হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর বিবাহ-শেষ পর্ব
হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর বিবাহ-৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত ছোলায়মান (আঃ) তখন বিলকিসের সম্বন্ধে জিনদের পূর্বে অভিমত এবং বিবাহোত্তর কালের পরিমাণ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করলেন। অতপর বিলকিসের আবেদনের বিষয় পরিষদের নিকট পরামর্শ জিজ্ঞেস করলেন। পরিষদ বর্গ বললেন, বিলকিস ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে আপনার নিকট আত্নসমার্পণ করেছে। তবে দ্বিতীয়ত, যদি সে জীন সন্তান না হয়ে যদি মানব সন্তান হয়ে থাকে তবে তাকে শাদী করতে কোন অসুবিধা নেই। হযরত ছোলায়মান (আঃ) বললেন, রাণী বিলকিস জীন নয় মানুষ।
আর সে নিজে তওবা করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছে এবং তাঁর রাজ্যসহ আমার খেলাফতের অধিনতা মেনে নিয়েছে। তখন পরিষদবর্গ এক বাক্যে বিলকিসের সাথে হযরত ছোলায়মান (আঃ) বিবাহ সম্মত হয়ে গেলেন এবং তারা অতি দ্রুত বিবাহের আয়োজনে লেগে গেলেন। স্বাভিক ভাবে অল্প সময়ের ভিতরে তাদের বিবাহ কার্য সম্পন্ন হল। হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর স্ত্রী সংখ্যা ছিল তিনশত। এখন তিন শত একজন। আর তাঁর রাজমহলের বাঁদি সংখ্যা বাদি সংখ্যা ছিল সাতশত।
সর্ব মোট এক হাজার ছিল ঘরোয়া মহলের মেয়ে লোকের সংখ্যা। তিনি যখন অন্দর মহলে যেতেন তখন সকল স্ত্রীগণ সম্মুখে দাড়িয়ে থাকতেন এবং বাঁদিগণ তাঁর পিছনে তাড়িয়ে থাকত। রাণী বিলকিস কে তিনি আরো সম্মান দিলেন। রানী বিলকিস যখন তাঁর নিকট আসতেন তখন তিনি অন্যান্য স্ত্রী ও বাদিরা সুরে সরে যেত যাতে তারা দু’জনে অধিক আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। হযরত ছোলায়মান (আঃ) যে রাতে স্ত্রীদের নিকট যেতেন, সে রাতে এক এক করে হাজার স্ত্রীর সাথে মিলন করতেন।
কোন বৈষম্য বা পার্থক্য তাঁর নিকট ছিল না। এটাই ছিল ইসলামের শাশ্বত বিধান। জীন জাতির স্বভাব প্রকৃতি মানুষের ন্যায়। হযরত ছোলায়মান (আঃ) যুগে অধিকাংশ জীন ছিল তাঁর তাবেদার। বাকি কতক ছিল বেঈমান, কতক মুশরেক, আর কতক ছিল রাষ্ট্রদ্রোহী পালাতক। হযরত ছোলায়মান (আঃ) প্রায়ই অন্যায়কারী দের ধরে বিচার করতেন। পালাতক রাষ্ট্রদ্রোহী ধরার জন্য জিনদের গুপ্তচর ছিল। সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী ছিল।
তারা পালা বদল ক্রমে অপরাধীদের খুজে বের করে হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর দরবারে বন্দি করে নিয়ে আসত। একদা রাণী বিলকিসের অনুরোধে হযরত ছোলায়মান (আঃ) তাঁকে নিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করে সমুদ্র যাত্রা করলেন। বাতাস তাদের সিংহাসন বহু দেশ সফর করে এক গভীর ও দিগন্তহীন সমুদ্রের উপর স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকল। রাণী বিলকিস প্রাণ ভোরে সমুদ্র দৃশ্য অবলোকন করলেন। অতপর বাতাস তাদের সিংহাসন এক বিশাল দ্বিপে নিয়ে আসল।
সেখানে তারা অবতরণ করলেন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দযমণ্ডিত গাছপালা, নহর, ঝর্ণা ও পর্বতমালা দেখেলেন। হযরত ছোলায়মান (আঃ) ও রানী বিলকিস সেখানে পৌঁছানোর পরে জীনেরা কয়েক জাহার রাষ্ট্রদ্রোহী পালাতক জীনকে আটক করে হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর সম্মুখে হাজির করল। হযরত ছোলায়মান (আঃ) তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের সিধান্ত গ্রহন করেন। তখন রাণী বিলকিস তাদের জীবন ভিক্ষার জন্য আবেদন করেন। হযরত ছোলায়মান (আঃ) তখন বললেন, এরা দীর্ঘ দিন যাবত আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে।
এদের ক্ষমা নেই। তবে তুমি যদি তোমার দায়িত্বে এদেরকে অনুগত মুসলমান করে দেখাশুনা করতে পার তাহলে এদের জীবন ভিক্ষা দিতে পারি। রাণী বিলকিস তখন জীনের নিকট অঙ্গীকার নিয়ে তাদের কে মুসলমান করে নিজ তত্বাবধানে নিয়ে নিলেন। এ জীনেরা সারা জীবন রাণী বিলকিসের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকে। হযরত ছোলায়মান (আঃ) সেখান থেকে রানী বিলকিসের রাজ্য সাবা গেলেন। সেখানে দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন এবং তাঁর রাজ্যের সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখেন।
সর্বশেষে সেখানের অধিবাসীদের ইসলামের তালিম দেন এবং মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। এ ছাড়া সেখানের প্রসাশন বিভাগের পরামর্শ দেন। জবুর কিতাব অনুসারে দশ পরিচালনার লক্ষ্যে অতি শিঘ্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে নির্দেশ দেন। এ ছাড়া মানুষকে পরিশ্রমী ও আর্দশবান করে গড়ে তোমার উদ্দেশ্যে দেশ ব্যাপী কিছু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া আরো প্রয়োজনীয়ও বহু বিষয়ে তিনি দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।