে অন্যের কল্যাণ করবে কি করে? আমি আশা করি তুমি এ চিন্তা করে মূর্তি পূজা বন্ধ করে দিবে।
হযরত জারজীস (আঃ) এর কথা শুনে বাদশাহ দাদিয়ান বলল, আমার উপাস্য মানুষের কল্যাণ করতে পারে না। তবে কল্যাণ করতে পারে কি তোমার উপাস্য? তুমি তো বাস্তবেই আমার উপাস্যের ক্ষমতা আছে বলে সে আমকে বাদশাহ এবং এত ধন সম্পদের মালিক বানিয়েছেন। পক্ষান্তরে তোমার উপাস্য অক্ষম বলেই তোমার কোন সম্পদ নেই এবং তুমি অভাবগ্রস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছ। আমি তোমাকে পরামর্শ দিচ্ছি, তুমি যার পূজা করতেছ তাঁর পূজা ত্যাগ করে আমাদের উপাস্যের পূজা শুরু কর। দেখবে আমাদের মত তুমিও সম্পদশালী হবে।
হযরত জারজীস (আঃ) বললেন। দেখ বাদশাহ! দুনিয়ার জীবন এবং ধন সম্পদ ক্ষণস্থায়ী। পক্ষান্তরে পারলৌকিক জীবন এবং ধনসম্পদ সকলই দীর্ঘস্থায়ী। এর কোন শেষ নাই। বরং একান্ত চিরস্থায়ী। পারলৌকিক খুশী অর্জন করতে হলে পার্থিব সুখ বর্জন করতে হয়। নানারুপ দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে হয়। আমি তাতেও খুশী। কেননা অনন্তকালীন সুখ ও খুশীর মোকাবেলায় ইহলৌকিক সুখ ও শান্তি একেবারেই নগন্য।