হযরত জাফর জালদী (রঃ) – পর্ব ১
হযরত জাফর জালদী (রঃ) হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) এর সর্বশ্রেষ্ট সহচর। শরীয়ত ও তরীকতের এই এই বিশিষ্ট জ্ঞানী সাধক খুবই উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তাঁর কাছে তাসাওউফ সম্পর্কিত বিভিন্ন মনিষীর একশ ত্রিশখানা মূল্যবান গ্রন্থ ছিল। কিন্তু হাকিম তিরমিজি লিখিত কোন বই ছিল না। কারণ, তিনি বলেন, আমি তাঁকে কোন সুফীই মনে করি না। অবশ্য তিনি শায়খদের স্বীকৃত এবং নির্ভযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন।
তাঁর একজন শিষ্য ছিলেন হামযা আলাভী। তিনি প্রতিনিয়ত তাঁর মুর্শিদের সেবায় নিয়োজিত থাকতেন। আলাভীর ইচ্ছা, তিনি একবার বাড়ীতে আত্মীয়জনের কাছে যাবেন। মোরগ জবাই করে ছেলেমেয়েদের আহারাদি করাবেন। তিনি হযরত জাফর জালদী (রঃ)-এর কাছে অনুমতি চাইলে তাঁকে রাতটা থেকে যেতে বললেন, হামযা মনে করলেন, রাত এখানে থাকার অর্থ হল আগামী ভোর বেলায় ফজরের নামাজ ও তাঁরপরে চাশতের নামাজ পর্যন্ত এখানেই থেকে যাওয়া। তাঁর আগে যাওয়া যাবে না। আর ভোরে ছেলেমেয়েদের নিয়ে খাওয়াও হবে না। কাজেই তিনি আবারও পীরের অনুমতি চাইলেন। কিন্তু হযরত জাফর (রঃ)-ও বলতেন, আজ রাতটা এখানেই থেকে যাও। হামযা বললেন, না হুজুর। যেতেই হবে। পীর বললেন, তা হলে তোমার যা ইচ্ছা তাই কর।
হামযা বাড়ীই গেলেন। আর মোরগ জবাই করে রান্নাও চড়িয়ে দিলেন। পর দিন ভোরবেলায় মেয়েকে গোশতের হাড়িটি আনতে বললেন, হাড়ি নিয়ে আসার সময় মেয়ের পা গেল পিছলে। সে মাটিতে পড়ে গেল। আর গোশতও ছিটকে পড়ল। হামযা দুঃখ করে বললেন, যা হবার হয়েছে। গোশত তুলে আন। ধুয়ে খাওয়া যাবে। কিন্তু তা হল না। একটা কুকুর এসে তাতে মুখ দিল। বেশ কিছু খেয়েও ফেলল, হামযা আক্ষেপ করে বললেন, মোরগ তো আর খাওয়া হল না। মুর্শিদের মন থেকেও উঠে গেলাম বুঝি। তিনি তাৎক্ষণাৎ হযরত জাফর (রঃ) এর কাছে ফিরলেন। আর তাঁকে দেখেই তিনি বললেন, এক টুকরো গোশত খাবার লোভে যে পীরের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে, আল্লাহ তা কুকুরের ভাগ্যেই দিয়ে থাকেন। বলাবাহুল্য, অনুতপ্ত হৃদয়ে হামযা আলাভী তওবা করলেন।
হযরত জাফর জালদী (রঃ) এর একটি দামী আংটি ছিল। একদিন সেটি পড়ে গেল। এসে দেখলেন আংটি রয়েছে তাঁর একখানি বইয়ের মধ্যে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া