হযরত জাফর সাদেক (রঃ)-এর জ্ঞানগর্ভ বাণী ও কার্মসমূহ – পর্ব ১
১। একবার হযরত জাফর (রঃ) বেশ দামী পোশাক পরে আছেন। তা দেখে এক লোক প্রতিবাদের সুরে বলেন, হুজুর, আপনি নবী বংশের লোক। আপনার পক্ষে এত দামী পোশাক পরিধান করা শোভনীয় নয়। জাফর (রঃ) তার হাতখানি টেনে জামার ভিতরে ঢুকিয়ে দেখালেন, জামাটি ভেতরে পুরু আর খসখসে। বললেন, আমার একটি জামা আটপৌরে, মানুষের মাঝে চলাফেরার জন্য। আর অন্যটি হল আল্লাহর দরবারে নামায আদায়ের জন্য।
২। একবার দুই মহাজ্ঞানীর মিলন হল। জাফর (রঃ) ও ইমাম আবু হানিফা (রঃ)। জাফর (রঃ) আবু হানিফা- কে জিজ্ঞাসা করলেন, জ্ঞানী কাকে বলে? জ্ঞানীর সংজ্ঞা কি?
ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-এর উত্তর, জ্ঞানী সে ব্যক্তি, যিনি ভালো মন্দের বিচার জানেন। জাফর (রঃ) বলেন, একটি জন্তুও তা জানতে পারে। কেননা, যে তাঁকে আদর-যত্ন করে সে তার ক্ষতি করে না। অপর দিকে যে তার যত্ন-আত্মি করে না। বরং কষ্ট দেয়, সে তার ক্ষতি করে।
তাহলে এবার আপনি জ্ঞানীর সংজ্ঞা বলুন। জাফর (রঃ) তখন বললেন, জ্ঞানী সে ব্যক্তি, যিনি দু’টি ভালো কাজের মধ্যে বেশী ভালোটি আর দু’টি খারাপ কাজের মধ্যে কম খারাপটি গ্রহণ করেন।
৩। একদিন এক লোক ইমাম জাফর (রঃ)- কে বললেন, আপনার মধ্যে বাহ্য ও গুপ্ত উভয় শুণই আছে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, আপনি যেন নিজেকে কিছুটা বড় মনে করেন। সাধক জাফর (রঃ) বললেন, শুনুন, আমার যা কিছু নিজস্ব গৌরব বা গর্ব সব আমি মুছে ফেলেছি। তবে কিছু কিছু আল্লাহ প্রদত্ত গৌরব থাকে যা আপনার থেকে প্রতিভাত হয়। সেখানে মানুষের কোন হাত নেই। সুতরাং তাঁকে অহংকার বা অহমিকা বলা চলে না।
৪। একবার জাফর (রঃ)- কে ঘটনাচক্রে এক অপরিচিত লোকের সঙ্গে কয়েকদিন বাস করতে হয়। লোকটি একটি টাকার থলে ছিল। সেটি কোথায় যেন হারিয়ে যায়। কিন্তু সে সন্দেহ করল। জাফর (রঃ)- ই সেটি নিয়েছেন। তাই শেষ পর্যন্ত সে তার কাছেই টাকার থলের দাবী জানাল। জাফর সাদেক (রঃ) কোনরুপ প্রতিবাদ করলেন না। শুধু জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কত টাকা ছিল? সে বলল, দুই’ হাজার। তিনি লোকটিকে তাঁর বাড়ী নিয়ে গেলেন। আর দু’হাজার টাকাই দিয়ে দিলেন। কিন্তু এর মধ্যে সে তাঁর হারানো টাকার থলে পেয়ে গেল। তখন সে লজ্জিত, অনুতপ্ত হল। জাফর সাদেক (রঃ)- এর কাছে থেকে নেওয়া দু’হাজার টাকা ফেরত দেবার জন্য সে আবার তাঁর বাড়ীতে এল। কিন্তু জাফর সাদেক (রঃ) তা গ্রহণ করলেন না। বললেন, আমি যাকে যা কিছু দেই, তাঁকে একেবারেই দিয়ে দিই। আর ফেরত নিই না। কাজেই ও টাকা আর নেওয়া যাবে না। বেচারা তখন আর কী করবেন! অতগুলো টাকা নিজের কাছেই রাখতে হল। কিন্তু জাফর সাদেক (রঃ) কে চিন্তে লজ্জায় মরে যেতে লাগল সে।
৫। মহাতাপস চলেছেন একা একা। মুখে আল্লাহর নাম, যিকির। ঐ পথে আরও একটি দুঃখী মানুষ চলছিল। এক দরিদ্র পথিক। ইমাম জাফর সাদেক (রঃ)-এর মুখে আল্লাহর নাম শুনে সেও দেখাদেখি জোরেশোরে আল্লাহ বলতে বলতে তাঁর পেছনে পেছনে চলছিল। আল্লাহর নাম জপ করতেই জাফর সাদেক (রঃ) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, ওগো প্রভু! আমার জামা কাপড়ের যে কি অহাভ, আপনি তো নিজেই তা দেখছেন। আমাকে একটি জামা দান করুন। আল্লাহ তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলেন। সঙ্গে সঙ্গে একটি সুন্দর জামা তাঁর কাছে এসে গেল। আল্লাহ প্রতি অবেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি জামাটি গায়ে দিলেন। পেছনের দরিদ্র পথিক বললেন, আমাকেও তাঁর ভাগ দেওয়া উচিৎ। আপনি তো আল্লাহর দরবার থেকে পেয়ে গেলন। এখন আমাকে আপনার পক্ষ থেকে দিন। আপনার পুরাতন জামাটি আমাকে দান করুন। পথিকের কথা শুনে জাফর সাদেক (রঃ) তৎক্ষণাৎ তাঁর নিজের জামাটি খুলে দিয়ে দিলেন। আর কৃতজ্ঞতায় বিগলিত, কৃতার্থ মুসাফির তাঁকে প্রাণভোরে দোয়া করে চলে গেল।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া