হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-শেষ পর্ব
হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত জারজীস (আঃ) বললেন, গিয়ে আমার কথা বলে দেখ না। অবশ্যই তারা চলে আসবে।
হযরত জারজীস (আঃ) এর কথা সত্যিই তাদেরকে বলা হল। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ঐ কথা বলা মাত্রই মূর্তিগুলো নড়ে উঠল। প্রধান মূর্তিটির নাম ছিল নাকলুন। সে আগে আগে চলতে লাগল। আর অন্যান্য মূর্তিগুলো তার পিছনে পিছনে চলে হযরত জারজীস (আঃ) এর নিকট এসে উপস্থিত হল এবং সব মূর্তিগুলো তাঁকে সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করল।
হযরত জারজীস (আঃ) প্রধান মূর্তিটিকে জিজ্জেস করলেন, আমি কে তা কি তোমরা বলতে পার?
মূর্তিটি জবাব দিল, আপনি আল্লাহ্ পাকের নবী। হযরত জারজীস (আঃ) বলেন, আল্লাহ্ পাকের প্রকৃত পরিচয় বলতো?
মূর্তিটি উত্তর করল, তিনি একক, অদ্বিতীয় এবং নিরাকার।
অতঃপর হযরত জারজীস (আঃ) মূর্তিগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করল এবং একসাথে তারা সকলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
এ সময় বাদশাহর স্ত্রী সমবেত লোকগণকে সম্বোধন করে বলল, তোমরা সকলে অবিলম্বে হযরত জারজীস (আঃ) এর আল্লাহ্ পাকের প্রতি ঈমান এনে নিজেদের কৃত পাপের জন্য তাঁর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নতুবা এ মূতিগুলোর মত তোমরাও ধ্বংস প্রাপ্ত হবে।
হযরত জারজীস (আঃ) এর নিকট মূর্তিগুলোর এরূপ অবনতি স্বীকার এবং তাঁকে সম্মান প্রদর্শন বিশেষতঃ খোদ তাঁর স্ত্রী ইসলাম গ্রহণ প্রভৃতি কারণে বাদশাহর মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বাদশাহ তাঁর স্ত্রীকে বলল, দীর্ঘদিন যাবত আমরা জারজীসের কত রকমের কেরামত, মায়া ও ছলনা দেখেও তাঁর কথায় বিশ্বাস আনতে পারিনি। অথচ তুমি তাঁর মাত্র একদিনের ভেল্কিবাজিতেই স্বধর্ম বিসর্জন দিলে?
বাদশাহর স্ত্রী বলল, তোমার অদৃষ্ট খারাপ বলেই হয়ত নিরাকার আল্লাহ্র প্রতি তুমি ঈমান আনতে পারলে না। কিন্তু ভাগ্যে কল্যাণ নিহিত আছে বলেই আমার দ্বারা সত্য ও খাঁটি আল্লাহ্ পাকের প্রতি ঈমান গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে।
স্ত্রীর কথা শুনে বাদশাহ দাদিয়ান ক্রোধে জ্বলে উঠে তখনই রাণীকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করার নির্দেশ দিল। তাঁর নিষ্ঠুর আদেশ সঙ্গে সঙ্গে পালিত হল। বাদশাহর স্ত্রী আল্লাহ্ পাকের নাম উচ্চারণ করতে করতে শহীদ হয়ে গেলেন। এ সময় হযরত জারজীস (আঃ) আসমানের দিকে দৃষ্টিপাত করে আল্লাহ্র দরবারে আরজ করলেন, হে আল্লাহ্! আপনি তো সব কিছু প্রত্যক্ষ করতেছেন। এখন আপনি আমাকে আপনার সন্নিধানে আশ্রয় দান করুন।
হযরত জারজীস (আঃ) এর দোয়া আল্লাহ্ পাকের দরবারে পৌছতে না পৌছতেই একটি ভীষণ আগুনের শিখা নেমে এসে কাফিরদেরকে গ্রাস করতে উদ্যত হল। কাফিরগণ ধারণা করল যে, হযরত জারজীস (আঃ) এর দোয়ার ফলেই তাঁদের প্রতি এ বিপদ অবতীর্ণ হচ্ছে। সুতরাং ক্রোধে তারা সে মুহুর্তেই তরবারীর আঘাতে তাঁর পবিত্র মস্তক দেহ হতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলল। আল্লাহ্ পাক এবার হযরত জারজীস (আঃ) কে শহীদ হিসাবে বরণ করে নিলেন।
পাপীষ্ট কাফিরগণও রক্ষা পেল না। তারা উক্ত আগুনের শিখায় বেষ্টিত হয়ে জ্বলে পুড়ে প্রাণ বিসর্জন দিল। কিন্তু ইতিপূর্বে যে প্রায় ত্রিশ হাজার লোক ঈমান এনেছিল আল্লাহ্র রহমতে তারা সকলে নিরাপদে বেঁচে রইল। তাঁদের প্রতি কোন বিপদ আসল না।