হযরত জাফর সাদেক (রঃ)-এর জ্ঞানগর্ভ বাণী ও কার্মসমূহ – শেষ পর্ব

৬।  একদিন এক লোক এসে জাফর সাদেক (রঃ) কে বলল, আমি আল্লাহকে দেখতে চাই।  আপনি তাঁর ব্যবস্থা করুন।  জাফর সাদেক (রঃ) বললেন, আপনি কি জানেন না যে, আল্লাহ দেখতে পাওয়া যাবে না।  আল্লাহ কি মূসা (আঃ)- কে বলেননি, তুমি আমাকে কিছুতেই দেখতে পাবে না।  লোকটি বলল, সে তো মূসা (আঃ)- এর কথা।  সে জামানা চলে গেছে।  এখন শেষ নবীর যুগ।  এখন তাঁর দ্বীন চলছে।  আমরা তারই উম্মত।  বিশেষ করে আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহর উম্মতগণের মধ্যে কোন এক ওলী বলতেন, আমার অন্তর আমার প্রভুকে দেখছে।  অন্য আরেক জন ওলী বলেন, তাঁকে না দেখে আমি ইবাদত করছি না।

লোকটির কথা গুলা শুনলেন জাফর সাদেক (রঃ) ।  তাঁর পর তাঁর ভক্তদের বললেন, এর হাত পা বেঁধে একে নদীতে ফেলে দাও।  আদেশ পালিত হল।  নদীতে পড়ে বেচারা কাকুতি মিনতি করতে লাগল, হে নবীর বংশধর! আমাকে সাহায্য করুন।  কিন্তু না।  তাঁকে কোন রকম সাহায্য করা হল না।  তাঁকে কেউ পানি থেকে তুলেও আনল না।   অবশেষে সে তলিয়ে যাচ্ছে গভীর পানির তলায়, বাঁচার কোন আশা নেই, তখন সে বলল, হে আল্লাহ! আমাকে বাঁচান।  জাফর সাদেক (রঃ) এবার তাঁর অনুগামীদের বললেন, যাও, লোকটাঁকে এবার তুলে আন। 

অতএব, তাঁর নির্দশে তাঁকে তুলে আনা হল।  একটু পরে সে যখন সুস্থ হলো, তখন জাফর সাদেক (রঃ)  বললেন, কী! আল্লাহর দেখা পেয়েছেন? সে বলল, হুজুর! যতক্ষন আমার চোখের সামনে যবনিকা ছিল, ততক্ষণ মানুষের সাহায্য চেয়েছি কিন্তু তা যখন দুর হল, তখন চেয়েছিল আল্লাহর সাহায্য।  জাফর সাদেক (রঃ) বললেন, আপনি যখন আমার সাহায্য চাইছিলেন, তখন আপনি ভুল ও অসত্য পথে ছিলেন।  আল্লাহ কি বলেছেন? তিনি বলেছেন, (আমি ছাড়া) কে আছে যে ব্যক্তির ডাকে সাড়া দিতে পারে।  অতএব যান, এবার আপনার যে অন্তদৃষ্টি লাভ হয়েছে তাতে আশা করা যায় আর কখনও ঐ ধরনের কথা বলবেন না। 

এই মহাসাধক মানুষের জন্য বহু মূল্যবান উপদেশ বা বাণী রেখে গেছেন।  এখানে তাঁর কিছু নমুনা দেওয়া হলঃ

১।  যে লোক বলে, যে আল্লাহ অমুক বস্তুর মধ্যে রয়েছেন বা ঐ বস্তু থেকেই তাঁর উদ্ভব ঘটেছে, সে কুফরী করল। 

২।  যে লোক আরাম ও নিরাপত্তায় কামনায় এবাদত করে, আর এবাদতের পর আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করে, সে আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায়।  যে লোক ইবাদত বন্দেগী অর্চনা করে নিজেকে আবেদ বলে ঘোষণা করে, সে পাপী।  আর যে লোক পাপ কাজ করে লজ্জা পায়, সে আল্লাহর অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত হয়। 

৩।  জাফর সাদেক (রঃ) কে কেউ প্রশ্ন করেন, দরিদ্র দরবেশ ও কৃতজ্ঞ ধনী ব্যক্তির মধ্যে কোন জন বেশী উত্তম।  তিনি উত্তর দেন, ধৈর্য্যশীল দরবেশের মহিমা বেশী কেননা, তিনি কেবলমাত্র ভাবনা ও হিসাব-নিকাশে বহু সময় ব্যয় করেন। 

৪।  যে লোক কোন অন্যায় কাজ করা আগে পাপের কথা ভেবে তওবা করে, সে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। 

৫।  আল্লাহর যিকিরের অর্থ হল, তাঁকে স্মরণ করতে গিয়ে অন্য যেকোন বস্তুকে একেবারে ভুলে যাওয়া। 

৬।  পাঁচ শ্রেনীর লোকের সঙ্গে কোন সম্পর্ক না রাখার কথা বলেছেন তিনি যেমন-

(ক) মিথ্যাবাদী – এদের সঙ্গে চলাফেরা তাঁর কথা বিশ্বাস করে মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

(খ) কৃপণ- নিজের সঞ্চয়-স্বার্থে সে মানুষকে ক্ষতি করবে।

(গ) দয়াহীন ব্যক্তি – বিপদের সময় সে কোন দোয়া করবেন না।  ফলে সর্বনাশ অনিবার্য।

(ঘ) কাপুরুষ- প্রয়োজনের সময় সে কোন কাজে আসবে না।  বিপদে ফেলে রেখে নিজের নিরাপত্তা খোঁজ করবে।

(ঙ) ফাসেক- এদের লোভ-লালসা অন্তহীন।  নিজের স্বার্থে কাউকে খুন করতে এরা পিছু পা হয় না।

জাফর সাদেক (রঃ) বলেন, জান্নাত ও জাহান্নামের বাঞ্জনা রয়েছে পার্থিব জিবনেই  মানুষের সুখ শান্তি জান্নাতের রুপ।  আর দুঃখ-কষ্ট যন্ত্রণাই হল জাহান্নামের প্রতিক।

জান্নাত যেমন চিরশান্তির স্থান, জাহান্নাম তেমনি জন্ত্রনার।

যিনি তাঁর সর্বত্র আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেন একমাত্র তিনিই জান্নাতের অধিকারী।  আর যে প্রবৃত্তি বা নফসের ক্রীড়নক, জাহান্নামই চিরস্থায়ী আবাস। 

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।