হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর নবুয়াতী পরীক্ষা-শেষ পর্ব
হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর নবুয়াতী পরীক্ষা-পর্ব ৭
হযরত ছোলায়মান (আঃ) এ জেলে পাড়াকে তাঁর দ্বিতীয় রাজধানী বলে ঘোষণা দিলেন এবং অনতি বিলম্বে এখানে একটি শহর গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়ে কতিপয় জীন কর্মকর্তাকে সেখানে মোতায়েন করে নিজে রাজধানিতে ফিরে যাবার প্রস্তুতি নিলেন। তিনি ধীবর কন্যাকে বললেন, তুমি একজন অদ্বিতীয় হিতাকাঙ্ক্ষী এবং অন্যতম সহধর্মিনী। তুমি আমার সিংহাসনে আমার পাশে এসে বস। তোমার যারা আত্নীয়-স্বজন আছে সকলকে আমার সিংহাসনে এসে আসন গ্রহন করতে বল। সকলকে নিয়ে আমরা রাজধানীতে চলে যাব। শাহান শাহের আদেশ অনুসারে জেলে পাড়ার মানুষদেরকে সিংহাসনে নিয়ে আসা হল। অতপর শাহান শাহ বাতাসকে হুকুমদিলেন সিংহাসন নিয়ে রাজধানীতে চল।
বাতাস সিংহাসন নিয়ে শুন্যে উঠে গেল এবং ধীরে ধীরে পথ অতিক্রম করতে আরম্ভ করল। কিছু অল্প সময়ের মধ্যে হযরত ছোলায়মান (আঃ) সিংহাসন নিয়ে রাজধানীতে ফিরে এলেন। রাজধানীর সমস্ত মানব, দানব, দেও, দৌত্য ও পশু-পক্ষী শাহান শাহকে অবনত মস্তকে ছালাম জানাল। দীর্ঘদিন তাঁর অনুপস্থিতির বিষাদে অনেকে কেঁদে কেঁদে হয়রান হয়ে গেল। হযরত ছোলায়মান (আঃ) রাজধানীতে ফিরে প্রথমে শকরার প্রবর্তিত শরীয়ত বিরোধী আইনের বিলুপ্তি ঘোষণা করলেন। অতপর নিজ জীবনের উপর আল্লাহর পরীক্ষার বিষয়টি খুলে বললেন, পরে অত্যাচারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিচার করলেন। তাদের কাউকে নির্বাসন দিলেন, কাউকে শাস্তি দিলেন এবং কাউকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন। ছাইদুন শহরের বাদশাহ কন্যা যাকে হযরত ছোলায়মান (আঃ) অমুসলিম অবস্থায় বিবাহ করে এনেছিলন।
সে কন্যাকে হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর নিরুদ্দেশের পরে প্রকাশ্যে পিতৃমূর্তি পূজা করা আরম্ভ করে। তাই তাঁর বিবরণ জেনে হযরত ছোলায়মান (আঃ) তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। শকরা দৈত্যের আংটি চুরি, সিংহাসন দখল ও শরীয়ত বিরোধী আইন প্রবর্তনের অপরাধে যাঁতাকলে পিষে তাকে হত্যা করার আদেশ দেন। শকরা দৌত্যর যারা হুকুম বরদার ছিল, যারা মুসলমানদের শাস্তি দিয়েছে, চাকরিচ্যুত করেছে ও উলঙ্গ নাচ- গানের আসর জমিয়েছে তাদের সকলকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন। হযরত ছোলায়মান (আঃ) ছাইদুন শহর জয় করার পর সেখান থেকে যে সব গনিমাতের মালপত্র এসে ছিলেন, তাঁর মধ্যে কিছু যাদু বিদ্যার বই- পুস্তুক ছিল। শকরা দৌত্য সেই বই থেকে কিছু যাদু বিদ্যা অর্জন করে নিযের চেহারা পরিবর্তন করেছিল। যা আর অন্য কারো পক্ষে সম্বব ছিল না। সে যাদুবিদ্যার বইগুলো হযরত ছোলায়মান (আঃ) তখন জালিয়ে দিলেন। বিচ্ছিন্ন দু একটি পাতা এদিক-সেদিক পড়েছিল। যা দ্বারা পরবর্তী সময়ে মানুষ কিছু যাদুবিদ্যা শিক্ষার সুযোগ লাভ করেছিল। যদি ঐ সময় তন্নতন্ন করে খুজে সমুদয় পৃষ্ঠা নষ্ট করে দেওয়া হত তাহলে পৃথিবী থেকে যাদুবিদ্যা চিরদিনের জন্য মুচ্ছে যেত। হযরত ছোলায়মান (আঃ)রাজধানীতে ফিরে এসে খুব আনন্দিত হয়েছেন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভের সুসংবাদ পেয়ে। তাই তিনি পূর্বের ন্যায় কঠোরভাবে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিয়ে রাজ্য পরিচালনা করতে আরম্ভ করলেন।